দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর আপাতত কিছুক্ষণের জন্য ছাড়া পেলেন কলকাতার নগরপাল রাজীব কুমার। সারদা চিট ফান্ড কাণ্ডের তদন্তে এদিন প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা সিবিআই-এর জেরার মুখোমুখি হতে হলো তাঁকে। আগামিকাল অর্থাৎ রবিবারও ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে, খবর সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর।
Kolkata Police Commissioner Rajeev Kumar leaves from Central Bureau of Investigation (CBI) office in Shillong after being questioned by CBI in connection with Saradha chit fund scam. He will be questioned tomorrow as well. pic.twitter.com/VcJ9CF6J3b
— ANI (@ANI) February 9, 2019
শনিবার সকাল ১১.২০ নাগাদ শিলং-এ কলকাতার পুলিশ কমিশনারের বয়ান রেকর্ড করা শুরু করেন সিবিআই আধিকারিকরা। সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, এদিন রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন সেট প্রশ্ন তৈরি করে সিবিআই। কলকাতার নগরপালকে ৩৫-৪০টি প্রশ্ন করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। নগরপালের বয়ান রেকর্ড করার সময় উপস্থিত থেকেছেন ডিএসপি তথাগত বর্ধন এবং এসপি পিসি কল্যাণ। ডিএসপি বর্ধনের নেতৃত্বেই পশ্চিমবঙ্গে এই মামলার তদন্ত চালাচ্ছে সিবিআই।
সারদা কেলঙ্কারির তদন্তে রাজীবের মতো দুঁদে আইপিএস-কে জিজ্ঞাসাবাদ সিবিআই-এর কাছে রীতিমতো ‘বড় পরীক্ষা’। সে পরীক্ষায় পাশ করতে তাই চেষ্টার খামতি রাখেননি তদন্তকারীরা। প্রশ্নজালে নগরপালকে বিদ্ধ করে আসল তথ্য খোঁজার চেষ্টা করেছেন তদন্তকারীরা।
আরও পড়ুন: শিলংয়ে রাজীব কুমার, সিজিও-তে ‘করণবাবু’
Meghalaya: Kolkata Police Commissioner Rajeev Kumar arrives at the CBI office in Shillong. He will be questioned here today in connection with Saradha chit fund scam. pic.twitter.com/rT3naYZz6E
— ANI (@ANI) February 9, 2019
উল্লেখ্য, রাজীব কুমারের সঙ্গে শিলংয়ে গিয়েছেন তিন পুলিশ আধিকারিকও। ওই আধিকারিকদের মধ্যে রয়েছেন স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের ডিসি মুরলীধর শর্মা এবং অতিরিক্ত কমিশনার জাভেদ শামিম।
জানা গিয়েছে, সারদা তদন্তে রাজীব কুমারকে প্রশ্ন করার আগে রীতিমতো আঁটঘাট বেঁধেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। শুক্রবার সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে পাঠানো হয় ‘করণবাবু’কে। কে এই করণবাবু? সারদা কাণ্ডের প্রাক্তন তদন্তকারী অফিসার ফণীভূষণ করণ। এ মামলার আগাগোড়া যাঁর নখদর্পণে। সারদা কাণ্ডের সেই প্রাক্তন তদন্তকারী আধিকারিককেই এদিন সিজিও কমপ্লেক্সের সিবিআই দফতরে ডেকে পাঠান সিবিআই-এর বর্তমান আধিকারিকরা। কিন্তু হঠাৎ কেন ফণীভূষণ করণের ডাক পড়ল সিজিও-তে? সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, রাজীব কুমারকে এমন প্রশ্নবাণের সামনে ফেলতে চায় সিবিআই, যাতে ‘দিশেহারা অবস্থা’ হয় নগরপালের। সেই কঠিন প্রশ্নাবলী সাজাতেই করণবাবুর শরনাপন্ন হয়েছেন বর্তমান অফিসাররা।
আরও পড়ুন, শিলং-এ কাদের প্রশ্নের মুখে পড়বেন রাজীব কুমার?
কী কী প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে রাজীব কুমারকে?
সূত্রের খবর, কুণাল ঘোষের বয়ানের উপর ভিত্তি করে যেমন প্রশ্ন করে থাকতে পারে সিবিআই, তেমনই সারদার ভাইস প্রেসিডেন্ট সোমনাথ দত্তের বয়ানের উপরও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে কলকাতার সিপির দিকে প্রশ্ন তাক করতে পারেন সিবিআই আধিকারিকরা। আরও জানা যাচ্ছে, দীর্ঘ টালবাহানার পর রাজীব কুমারকে হাতের নাগালে পেয়েছে সিবিআই, তাই প্রশ্নজালে দুর্নীতি ফাঁস করতে মরিয়া তাঁরা।
আরও পড়ুন, রাজীব কাণ্ডে কলকাতা পুলিশের অন্দরে ঘুরছে বিশেষ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ! কী লেখা তাতে?
সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তের উদ্দেশ্যে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর নেতৃত্বে ছিলেন রাজীব কুমার। সিবিআইয়ের অভিযোগ, সিটের দায়িত্বে থাকার সময় সারদা মামলার তথ্যপ্রমাণ লোপাট করেছেন তিনি। বহুবার নগরপালকে সমন পাঠালেও তিনি সিবিআইয়ের ডাক উপেক্ষা করেছেন। গত রবিবার কলকাতায় সিপির সরকারি বাসভবনে ‘সিক্রেট অপারেশন’ চালাতে সটান পৌঁছে যায় সিবিআইয়ের একটি দল। এই ঘটনায় ধুন্ধুমার কাণ্ড বাঁধে, যার জেরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর কেন্দ্র অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করছে দাবি করে ধর্নায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আপাতত গ্রেফতারি থেকে রেহাই পেয়েছেন রাজীব কুমার। তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে এখনই গ্রেফতার করা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।