Advertisment

'মেলানো যায় না, আমূল পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে এনআরএসে'

"কদিন আগেও দরকারে কর্মীদের ডাকতে গিয়ে গলা শুকিয়ে যেত, আজ মেঘ না চাইতেই জল। এরকম পরিস্থিতি আগামী দিনেও বজায় থাকলে আমরা খুব উপকৃত হব"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বহির্বিভাগের (ওপিডি) টিকিট কাউন্টারের সামনে রোগী-পরিজনদের মাঝারি দৈর্ঘের লাইন। হাসপাতাল চত্বর রীতিমতো ঝকঝক করছে। স্টেথো গলায় অ্যাপ্রন পরা ডাক্তাররা যাতায়াত করছেন এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে। প্রতিবাদী ব্যানারের একটা ছেঁড়া টুকরোও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হ্যাঁ, প্রতিবাদ আন্দোলনে বিগত এক সপ্তাহ ধরে সরগরম এনআরএসে এই ছবিই দেখা যাচ্ছে মঙ্গলবার। সোমবার বিকালে মুখ্যমন্ত্রী-জুনিয়র ডাক্তার বৈঠক মেটার কিছুক্ষণের মধ্যেই খুলে ফেলা হয়েছিল ধর্ণা মঞ্চের শমিয়ানা, ফ্যান ও লাইট। আর এদিন পুরোদমে শুরু হয়ে গেল কাজ।

Advertisment

publive-image ওষুধ নিতে লাইন রোগীর পরিবারের

মঙ্গলবার সকালে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শুনতে হল, " উই আর অন ডিউটি, কথা বলতে পারব না"। সুত্রের খবর, সাত সকালেই, সিনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে মিটিং সেরে কাজের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন গতকাল পর্যন্ত 'ধর্মঘটী' জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে এনআরএসে এদিন রোগীর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো কম। যে বর্হিবিভাগ টিকিট কাউন্টারে সাধারণত প্রায় তিনশো জনের লাইন থাকে, সেখানে মঙ্গলবার সকালে হাতেগোনা রোগী ও পরিজন। টিকিট কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীর পরিবারের সদস্য অঞ্জন বেড়া জানিয়েছেন, 'সকালে খবর দেখে, তবেই ব্যান্ডেল থেকে এসেছি। শুক্রবারও এসেছিলাম, কিন্তু গেট থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে'।

আরও পড়ুন: কাটল এনআরএস জট, সরকারের আশ্বাস নিয়ে আশাবাদী ডাক্তাররা

এদিন সকাল থেকেই এনআরএসে প্রত্যেক কাউন্টারে রাখা হয়েছে হাসপাতাল নিযুক্ত সাহায্যকারীদের। হাসপাতাল চত্বরে মোতায়েন করা হয়েছে একগুচ্ছ পুলিশকর্মী। চোখ চলে যাচ্ছে জরুরি বিভাগের নতুন করে রঙ করা কোলাপসিবল গেটের দিকে। উল্লেখ্য, গতকালের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কোলাপসিবল গেট বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু, এনআরএসের জরুরি বিভাগে আগে থেকেই এই গেট থাকায়, সোমবার রাতে তাতে কালো রঙের পোঁচ পড়েছে। নিরাপত্তার দিকে নজর দিয়ে, আজ সকাল থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে সেই গেট। গেটের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পুলিশ ও তিনজন হাসপাতাল নিযুক্ত সাহায্যকারী। এদিনে ঢুঁ মেরে বোঝা গেল, এখন সচরাচর কেউ চাইলেই জরুরি বিভাগে ঢুকতে পারবে না, কেবল রোগী এলে তবেই খুলবে কালো কোলাপসিবল দরজা। এদিন আরও দেখা গেল, মমতা ব্যানার্জির নির্দেশ অনুযায়ী জরুরি বিভাগে রোগীর সঙ্গে দু'জন পরিবার সদস্য ছাড়া কাউকেই ভিতরে ঢোকার অনুমতি দিচ্ছে না পুলিশ।

আরও পড়ুন: মমতা-জুনিয়র ডাক্তার বৈঠক ইতিবাচক, একনজরে এনআরএস কাণ্ড

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে এদিন রোগীর পরিবারের সদস্য পঞ্চবতী রায় (মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা) জানান, "দিন তেরো আগে এনআরএসে আমার স্বামীকে ভর্তি করেছি, তখন এখানকার স্টাফদের যা ব্যবহার ছিল, আর আজ সকালে যা ব্যবহার, তা মেলানোই যায় না। আমূল পরিবর্তন ঘটেছে হাসপাতালের ভিতরে। পরিষ্কার করা হচ্ছে, তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছেন ডাক্তার থেকে সমস্ত কর্মীরা। কদিন আগেও দরকারে কর্মীদের ডাকতে গিয়ে গলা শুকিয়ে যেত, আজ মেঘ না চাইতেই জল। এরকম পরিস্থিতি আগামী দিনেও বজায় থাকলে আমরা খুব উপকৃত হব"।

publive-image পঞ্চবতী রায় ও তার পরিবার পরিজন, এনআরএসে ভর্তি তাঁর স্বামী

আরওপড়ুন: “সম্মান আর নিরাপত্তা যে কোনও পেশার ন্যূনতম অধিকার”

রোগীর পরিজনদের প্রতিক্রিয়া তো জানা গেল, কিন্তু কী বলছেন আন্দোলনকারী ডাক্তাররা? বিগত সাত দিন ধরে দাবিতে অনড় থাকা ডাক্তারদের অন্যতম কল্যানী মেডিক্যাল কলেজের ডাঃ অনির্বাণ নাথ ফিরে গিয়েছেন তাঁর কর্মস্থলে। আন্দোলনে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছিলেন তিনি। ফেরার পথে ট্রেনে বসে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে তিনি বলেন, " পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। এটা একটা বড় আন্দোলন, আন্দোলনের কিছু ইতিবাচক দিক যেমন থাকে, তেমনই থাকে কিছু নেতিবাচক দিক। আমাদের কিছু দাবি ছিল যা তৎক্ষনাৎ মেটাতে হবে, সেই দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে, আর কিছু দাবি রয়েছে যা দীর্ঘমেয়াদী। মুখ্যমন্ত্রী সেই দাবি পূরণ করার আশ্বাস দিয়েছেন। এখন দেখা যাক, আগামীদিনে কী হয়। আমরা আশাবাদী"।

আরও পড়ুন: ডাক্তাররা মেরেছেন, সাম্প্রদায়িক রঙ দেওয়ার চেষ্টা চলছে, দোষীদের শাস্তি চাইছে মৃত সাইদের পরিবার

সব পক্ষের প্রতিক্রিয়ায় এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অচলাবস্থা কেটে গিয়ে এখন কর্ম সংস্কৃতির ফুরফুরে হাওয়া বইলেও দেওয়ালে এখনও টাঙানো রয়েছে একটি ব্যানার- 'ডাক্তারদের উপর হিংসার বিরুদ্ধে ধিক্কার'।

Mamata Banerjee NRS
Advertisment