Advertisment

হারিয়ে যেতে বসেছে এককালের ‘আভিজাত্য’, রাজপথে অস্তিত্ব রক্ষাই দায় ‘আইকনিক’ হলুদ ট্যাক্সির

ফুটবল, রসগোল্লা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মত শহরের হলুদ ট্যাক্সির 'আভিজাত্য' নেহাতই কম নয়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
nostalgia of kolkata, হলুদ ট্যাক্সি, yellow ambassador, অ্যাপক্যাব, ambassador car, অ্যাম্বাসেডর গাড়ি, yellow ambassador car, হলুদ অ্যাম্বাসেডর, yellow taxi, হলুদ গাড়ি, yellow taxi in kolkata, ওলা উবের, Ola uber, কলেজ স্ট্রিট, college street, করোনা, corona, corona news, Bangla Khabar, বাংলার খবর, Bangla News Live, বাংলার ব্রেকিং নিউজ, Breaking Bangla News,Bangali news, বাংলায় সর্বশেষ খবর, লেটেস্ট খবর, News in Bengali, Bengali News Today, বাংলা নিউজ, Bengali News, করোনা মহামারী, corona pandemic, Bangla Khabor, কোভিড-১৯, covid, News in Bangla, করোনা ২০২১, corona 2021, 24 Ghanta Bangla News, Bangla News, covid-19"

এক্সপ্রেস ফটো-শশী ঘোষ

শহরবাসীর সঙ্গে হলুদ ট্যাক্সির রয়েছে অন্য এক সখ্যতা। এটাই ছিল কলকাতার ট্যাক্সির আদিপুরুষ। দেখতে আহামরি কিছু না হলেও ভারতের এক সময়ের সরল সাদাসিধে এই গাড়ি ছিল আভিজাত্যের চিহ্ন। ধীরে ধীরে শহরের রাস্তায় কমতে চলেছে 'রাস্তার রাজা'র সংখ্যা। এই মুহূর্তে শহরের আইকনিক হলুদ ট্যাক্সির সংখ্যা ১০ হাজারের নীচে নেমে গিয়েছে। তার মধ্যে মাত্র সাতহাজারের কাছাকাছি রোজ শহরের রাস্তায় ছূটে বেড়ায়। কিন্তু ফুটবল, রসগোল্লা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের মত শহরের হলুদ ট্যাক্সির আভিজাত্য নেহাতই কম নয়। ২০২৫ সালের মধ্যেই এই সংখ্যা আরও প্রায় আড়াই হাজার কমে ৫ হাজারের নীচে চলে যাবে বলেই মনে করছেন ট্যাক্সি চালকরা।

Advertisment

বছর পাঁচেক আগে যখন অ্যাপ ক্যাবের মাতামাতি সেভাবে শুরুই হয়নি তখন শহরের রাস্তায় আইকনিক হলুদ ট্যাক্সির সংখ্যা ছিল ২২ হাজারের কিছু কম। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর দিকে ছুটে চলেছে তিলোত্তমার এককালের ‘আভিজাত্য’।  প্রাক-মহামারী সমীক্ষা অনুসারে ২০২০ সালে হলুদ ট্যাক্সির সংখ্যা ছিল ১৮ হাজারের কিছু কম। এর পর থেকেই বাণিজ্যিক যানবাহনগুলির সর্বাধিক ১৫ বছরের রাস্তায় নামার বিধান, লকডাউন সব মিলিয়ে রীতিমত অস্তিত্ব সংকটে শহরের চলেছে 'রাস্তার রাজা'। একজন প্রবীণ পরিবহন কর্মকর্তা বলেন, মহামারির পরবর্তী সময়ে শহরে অ্যাপ-ভিত্তিক ক্যাবের সংখ্যা প্রায় কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজারের আশেপাশে। কিন্তু সব থেকে খারাপ অবস্থা শহরের হলুদ ট্যাক্সির হাল।এর সংখ্যা প্রায় ৭,০০০-এ নেমে এসেছে এবং সাদা-নীল মিটারযুক্ত ক্যাবের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজারে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন: < নির্ধারিত সময়ের ৫ ঘণ্টা আগে উড়ে গেল বিমান, বিমানবন্দরেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে ৩৫ যাত্রী >

কলকাতা পরিচিত ফুটবল, রসগোল্লা, রবীন্দ্রনাথ ঠিক তেমনি হলুদ ট্যাক্সি তাদেরই মধ্যে একটা অন্যতম। হুগলি নদীর ধারে গড়ে ওঠা এক জনজীবন নাম কলকাতা। এই কলকাতার সঙ্গে হলুদ ট্যাক্সির সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। শহরবাসীর সঙ্গে হলুদ ট্যাক্সির রয়েছে অন্য এক সখ্যতা। দেখতে আহামরি কিছু না হলেও ভারতের এক সময়ের সরল সাদাসিধে এই গাড়ি ছিল আভিজাত্যের চিহ্ন। ২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে যায় ভারতের প্রথম তৈরি গাড়ির উৎপাদন। ২০১৭ তে হিন্দুস্তান মোটর্স ফরাসি গাড়ি কোম্পানি পিজ্যোঁর কাছে বিক্রি করে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। গত কয়েক বছরে অ্যাপক্যাবের চাহিদার সঙ্গে এমনিতেই পিছিয়ে পড়ছিল কলকাতার হলুদ ট্যাক্সি। কিন্তু গত বছর লকডাউনের পর থেকে শোচনীয় অবস্থা কলকাতার আইকনিক গাড়ির।

চরম সংকটে দিন কাটছে হলুদ ট্যাক্সি চালকদের। পেট চালানোয় দায় হয়ে গিয়েছে তাঁদের। কলকাতার হলুদ ট্যাক্সির এত খারাপ অবস্থা কখনও ছিল না। ১৯০৯ সালে এই শহরে প্রথম ট্যাক্সি আসে। বর্তমানে যেখানে এখন ফ্র্যাঙ্ক রস কোম্পানির ওষুধের দোকান রয়েছে চৌরঙ্গী রোডের সেখানেই ছিল ফরাসি শেভিজাঁ কোম্পানির অফিস। তারাই কলকাতার পথে প্রথম ট্যাক্সি চালু করে। তখন চৌরঙ্গী থেকে মিটারওয়ালা দেওয়া গাড়ি পৌঁছে যেত দমদম, ব্যারাকপুর, বজবজ। দুই সিলিন্ডারের ছোট্ট ‘ক্যারন’, গাড়িগুলোয় মাত্র দুজন যাত্রী বসার সুযোগ থাকত। টকটকে লাল রঙের এই গাড়ি প্রতি মাইলে আট আনা ছিল নিদিষ্ট ভাড়া। এটায় ছিল কলকাতার ট্যাক্সির পূর্বপুরুষ। এর কিছু বছর পরে ব্যবসায় আসে ইন্ডিয়ান মোটর ট্যাক্সি ক্যাব এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। যাত্রীরা ভালবেসে বলতো ‘A’ কোম্পানি। যেহেতু সব ট্যাক্সির নম্বর শুরু হত ‘A’ অক্ষর দিয়ে।

আরও পড়ুন: < ‘ঝাঁটা, হাতা, খুন্তি, বঁটি নিয়ে বেরোন’, ‘গা গরম করা’ হুঙ্কার লকেটের >

১৯৬২ সালে কলকাতার ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের এই অ্যাম্বাসাডর গাড়িকে ট্যাক্সিতে পরিণত করার প্রস্তাব পেশ করে। প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে সেই বছরেই কলকাতায় নামে এই আইকনিক গাড়ি। ট্যাক্সির হলুদ রং নিয়ে কারও যদি কৌতূহল হয় তবে বলে রাখা ভাল, হলুদ রং খুব সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। হলুদ ট্যাক্সি হয়ে ওঠে কলকাতার নস্টালজিয়া। হয়ত নস্টালজিয়া খুব তাড়াতাড়ি আমরা হারিয়ে ফেলব। কলকাতা এবং তার হলুদ ট্যাক্সির ইতিহাস লেখা থাকবে বইয়ের পাতায়।

বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের এক আধিকারিকের কথায়, পুরানো ক্যাবগুলি বাতিল করার বিপরীতে ক্যাব প্রতিস্থাপন সংখ্যা প্রায় শূন্য। তিনি বলেন, "একটি BS-VI ট্যাক্সির দাম এখন ৮ লক্ষ টাকার উপরে। তার ওপর পরিবহন খরচ লাগামছাড়া।  ভাড়া না বাড়ানোর ফলে অনেকেই লোকসানে গাড়ি চালাচ্ছেন, বিকল্প পেশার সন্ধান না পেয়ে। অনেকে আবার ব্যবহা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। ব্যাঙ্কগুলি ক্যাব কেনার জন্য ঋণ দেওয়া প্রায় বন্ধই করে দিয়েছে। সুতরাং, একজন চযদি পেশায় থাকতে চান তবে তার খুব বেশি বিকল্প নেই," ১৯০৮ সাল থেকে কলকাতায় ট্যাক্সি চালু হয়েছে। কিন্তু একের পর এক সমস্যা যেন পিছু ছাড়ছে না 'রাস্তার রাজা'র। অস্তিত্ব সংকটের পথে শহরের আইকনিক হলুদ ট্যাক্সি।  

kolkata Taxi
Advertisment