স্রেফ ঘুমিয়েই জিতে নিলেন লক্ষ লক্ষ টাকা। আবাক লাগলেও, এমনই কাণ্ড ঘটিয়েছে হুগলির শ্রীরামপুরের ত্রিপর্না চক্রবর্তী। ঘুমিয়েই জিতে নিয়েছেন ৫ লক্ষ টাকা। সম্প্রতি একটি সংস্থা আয়োজিত প্রতিযোগিতায় সেরা ‘ঘুমকাতুরের’ পুরস্কার জিতে নেন বাংলার মেয়ে ত্রিপর্না।
ঘুমাতে ভালোবাসে কলকাতা! ছুটির সকাল মানেই দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা। ঘুম নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা আলাদাই অনুভূতি কাজ করে। কেউ ট্রেনে যেতে যেতে ঘুমান আবার কেউ স্রেফ ঘুমের জন্য মুড়ি মুড়কির মত ঘুমের বড়ি খান। তবে ঘুমিয়ে যে লক্ষ লক্ষ টাকা জেতা যায় তা প্রমাণ করল শ্রীরামপুরের ত্রিপর্না চক্রবর্তী। ছোট থেকেই ঘুম তার প্রিয়। ঘুমই তার প্রিয় বন্ধু। ঘুম নিয়ে বাবা মা’র কাছে ছোট থেকেই বকুনিও কম খেতে হয়নি। এমনই হয়েছে ট্রেনে ঘুমিয়েই দিল্লি পৌঁছে গেছেন ত্রিপর্ণা। আবার কখনও পরীক্ষা চলাকালীনও ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেই ঘুম থেকে যে জিতে নেবেন লক্ষ লক্ষ টাকা তা তিনি কোনদিন ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি।
এক ম্যাট্রেস সংস্থার তরফে আয়োজন করা হয়েছিল একটি ঘুমের প্রতিযোগিতার। এমবিএ করা-কালীন সেই প্রতিযোগিতায় নাম দেন তিনি। ত্রিপর্ণার কথায় 'এমন একটি প্রতিযোগিতার কথা যখন জানতে পারি তখন কিছু না ভেবেই নাম দিয়েছিলাম। ঘুমটাকে শুধু ভালবেসেছিলাম কিন্তু সেই ঘুমই যে সেরার সেরার মুকুট এনে দেবে তা আমি ভাবতেই পারিনি'।
ছিল একাধিক রাউণ্ড। ঘুমকে কে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন সেটা দেখাই ছিল সংস্থার মূল উদ্দেশ্য। সাড়ে পাঁচ লাখ আবেদনপত্র জমা পড়েছিল। সেখান থেকে ১৫ জনকে বেছে নেওয়া হয়। তাঁদের ১০০ দিন ৯ ঘণ্টা করে ঘুমোতে বলা হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল একটি ম্যাট্রেস ও স্লিপ ট্র্যাকার। সেখান থেকে ফাইনালের জন্য চারজনকে বেছে নেওয়া হয়। আর সেই চারজনের মধ্যেই ছিলেন ত্রিপর্ণা।
আরও পড়ুন: < নন-ফিকশন শোতে ইন্দ্রাণী হালদার! অভিনেত্রী ফিরছেন টেলিপর্দায়? >
মজার বিষয় হল এই প্রতিযোগিতার জন্য কোন বাড়তি প্রস্তুতি নিতে হয়নি ত্রিপর্ণাকে। কারণ ছোট থেকেই ঘুম তার বড্ড প্রিয়। ত্রিপর্ণা বলেন, “ বাকী প্রতিযোগীদের থেকে আমার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জটা একটু আলাদা ছিল। একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করার সুবাদে আমাকে প্রায় দিন নাইট শিফট করতে হয়। সকালে এসে ঘুমতাম। রাতে ঘুমানো আর সকালে ঘুমানোর মধ্যে কিছু তো ফারাক থাকবেই। তবে আমি মনে করি প্রতিটা মানুষের ক্ষেত্রেই ঘুম বিশেষ ভাবে প্রয়োজন। ঘুম ভাল হলে পরের দিন আপনার শরীর এবং মন দুটোই একেবারে চাঙ্গা থাকবে”। প্রতিযোগিতা থেকে ত্রিপর্ণা বুঝতে পেরেছেন যে ঘুমানোটা যে একটা চাকরির মতো। তিনি বলেন, “ঘুম যাতে ভালো হয় সেটা নিশ্চিত করাও আমাদের দায়িত্ব”। এই সচেতনতাটা সবার মধ্যে কিছুটা হলেও ছড়াতে পেরেছেন তিনি।
ত্রিপর্ণার আরও বলেন, “আমি গর্বিত। কারণ মুম্বইয়ের বাসিন্দারা যখন বলে তাঁরা রাতে ঘুমোন না, চেন্নাইয়ের বাসিন্দারা বলেন তাঁরা নাকি একমাত্র মৃত্যুতেই ঘুমোন তখন বাঙালির ঘুম নিয়ে দুর্নাম রয়েছে। কিন্তু, এই ঘুম দিয়েই আজ বাংলাকে গর্বিত করতে পেরেছি”। তিনি বলেন, যেখানে ঘুম নিয়ে বাঙালিকে অনেক খোঁটা শুনতে হয় সেখানে স্রেফ ঘুমিয়েই আমি প্রমাণ করেছি বাঙালিই পারে যে কোন কাজেই সেরার সেরা হতে”।
যদিও পুরস্কারের সম্পূর্ণ টাকা এখনও হাতে পাননি ত্রিপর্ণা। তবুও সেরে ফেলেছেন পুরস্কারের টাকায় তার আগামীর প্ল্যানিং। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে আগামী শীতে ফুটপাতবাসী যাতে একটু ভাল করে ঘুমাতে পারেন তাদের জন্য কিছু কম্বল, শীতের পোশাক নিজের হাতে তুলে দেবেন তিনি। সেই সঙ্গে রয়েছে বাবা-মাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানিংও।
'ঘুমিয়ে থাকলে যে ভাগ্য ঘুমিয়ে থাকে' এই তত্ত্বে একেবারেই বিশ্বাসী নয় ত্রিপর্ণা। গর্বের সঙ্গে তিনি বলেন, ঘুমিয়েও যে ভাল কিছু করা যায়, ঘুমিয়েও যে সেরা হওয়া যায় সেটা আমি প্রমাণ করেছি"। পাশাপাশি ঘুমকে কোনভাবেই খাটো করে না দেখারও বার্তা দিয়েছেন ‘ঘুমকাতুরে’ ত্রিপর্ণা।