গত দুবছর ধরে বিশ্বকে কার্যত নাজেহাল করেছে করোনাভাইরাস। করোনা গ্রাফ দেশে কিছুটা নিম্নমুখী হতেই নতুন করে আতঙ্ক গ্রাস করেছে। খোঁজ মিলেছে করোনার নতুন প্রজাতি Omicron-এর। উৎসস্থল দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ চরমে তুলেছে কোভিডের নয়া ভ্যারিয়েন্ট। ১২ থেকে একলাফে ৩০টি দেশ এখন Omicron আতঙ্কে ত্রস্ত।
করোনার নয়া এই ধরনকে ‘উদ্বেগজনক’-এর তালিকায় রেখেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO। দক্ষিণ আফ্রিকার তরফ থেকেই করোনার নতুন প্রজাতি Omicron-এর ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে জানায় সে দেশের বিজ্ঞানীরা। ইতিমধ্যেই সেদেশে বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হয়েছেন করোনার এই নয়া প্রজাতিতে। করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকেও অত্যন্ত সংক্রামক বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের হানাতেই বিশ্বের একের পর এক দেশে সংক্রমণের বিদ্যুৎ গতি তৈরি হয়েছিল। কাতারে-কাতারে মানুষ করোনার ডেল্টা ভাইরাসের হানায় কাবু হয়েছিলেন। ভারতেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে তছনছ-দশায় দায়ী ছিল ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এক কথায় ডেল্টা হানায় মৃত্যু-মিছিল দেখেছে গোটা বিশ্ব। এবার নতুন করে Omicron আতঙ্কে ত্রস্ত সারা বিশ্ব। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রায় ১১০ জনের শরীরে মিলেছে নয়া এই প্রজাতির হদিশ।
অবশেষে নয়া এই প্রজাতি থাবা বসাল ভারতেও। করোনা ভাইরাসের নয়া স্ট্রেন আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে কর্ণাটকে। ২ ব্যক্তির শরীরে করোনার নমুনা পরীক্ষার ফলাফল জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের পর জানা গেল, তাঁদের দেহে থাবা বসিয়েছে Omicron। এঁদের একজনের বয়স ৬৬ বছর, অপরজন ৪৬ বছরের ব্যক্তি। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে সাংবাদিক বৈঠক করে এই খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশবাসীকে সতর্কও করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল।
আক্রান্তদের মধ্যে এক জন পুরুষ এবং এক জন মহিলা। তাঁদের বয়স যথাক্রমে ৬৬ এবং ৪৬ বলে জানিয়েছে মন্ত্রক। আক্রান্তদের ‘কনট্যাক্ট ট্রেসিং’-ও করা হয়েছে বলে মন্ত্রক সূত্রে খবর। কোভিডের এই নতুন রূপকে নিয়ে ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়েই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ভারত-সহ একাধিক দেশ আন্তর্জাতিক বিমানে আগত যাত্রীদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করেছে।
আরও পড়ুন: আতঙ্ক বাড়ল, ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশগুলি থেকে বিমানবন্দরে নামা ১২ জনের ৮ জনই করোনা পজিটিভ
ওমিক্রন নিয়ে আগেই সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। এই স্ট্রেনটি কত ভয়াবহ, তা নিয়ে এখনও বিশেষভাবে জানা যায়নি। তবে এটি খুব বেশি ভয়াবহ নয় বলেই মত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার। তবে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১২টি দেশকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, এবার ৩০টি দেশে থাবা বসিয়েছে করোনার এই নয়া প্রজাতি।
এদিকে ভারতে Omicron-র হদিশ মিলতেই আবারও নতুন করে আতঙ্ক মাথা চাড়া দিয়েছে। Omicron নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা?
অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স-এর রাজ্য সম্পাদক ডাঃ মানস গুমটা জানিয়েছেন, “একদম নতুন, করোনার এই নয়া প্রজাতি। ইতিমধ্যেই মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে একাধিক দেশে এই প্রজাতি থাবা বসিয়েছে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে কতটা শক্তিশালী এই নয়া প্রজাতি, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি দেশে ১০০ শতাংশ প্রস্তুতি সেরে ফেলা হয়েছে। আমাদের দেশও আজ নিরাপদ নয়। ইতিমধ্যেই ২ জনের শরীরে মিলেছে এই মারণ ভাইরাসের নয়া স্ট্রেন। সুতরাং বিপদ যে উঁকি মারছে সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই, আমাদের আরও সতর্ক থাকাতে হবে। হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি, পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখা জরুরি। সবশেষে তিনি দাবি করেছেন, আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা সামনে আনতে হবে”। তাঁর কথায় দীর্ঘ দুবছরের লড়াইয়ে ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে সকল স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীরা আজ বড়ই ক্লান্ত, সেক্ষেত্রে নতুন প্রজাতি নতুন করে বিপদ ডেকে আনলে তা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। এছাড়াও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামো নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।
আরও পড়ুন: উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ওমিক্রন, কেন্দ্রের সতর্কবার্তায় বিশেষ নির্দেশিকা রাজ্যের
অপর দিকে প্রখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইন্দ্রনীল চৌধুরী জানান, “বাচ্চাদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর আমাদের সকলেরই জানা। যেহেতু শিশুদের টিকাকরণের ব্যবস্থা এখনও চালু হয়নি। তাই নয়া এই প্রজাতি শিশুদের ক্ষেত্রে বিপদ ডেকে আনতে পারে। পরিসংখ্যান অনুসারে এই নয়া প্রজাতিতে কম বয়সীদের আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তাই আমাদের আরও বেশি সচেতন থাকতে হবে। শিশুদের ভ্যাকসিনের বিষয়ে এবার ভাবার সময় এসেছে”।
অন্যদিকে চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুঁইয়ের কথায়, “যেকোনও ভাইরাস এভাবে তার প্রকৃতি বদল করে। করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে এর আগেও আমরা একাধিক নয়া প্রজাতি এর আগে দেখেছি। এবার নতুন এই প্রজাতি ওমিক্রন। টিকা নেওয়ার পর আত্মতুষ্টিতে না ভুগে, আমাদের আগের মতোই সতর্ক থাকতে হবে। আজ আমরা যে অবস্থায় রয়েছি, মুহূর্তেই আমাদের সামান্য ভুলে সব কিছু এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। সরকার এবং সেই সঙ্গে সাধারণ জনগণকেও অনেক বেশি সচেতন হতে হবে”।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন