শুরু হয়ে গিয়েছে প্রাণের পুজো দুর্গাপুজো। আজ মহাষষ্ঠী। তামাম বাঙালি মেতে উঠেছে পুজোর আনন্দে। গত ২ বছর পুজোয় সেভাবে আনন্দ করে ওঠা হয়নি। অসুররূপে সামনে দাঁড়িয়েই সকলকে গৃহবন্দি থাকতে বাধ্য করেছিল করোনা অতিমারি। তার রেশ কিছুটা ফিকে হতেই উৎসবের আনন্দ চেটেপুটে উপভোগ করতে মরিয়া সকলেই। কিন্তু ওঁরা? কীভাবে পুজোর দিনগুলো কাটান? সমাজের মূল ধারা থেকে একেবারেই আলাদা তাঁরা। সমাজ আজও তাঁদের বাঁকা নজরেই দেখে। ওঁরা রূপান্তরকামী!
পুজোর এত চমক, আলোর রোশনাই, লক্ষ লক্ষ মানুষের মধ্যেও কোথাও যেন আজও সমাজের একটা বড় অংশের মানুষ ওঁদের নিয়ে হাসি-মজা-ঠাট্টা করেন। পুজোর আনন্দে নিজেদের এত দিন কোথাও আড়াল করেই রেখেছিলেন ওঁরা। কিন্তু এভাবে কতদিন! নিজেদের উদ্যোগেই শুরু করে দুর্গাপুজো। চলতি বছর পুজোয় পাঁচ বছরে পা দিল রূপান্তরকামীদের পুজো। সমাজের কুসংস্কার, বাঁকা নজরকে উপেক্ষা করে নিজেদের মত করেই পুজোর আনন্দ ভাগ করে নেন একে অপরের সঙ্গে। বাদ যায়না কিছুই। আড্ডা-মজা-খাওয়া দাওয়ায় পুজোর কটা দিন যেন ওঁদের কাছে এক আলাদাই তৃপ্তি।
দক্ষিণ কলকাতার মুকুন্দুপুরের কাছে গরিমা গৃহে এই বছর পঞ্চম বর্ষে পা দিয়েছে রূপান্তরকামীদের পুজো। এই পুজোতে মা দুর্গা পুজিত হন বৈষ্ণব মতে। অর্ধনারীশ্বর রূপে মাতৃ মূর্তির আরাধনায় মেতে ওঠেন ওঁরা। পুজোর আলপনা দেওয়া থেকে ভোগ রান্না, সবটাই নিজেদের হাতেই করেন। পুজো শেষ প্রতিমাকে বিসর্জন দেওয়াতে বিশ্বাসী নন ওঁরা। কেন? পরিবার, সমাজ সব কিছু থেকেই তো ব্রাত্য আমরা তাই বিষাদের যন্ত্রণাটা আমাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খায় জানালেন, পুজোর কর্ণধার রঞ্জিতা সিনহা।
আরও পড়ুন: < বিরাট ঘোষণা আম্বানির, আগামী বছর ডিসেম্বরের মধ্যেই সারা দেশে 5G চালু করবে Jio >
এই বছর পুজোতে এসেছে একেবারেই নতুন একটি অর্ধনারীশ্বর মূর্তি। পুরনো মূর্তি ঠাঁই পায় গরিমা গৃহেই। চারদিন নয়, ৯ দিন পুজোর আনন্দে সামিল হন, পথ শিশু থেকে অ্যাসিড আক্রান্ত সকলেই। কুমারী পুজো সাড়ম্বরে পালিত হয় পথ শিশুদের নিয়ে। সমাজের তথাকথিত মূল স্রোতের মানুষজনরাও পুজোতে ভিড় করেন। রঞ্জিতার কথায়, “এই কটা দিন আমরা আমাদের মত করে আনন্দটাকে সকলের সঙ্গেই ভাগ করে নিই”।
পুজোর কর্ণধার রঞ্জিতা সিনহা জানালেন, “এই অর্ধনারীশ্বরের মূর্তি আমরা যে মা দুর্গাকে দেখতে পাই সব মণ্ডপে তার থেকে একেবারেই আলাদা। ইন্দ্র, শিব আরও বাকি যেসব দেবতাদের থেকে মা দুর্গা শক্তি পেয়েছেন সেই হরপার্বতীর যে রূপ যে একই অঙ্গে বিরাজ করে সেই রূপেই আমাদের এই মূর্তির পুজো হয়”। তিনি আরও জানান, পুজো উপলক্ষে সুদূর বিদেশ থেকেও আমাদের সম্প্রদায়ের ২ জন ইতিমধ্যেই আমাদের পুজো উপলক্ষে এসেছেন। সকল নিয়ম নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেই আমাদের এই পুজো। আমাদের আন্দোলন, আমাদের প্রতি যাদের ভালবাসা রয়েছে সকলেই আমদের এই পুজোতে আসেন। হাসি-মজা-আনন্দ করে কেটে যায় আমাদের এই পুজো”।