মোদী বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের তিন তিনটে বৈঠক হয়ে গিয়েছে। বিজেপি বধে জাতীয় স্তরে কংগ্রেস ও তৃণমূল খুব কাছাকাছি এসেছে। এদিকে রাজ্য কংগ্রেসের একাংশ তৃণমূলের সঙ্গে জোট বাধায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এর ফলে এরাজ্যে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তুরুন তুর্কি কংগ্রেস নেতা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন।
কৌস্তভ- দরকারের সময় কংগ্রেসের হাতে-পায়ে পড়ে যাওয়া আজকে নতুন কিছু করছে এমন নয়। তৃণমূল কংগ্রেসের পুরনো অভ্যাস। একটা জিনিস স্পষ্ট, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে মারাত্মক ধ্বস নেমেছে। তৃণমূলের প্রতি মানুষের একটা মোহভঙ্গ হচ্ছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে সরে যাচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে তাঁদের মনে হয়েছে কংগ্রেসকে আগলে ধরতে হবে। তাঁরা তো এতো ক্ষমতাশালী তাহলে কেন এত হাতে-পায়ে ধরতে হচ্ছে? যে কংগ্রেসকে পচা ডোবা বলে আখ্যা দিয়েছেন। রাহুল গান্ধীকে বসন্তের কোকিল বলেছেন। সদ্য সমাপ্ত কর্নাটক নির্বাচনের পর একবার অভিনন্দনটুকুও জানাননি। বিপদে পড়েছেন বুঝতে পেরেছেন, জোটে থেকে বাঁচতে চাইছে তৃণমূল।
প্রশ্ন-রাহুল গান্ধীর বাড়িতে ভোর বেলা অভিষেকের সঙ্গে বৈঠক। কেন?
কৌস্তভ- পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি, চুরি-জোচ্চুরি করেছেন। উনি ভাবছেন যে এগুলি আড়াল করার জন্য বিরোধী জোটে ঢুকে যাব। আর কিছু করলেই বলব বিজেপি আমাকে ধরতে আসছে। সুচারুভাবে এই পদক্ষেপটা গ্রহণ করছে। আমাদের দুর্ভাগ্য এই বিষয়টা অ্যাসার্ট না করে চোর-জোচ্চরদের আমাদের আস্তানায় আসকারা দিচ্ছি। সেই ক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য, চোরেরা যেন কোনও স্থান না পায়। কোনও আস্তানা না পায়। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সঙ্গে তঞ্চকতা করেছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে লুটেছে। তারা যেন বিরোধী জোটকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার না করতে পারে।
প্রশ্ন-কংগ্রেসই আগলে রাখছে, কোর কমিটিতে স্থান পাচ্ছে।
কৌস্তভ- কিছু কথা শুনতে খুবই খারাপ লাগে। যখন শুনতে হয় ইন্ডিয়া জোটের মুখ্যমন্ত্রীদের রাজ্যে সুশাসন চলছে। আমরা কোনওদিন বলতে পারব না পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বারা সুশাসন চলছে। এই সমস্ত কথা বলা মানে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস কর্মীদের ছোট করা।
প্রশ্ন-দেশের ৫ শহরে জনসভার কথা ঘোষণা করেছে ইন্ডিয়া জোট। রাজ্য কংগ্রেসের অন্তোষের জেরেই কি কলকাতা বাদ পড়েছে?
কৌস্তভ- সেটা তো খুব স্বাভাবিক। কলকাতায় জনসভা করতে গেলে এখানে বিক্ষোভ হবে। কেউ আটকাতে পারবে না। এখানকার সাধারণ কংগ্রেস কর্মীরা কি মেনে নেবে এখানে যদি তৃণমূলের সঙ্গে দল একসঙ্গে সভা করে? আমি তো মানবো না।
প্রশ্ন-জোটের যা পরিস্থিতি তাতে এখানেও সিট অ্যাডজাস্টমেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন কী হবে?
কৌস্তভ- এখনও অবধি দলের নেতৃত্বর ওপরে আশা-ভরসা রাখছি। আমি এখনও মনে করি, দলের সাধারণ কর্মীদের স্বার্থে আঘাত লাগবে এমন কিছু নেতৃত্ব করবে না। সেই জন্য নেতৃত্বের ওপরে আস্থা, ভরসা সবটাই রাখছি। দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরাও রাখছে। যদি এর অন্যত্র হয় তাহলে দলের কর্মী-সমর্থকদের জন্য ভয়াবহ বিষয় হবে। তারপর দেখা যাবে কি হবে।
প্রশ্ন-কংগ্রেসকে সঙ্গে না পেলে তৃণমূলের আসন বাড়বে না কমবে?
কৌস্তভ- আমি এটা বলতে পারব না। তবে আমি জানি তৃণমূলের সঙ্গে যদি সখ্যতা না থাকে তাহলে আমরা অনেক ভাল ফল করব।
প্রশ্ন-যদি একসঙ্গে লড়তেই হয়…
কৌস্তভ- সেটা তো খুব দুর্ভাগ্যের হবে। রাজনৈতিক ভাবে চূড়ান্ত দেউলিয়াপনার পরিচয় দিতে হবে। সেটা হলে রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীরা রাস্তায় মুখ দেখাতে পারবে না।
প্রশ্ন- কংগ্রেসের একটা অংশ বলছে কৌস্তভের জনপ্রিয়তার জন্য দলে থেকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলেছ। কি বলবেন?
কৌস্তভ- দেখুন আমি দলের স্বার্থে কথা বলছি। এখানে কোনও ভাববাচ্যে কথা না বলে স্পষ্ট ভাবে বলছি তৃণমূল আমাদের চোখে চোর ছিল, আছে, থাকবে। আমার এখানে নিজের কোনও সিটের ধান্দা নেই, করে-কম্মে খাওয়ার ধান্দা নেই। আমার কোনও স্বার্থ নেই। স্বার্থ একটাই পশ্চিমবঙ্গে যাঁরা ৪৬ বছর কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে লড়াই করছে সেই মানুষগুলোকে যোগ্য সম্মান জানাতে হবে।
প্রশ্ন-এই বাড়িতেই পুলিশ এসেছিল। নির্যাতনের অভিযোগ ছিল। তারপরেও কংগ্রেসে আপনাকে নিয়ে কথা উঠছে।
কৌস্তভ- একটা কথা আছে না- ঘরের শত্রুরা যখন আক্রমণ করে সেটা আরও বেদনাদায়ক। আজকে অনেকে বলছেন অনেক কথা, অধীরবাবুর বিরোধিতা করছি। যে সমস্ত মানুষজন এখন খুব অধীরবাবুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা দেখাতে চাইছেন তাঁদের দেখা উচিত যখন অধীরবাবুর প্রয়াত কন্যার সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন একজনকেও মাঠে ময়দানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমি বুক চিতিয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম। তার জন্য আমাকে হেনস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। আমি দেখছি দলের একটা অংশ আমি ও আমার পরিবারকে দাগিয়ে মনগড়া উল্টোপাল্টা যা পারছে বলছে। তাদেরকেই বলছি হেনস্থা আমি হয়েছি, আমার পরিবার হয়েছে। অনেকে আমার অবদান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, নেপাল মাহাত বলতে পারবেন ঝালদার পুরো এপিসোডটা। সেই লড়াইতে আমার কতটা অবদান ছিল। তপন কান্দুর সিবিআই মামলা, বগটুই মামলা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রথম পিআইএলটাই আমার করা।
প্রশ্ন-অধীর চৌধুরী, দীপা দাশমুন্সির ইন্ডিয়া জোট নিয়ে বলছেন, রাজ্য কংগ্রেসের বড় অংশ বিষয়টার ওপর নজর রাখছেন। কোনও মন্তব্য করছেন না।
কৌস্তভ- আমি নেতৃত্বকে বার বার অনুরোধ করেছি একটা লিখিত বিবৃতি জারি করে বিভ্রান্তি দূর করা হোক। মানুষকে স্পষ্ট ভাবে জানানো হোক পশ্চিমবঙ্গে দলের অবস্থান। আমরা তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা বা সখ্যতা কোনওটাই রাখব না। আমরা যাকে চোর বলছি তাদের নিয়ে ভোটে জিতে ক্ষমতা দখল করাটা সম্ভব নয়। বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস কর্মীরা যে আপত্তি দেখাচ্ছে তা নয়। ত্রিপুরা ও মেঘালয়েও আপত্তি উঠেছে। এই কথাগুলি নেতৃত্ব বিচার-বিবেচনা করলে দলের পক্ষে মঙ্গল।
প্রশ্ন-যখন আপনাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তখন শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার সহ বিজেপির তাবড় নেতৃত্ব আপনার লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছিলেন। তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে বিজেপিকে বেছে নেবেন?
কৌস্তভ- আমি এখনও সেই সমস্ত বিষয় ভাবিনি। আমি যা করি স্পষ্ট ভাষায় বলি। যা করি বুক চিতিয়ে করি। আমি লুকিয়ে, চুরিয়ে কোনও কিছুই করব না। এতো জল্পনা করার কিছু নেই।
প্রশ্ন-শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হচ্ছে, কেউ কি কিছু বলছেন?
কৌস্তভ- আমি কথা বলার চেষ্টা করেছি। তবে এখনই খুব মারাত্মক আশার আলো দেখতে পাচ্ছি তা নয়। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি খুব আশাবাদী মানুষ। যতটা পারব যতক্ষণ অবধি আমার পক্ষে সম্ভব চেষ্টা করব।
প্রশ্ন-কংগ্রেস-সিপিএমের জোটের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। ধূপগুড়িতেও একসঙ্গে লড়াই করছে। এই জোট হলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই কি মজবুত হবে?
কৌস্তভ- সাধারণ মানুষের সমর্থন আসছিল। বাংলার মানুষ কংগ্রেসের প্রতি দীর্ঘ সময়ের ব্য়বধানের পর পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের একটা জোয়ার লক্ষ্য করছিলাম। যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে সেই জোয়ারের জায়গাটা মারাত্মক ভাঁটা হয়ে যাবে। শুধু ভাঁটা নয়, নদী শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, মাঠ হয়ে যায়। সেই অবস্থা হতে চলেছে যদি তৃণমূলের সঙ্গে জোটের সিদ্ধান্ত নেয়। পশ্চিমবঙ্গে মারাত্মক এফেক্ট পড়বে।
প্রশ্ন-মহাজাতি সদনে আপনার সঙ্গে ধস্তাধস্তি হচ্ছিল। কেন?
কৌস্তভ- দলের একটা অংশ নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য তৃণমূলের সঙ্গে খুল্লামখুল্লা দালালি করছে। দলের একটা অংশকে তৃণমূল কংগ্রেস ম্যানেজ করে যেটা করাতে চাইছে আমাকে যে কোনও প্রকারেণ দমাতে হবে। এটা ওয়ান পয়েন্ট এজেন্ডা। তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু তাবেদার, চামচা যারা কোনও সময় তৃণমূলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে থাকে না। একটা কথা রাজ্য সরকারে বিরুদ্ধে বলে না। দলের হয়ে মাঠে নামে না। শুধু বিজেপিকে গাল দেব। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে রাজনৈতিক ভাবে অবশ্যই প্রতিহত করব। বিজেপি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু পশ্চিমঙ্গে আমাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তো তৃণমূল কংগ্রেস। গণতন্ত্র হত্যাকারীর নাম তো তৃণমূল কংগ্রেস।
প্রশ্ন- অনেক বলছেন আপনি বিজেপির বিরুদ্ধে কিছু বলছেন না।
কৌস্তভ- আমার তাবড় বিরোধিতা আছে। যারা জানেন না তাঁরা জানুন। কয়েকদিন আগে বিজেপির বিরোধিতা করার জন্য ভারতী ঘোষ আমার বিরুদ্ধে মানহানির নোটিশ পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমি পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে গালাগাল দিয়ে যাব আর তৃণমূলের বিরুদ্ধে কিছু বলব না। এটা হতে পারে না আমি এখানে তৃণমূলকে জায়গা দিতে আসিনি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর নরম করতে পারব না। আজকে এখানে কংগ্রেসের বড় বড় বিপ্লবীরা বলছেন দেশ বড় না রাজ্য বড়। তাদেরকে বলব যে মানুষগুলো মারা গিয়েছেন তাদের বাড়ি গিয়ে একবার দেখে আসুন। কথা বলে আসুন। দিনের পর দিন এরাজ্যে কংগ্রেসকে শেষ করেছে কে তৃণমূল কংগ্রেস। সিপিএমের সঙ্গেও খুন হয়েছে কংগ্রেস কর্মীরা। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের অপরাধ অনেক গহৃত অপরাধ। আমি বলব অনেকটা ইনটেনসিফায়েড। তার কারণ তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে যেতে চাই তার প্রধান কারণ জন্মলগ্ন থেকে ওই দলের অন্য়তম এজেন্ডা ছিল কংগ্রেসকে সাইনবোর্ডে পরিনত করতে হবে। ২০১১ সালে জোট করে ক্ষমতায় আসার পরেও দিনের পর দিন কংগ্রেসকে ভেঙেছে। সিপিএম কখনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দলে টেনে নেয়নি। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস তুলে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেস করে দিলে মানুষ বিভ্রান্তির মধ্যে থাকে না।
প্রশ্ন-ঘটনা ঘটলেই দৌড়ে যাচ্ছেন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। কেউ কেউ অন্য ইঙ্গিত খুঁজছে।
কৌস্তভ- আমি যাচ্ছি দলকে মাইলেজ দিচ্ছে। আমি তো দলের বাইরে নই। আমার লড়াইটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে সুরক্ষিত করার জন্য। আমার কাছে সেই প্লাটফর্মটা হচ্ছে কংগ্রেস। আমি দেখছি দিনের দিন এই প্লাটফর্মটা কালিমালিপ্ত করছে। আমি আওয়াজ তুলবো না? এটা আমার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রশ্ন-দলকে আপনার বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেক করতে পারে….
কৌস্তভ- আমি দেখতে চাই দল কতদূর পর্যন্ত যেতে চায়। আমি আমার অপরাধটা জানতে চাই। এই যে আজকে মুখপাত্রের পদ থেকে সরানো হচ্ছে বলে শুনছি। আমি এখনও পর্যন্ত দলের পক্ষ থেকে লিখিত কোনও বিবৃতি পাইনি। পদ থেক সরালে জানতে চাওয়ার কোনও বিষয় নেই। যারা এই কাজ করছে তাদের লাজলজ্জা থাকলে এই বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলুক। তাদের সামনে এসে কথা বলার ক্ষমতা নেই। আমাকে কি জন্য বলল তৃণমূলের বিরোধিতা করছি বলে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে আমি নাকি বিজেপির বিরুদ্ধে নরম। আমার বিরুদ্ধে পারসেপশন তৈরি করছি। কেউ যদি বলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির একটু কম বিরোধিতা করি তৃণমূলের বিরুদ্ধে বেশি করি, করি আগামী দিনেও করব। এখানে তৃণমূলই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই। এখানে মারছে তৃণমূল কংগ্রেস। দল ভাঙছে তৃণমূল। লড়াইটা তাদের বিরুদ্ধে অনেকটা বেশি। বিজেপির বিরুদ্ধে অবশ্যই লড়াই। আমি আবার বলছি পুকুর, নদী, ডোবা এই সব তত্ত্ব বুঝি না। আমি পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যকেটা কংগ্রেস কর্মীর বেদনার কথা বুঝি, তাঁদের চোখের জলের কথাটা বুঝি। কালকে যখন সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক মঞ্চে ছিল। উত্তরীয় পড়াচ্ছিলেন তখন প্রচুর কংগ্রেস কর্মী আমাকে ফোন করে কেঁদেছে। দাদা আমরা এই জন্য দলটা করছি।তখন আমার বলার কিছু থাকছে না।অধীরবাবুর পুকুর ডোবার কথা বলছিলেন তখনও কাঁদছিলেন কংগ্রেস কর্মীরা।আমাদের বলিদানের বা আত্মত্যাগের কোনও মূল্য নেই। তাঁদের জন্য লড়াইটা করছি।
প্রশ্ন- অধীর চৌধুরীর সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে?
কৌস্তভ- বিগত এক সপ্তাহ কোনও কথা হয়নি। আমি দরকার ছাড়া খুশি করার জন্য কাউকে ফোন করি না। বিরক্তও করি না। প্রয়োজন হলে নিশ্চয় ফোন করব। ওনাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি। উনি দীর্ঘ দিনের সংগ্রামী নেতা। ওনার প্রতি আমাদের এক্সপেক্টেশনটা অনেক বেশি। এটা উনি বুঝুন।
প্রশ্ন- ইন্ডিয়া জোটের ফলে মানুষের কংগ্রেসের প্রতি ধারনা বদল গিয়েছে।
কৌস্তভ- দলের জন্য একটা সুইসাইডাল স্টেপ। এটা আগেও বলেছি যে সৎসঙ্গে স্বর্গে বাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। অসৎ সঙ্গ আমরা না ত্যাগ করতে পারি তাহলে দলের ভবিষ্যৎ ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন-তৃণমূলকে হটাতে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপির কি একসঙ্গে লড়াই করা দরকার?
কৌস্তভ- না না ওরকম বলছি না। আমি বলছি ইস্যুভিত্তিক যে বিষয়গুলি আছে সেটা হচ্ছে তৃণমূলকে হঠানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ বদ্ধপরিকর। তারা একটা প্লাটফর্ম খুঁজছে। সেক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে মানুষের ছুৎমার্গ নেই। সেই আন্দোলনের সলিড জায়গা দিতে হবে আমরা সেটা করতে পারছিলাম। মানুষের আমাদের প্রতি আস্থা জাগছিল। সেই জায়গাটা আমরা ক্ষতি করে ফেলেছি।
প্রশ্ন- ন্যাড়া হয়েছিলেন। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসে থেকে তৃণমূল সরকারের পতন ঘটানো কি সম্ভব?
কৌস্তভ- দেখুন আমি আবার বলছি। কঠিন সময়, কঠিন পরিস্থিতি তো আসেই। তখন মনে হয় কোনও কিছু সম্ভব হবে না। আমি প্রচন্ড আশাবাদী। আমি এখনও মনে করি পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানো সম্ভব। এই সরকারকে উৎখাত করা সম্ভব।
Exclusive: খুল্লমখুল্লা কথায় পরপর বোমা ফাটালেন কৌস্তভ! 'শেষ দেখে ছাড়ব', বিস্ফোরক যুবনেতা
একান্ত এই আলপাচারিতায় বঙ্গ বিজেপি নিয়েও বেশ কিছু মন্তব্য করেছেন কৌস্তভ। যা যথেষ্ট ইঙ্গিতবাহী বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
Follow Us
মোদী বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের তিন তিনটে বৈঠক হয়ে গিয়েছে। বিজেপি বধে জাতীয় স্তরে কংগ্রেস ও তৃণমূল খুব কাছাকাছি এসেছে। এদিকে রাজ্য কংগ্রেসের একাংশ তৃণমূলের সঙ্গে জোট বাধায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এর ফলে এরাজ্যে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তুরুন তুর্কি কংগ্রেস নেতা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী একের পর এক বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন।
প্রশ্ন- ইন্ডিয়া জোটে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠতা। জোট নিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উৎসাহ রয়েছে। কী বলবেন?
কৌস্তভ- দরকারের সময় কংগ্রেসের হাতে-পায়ে পড়ে যাওয়া আজকে নতুন কিছু করছে এমন নয়। তৃণমূল কংগ্রেসের পুরনো অভ্যাস। একটা জিনিস স্পষ্ট, পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে মারাত্মক ধ্বস নেমেছে। তৃণমূলের প্রতি মানুষের একটা মোহভঙ্গ হচ্ছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে সরে যাচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে তাঁদের মনে হয়েছে কংগ্রেসকে আগলে ধরতে হবে। তাঁরা তো এতো ক্ষমতাশালী তাহলে কেন এত হাতে-পায়ে ধরতে হচ্ছে? যে কংগ্রেসকে পচা ডোবা বলে আখ্যা দিয়েছেন। রাহুল গান্ধীকে বসন্তের কোকিল বলেছেন। সদ্য সমাপ্ত কর্নাটক নির্বাচনের পর একবার অভিনন্দনটুকুও জানাননি। বিপদে পড়েছেন বুঝতে পেরেছেন, জোটে থেকে বাঁচতে চাইছে তৃণমূল।
প্রশ্ন- রাহুল গান্ধীর বাড়িতে ভোর বেলা অভিষেকের সঙ্গে বৈঠক। কেন?
কৌস্তভ- পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতি, চুরি-জোচ্চুরি করেছেন। উনি ভাবছেন যে এগুলি আড়াল করার জন্য বিরোধী জোটে ঢুকে যাব। আর কিছু করলেই বলব বিজেপি আমাকে ধরতে আসছে। সুচারুভাবে এই পদক্ষেপটা গ্রহণ করছে। আমাদের দুর্ভাগ্য এই বিষয়টা অ্যাসার্ট না করে চোর-জোচ্চরদের আমাদের আস্তানায় আসকারা দিচ্ছি। সেই ক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য, চোরেরা যেন কোনও স্থান না পায়। কোনও আস্তানা না পায়। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সঙ্গে তঞ্চকতা করেছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে লুটেছে। তারা যেন বিরোধী জোটকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার না করতে পারে।
প্রশ্ন- কংগ্রেসই আগলে রাখছে, কোর কমিটিতে স্থান পাচ্ছে।
কৌস্তভ- কিছু কথা শুনতে খুবই খারাপ লাগে। যখন শুনতে হয় ইন্ডিয়া জোটের মুখ্যমন্ত্রীদের রাজ্যে সুশাসন চলছে। আমরা কোনওদিন বলতে পারব না পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বারা সুশাসন চলছে। এই সমস্ত কথা বলা মানে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস কর্মীদের ছোট করা।
প্রশ্ন- দেশের ৫ শহরে জনসভার কথা ঘোষণা করেছে ইন্ডিয়া জোট। রাজ্য কংগ্রেসের অন্তোষের জেরেই কি কলকাতা বাদ পড়েছে?
কৌস্তভ- সেটা তো খুব স্বাভাবিক। কলকাতায় জনসভা করতে গেলে এখানে বিক্ষোভ হবে। কেউ আটকাতে পারবে না। এখানকার সাধারণ কংগ্রেস কর্মীরা কি মেনে নেবে এখানে যদি তৃণমূলের সঙ্গে দল একসঙ্গে সভা করে? আমি তো মানবো না।
প্রশ্ন- জোটের যা পরিস্থিতি তাতে এখানেও সিট অ্যাডজাস্টমেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন কী হবে?
কৌস্তভ- এখনও অবধি দলের নেতৃত্বর ওপরে আশা-ভরসা রাখছি। আমি এখনও মনে করি, দলের সাধারণ কর্মীদের স্বার্থে আঘাত লাগবে এমন কিছু নেতৃত্ব করবে না। সেই জন্য নেতৃত্বের ওপরে আস্থা, ভরসা সবটাই রাখছি। দলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকরাও রাখছে। যদি এর অন্যত্র হয় তাহলে দলের কর্মী-সমর্থকদের জন্য ভয়াবহ বিষয় হবে। তারপর দেখা যাবে কি হবে।
প্রশ্ন- কংগ্রেসকে সঙ্গে না পেলে তৃণমূলের আসন বাড়বে না কমবে?
কৌস্তভ- আমি এটা বলতে পারব না। তবে আমি জানি তৃণমূলের সঙ্গে যদি সখ্যতা না থাকে তাহলে আমরা অনেক ভাল ফল করব।
প্রশ্ন- যদি একসঙ্গে লড়তেই হয়…
কৌস্তভ- সেটা তো খুব দুর্ভাগ্যের হবে। রাজনৈতিক ভাবে চূড়ান্ত দেউলিয়াপনার পরিচয় দিতে হবে। সেটা হলে রাজ্যের কংগ্রেস কর্মীরা রাস্তায় মুখ দেখাতে পারবে না।
প্রশ্ন- কংগ্রেসের একটা অংশ বলছে কৌস্তভের জনপ্রিয়তার জন্য দলে থেকে বাদ দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলেছ। কি বলবেন?
কৌস্তভ- দেখুন আমি দলের স্বার্থে কথা বলছি। এখানে কোনও ভাববাচ্যে কথা না বলে স্পষ্ট ভাবে বলছি তৃণমূল আমাদের চোখে চোর ছিল, আছে, থাকবে। আমার এখানে নিজের কোনও সিটের ধান্দা নেই, করে-কম্মে খাওয়ার ধান্দা নেই। আমার কোনও স্বার্থ নেই। স্বার্থ একটাই পশ্চিমবঙ্গে যাঁরা ৪৬ বছর কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে লড়াই করছে সেই মানুষগুলোকে যোগ্য সম্মান জানাতে হবে।
প্রশ্ন- এই বাড়িতেই পুলিশ এসেছিল। নির্যাতনের অভিযোগ ছিল। তারপরেও কংগ্রেসে আপনাকে নিয়ে কথা উঠছে।
কৌস্তভ- একটা কথা আছে না- ঘরের শত্রুরা যখন আক্রমণ করে সেটা আরও বেদনাদায়ক। আজকে অনেকে বলছেন অনেক কথা, অধীরবাবুর বিরোধিতা করছি। যে সমস্ত মানুষজন এখন খুব অধীরবাবুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা দেখাতে চাইছেন তাঁদের দেখা উচিত যখন অধীরবাবুর প্রয়াত কন্যার সম্পর্কে কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন একজনকেও মাঠে ময়দানে খুঁজে পাওয়া যায়নি। আমি বুক চিতিয়ে প্রতিবাদ করেছিলাম। তার জন্য আমাকে হেনস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। আমি দেখছি দলের একটা অংশ আমি ও আমার পরিবারকে দাগিয়ে মনগড়া উল্টোপাল্টা যা পারছে বলছে। তাদেরকেই বলছি হেনস্থা আমি হয়েছি, আমার পরিবার হয়েছে। অনেকে আমার অবদান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, নেপাল মাহাত বলতে পারবেন ঝালদার পুরো এপিসোডটা। সেই লড়াইতে আমার কতটা অবদান ছিল। তপন কান্দুর সিবিআই মামলা, বগটুই মামলা। পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রথম পিআইএলটাই আমার করা।
প্রশ্ন- অধীর চৌধুরী, দীপা দাশমুন্সির ইন্ডিয়া জোট নিয়ে বলছেন, রাজ্য কংগ্রেসের বড় অংশ বিষয়টার ওপর নজর রাখছেন। কোনও মন্তব্য করছেন না।
কৌস্তভ- আমি নেতৃত্বকে বার বার অনুরোধ করেছি একটা লিখিত বিবৃতি জারি করে বিভ্রান্তি দূর করা হোক। মানুষকে স্পষ্ট ভাবে জানানো হোক পশ্চিমবঙ্গে দলের অবস্থান। আমরা তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা বা সখ্যতা কোনওটাই রাখব না। আমরা যাকে চোর বলছি তাদের নিয়ে ভোটে জিতে ক্ষমতা দখল করাটা সম্ভব নয়। বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস কর্মীরা যে আপত্তি দেখাচ্ছে তা নয়। ত্রিপুরা ও মেঘালয়েও আপত্তি উঠেছে। এই কথাগুলি নেতৃত্ব বিচার-বিবেচনা করলে দলের পক্ষে মঙ্গল।
প্রশ্ন- যখন আপনাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল তখন শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদার সহ বিজেপির তাবড় নেতৃত্ব আপনার লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছিলেন। তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে বিজেপিকে বেছে নেবেন?
কৌস্তভ- আমি এখনও সেই সমস্ত বিষয় ভাবিনি। আমি যা করি স্পষ্ট ভাষায় বলি। যা করি বুক চিতিয়ে করি। আমি লুকিয়ে, চুরিয়ে কোনও কিছুই করব না। এতো জল্পনা করার কিছু নেই।
প্রশ্ন- শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে কথা হচ্ছে, কেউ কি কিছু বলছেন?
কৌস্তভ- আমি কথা বলার চেষ্টা করেছি। তবে এখনই খুব মারাত্মক আশার আলো দেখতে পাচ্ছি তা নয়। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি খুব আশাবাদী মানুষ। যতটা পারব যতক্ষণ অবধি আমার পক্ষে সম্ভব চেষ্টা করব।
প্রশ্ন- কংগ্রেস-সিপিএমের জোটের বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল। ধূপগুড়িতেও একসঙ্গে লড়াই করছে। এই জোট হলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই কি মজবুত হবে?
কৌস্তভ- সাধারণ মানুষের সমর্থন আসছিল। বাংলার মানুষ কংগ্রেসের প্রতি দীর্ঘ সময়ের ব্য়বধানের পর পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের একটা জোয়ার লক্ষ্য করছিলাম। যা পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে সেই জোয়ারের জায়গাটা মারাত্মক ভাঁটা হয়ে যাবে। শুধু ভাঁটা নয়, নদী শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়, মাঠ হয়ে যায়। সেই অবস্থা হতে চলেছে যদি তৃণমূলের সঙ্গে জোটের সিদ্ধান্ত নেয়। পশ্চিমবঙ্গে মারাত্মক এফেক্ট পড়বে।
প্রশ্ন- মহাজাতি সদনে আপনার সঙ্গে ধস্তাধস্তি হচ্ছিল। কেন?
কৌস্তভ- দলের একটা অংশ নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য তৃণমূলের সঙ্গে খুল্লামখুল্লা দালালি করছে। দলের একটা অংশকে তৃণমূল কংগ্রেস ম্যানেজ করে যেটা করাতে চাইছে আমাকে যে কোনও প্রকারেণ দমাতে হবে। এটা ওয়ান পয়েন্ট এজেন্ডা। তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু তাবেদার, চামচা যারা কোনও সময় তৃণমূলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে থাকে না। একটা কথা রাজ্য সরকারে বিরুদ্ধে বলে না। দলের হয়ে মাঠে নামে না। শুধু বিজেপিকে গাল দেব। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে রাজনৈতিক ভাবে অবশ্যই প্রতিহত করব। বিজেপি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু পশ্চিমঙ্গে আমাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তো তৃণমূল কংগ্রেস। গণতন্ত্র হত্যাকারীর নাম তো তৃণমূল কংগ্রেস।
প্রশ্ন- অনেক বলছেন আপনি বিজেপির বিরুদ্ধে কিছু বলছেন না।
কৌস্তভ- আমার তাবড় বিরোধিতা আছে। যারা জানেন না তাঁরা জানুন। কয়েকদিন আগে বিজেপির বিরোধিতা করার জন্য ভারতী ঘোষ আমার বিরুদ্ধে মানহানির নোটিশ পাঠিয়েছেন। কিন্তু আমি পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে গালাগাল দিয়ে যাব আর তৃণমূলের বিরুদ্ধে কিছু বলব না। এটা হতে পারে না আমি এখানে তৃণমূলকে জায়গা দিতে আসিনি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর নরম করতে পারব না। আজকে এখানে কংগ্রেসের বড় বড় বিপ্লবীরা বলছেন দেশ বড় না রাজ্য বড়। তাদেরকে বলব যে মানুষগুলো মারা গিয়েছেন তাদের বাড়ি গিয়ে একবার দেখে আসুন। কথা বলে আসুন। দিনের পর দিন এরাজ্যে কংগ্রেসকে শেষ করেছে কে তৃণমূল কংগ্রেস। সিপিএমের সঙ্গেও খুন হয়েছে কংগ্রেস কর্মীরা। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের অপরাধ অনেক গহৃত অপরাধ। আমি বলব অনেকটা ইনটেনসিফায়েড। তার কারণ তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে যেতে চাই তার প্রধান কারণ জন্মলগ্ন থেকে ওই দলের অন্য়তম এজেন্ডা ছিল কংগ্রেসকে সাইনবোর্ডে পরিনত করতে হবে। ২০১১ সালে জোট করে ক্ষমতায় আসার পরেও দিনের পর দিন কংগ্রেসকে ভেঙেছে। সিপিএম কখনও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দলে টেনে নেয়নি। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস তুলে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেস করে দিলে মানুষ বিভ্রান্তির মধ্যে থাকে না।
প্রশ্ন- ঘটনা ঘটলেই দৌড়ে যাচ্ছেন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। কেউ কেউ অন্য ইঙ্গিত খুঁজছে।
কৌস্তভ- আমি যাচ্ছি দলকে মাইলেজ দিচ্ছে। আমি তো দলের বাইরে নই। আমার লড়াইটা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে সুরক্ষিত করার জন্য। আমার কাছে সেই প্লাটফর্মটা হচ্ছে কংগ্রেস। আমি দেখছি দিনের দিন এই প্লাটফর্মটা কালিমালিপ্ত করছে। আমি আওয়াজ তুলবো না? এটা আমার নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
প্রশ্ন- দলকে আপনার বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেক করতে পারে….
কৌস্তভ- আমি দেখতে চাই দল কতদূর পর্যন্ত যেতে চায়। আমি আমার অপরাধটা জানতে চাই। এই যে আজকে মুখপাত্রের পদ থেকে সরানো হচ্ছে বলে শুনছি। আমি এখনও পর্যন্ত দলের পক্ষ থেকে লিখিত কোনও বিবৃতি পাইনি। পদ থেক সরালে জানতে চাওয়ার কোনও বিষয় নেই। যারা এই কাজ করছে তাদের লাজলজ্জা থাকলে এই বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলুক। তাদের সামনে এসে কথা বলার ক্ষমতা নেই। আমাকে কি জন্য বলল তৃণমূলের বিরোধিতা করছি বলে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনছে আমি নাকি বিজেপির বিরুদ্ধে নরম। আমার বিরুদ্ধে পারসেপশন তৈরি করছি। কেউ যদি বলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির একটু কম বিরোধিতা করি তৃণমূলের বিরুদ্ধে বেশি করি, করি আগামী দিনেও করব। এখানে তৃণমূলই মূল প্রতিদ্বন্দ্বী, তাদের বিরুদ্ধে লড়াই। এখানে মারছে তৃণমূল কংগ্রেস। দল ভাঙছে তৃণমূল। লড়াইটা তাদের বিরুদ্ধে অনেকটা বেশি। বিজেপির বিরুদ্ধে অবশ্যই লড়াই। আমি আবার বলছি পুকুর, নদী, ডোবা এই সব তত্ত্ব বুঝি না। আমি পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যকেটা কংগ্রেস কর্মীর বেদনার কথা বুঝি, তাঁদের চোখের জলের কথাটা বুঝি। কালকে যখন সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক মঞ্চে ছিল। উত্তরীয় পড়াচ্ছিলেন তখন প্রচুর কংগ্রেস কর্মী আমাকে ফোন করে কেঁদেছে। দাদা আমরা এই জন্য দলটা করছি।তখন আমার বলার কিছু থাকছে না।অধীরবাবুর পুকুর ডোবার কথা বলছিলেন তখনও কাঁদছিলেন কংগ্রেস কর্মীরা।আমাদের বলিদানের বা আত্মত্যাগের কোনও মূল্য নেই। তাঁদের জন্য লড়াইটা করছি।
প্রশ্ন- অধীর চৌধুরীর সঙ্গে কোনও কথা হয়েছে?
কৌস্তভ- বিগত এক সপ্তাহ কোনও কথা হয়নি। আমি দরকার ছাড়া খুশি করার জন্য কাউকে ফোন করি না। বিরক্তও করি না। প্রয়োজন হলে নিশ্চয় ফোন করব। ওনাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি। উনি দীর্ঘ দিনের সংগ্রামী নেতা। ওনার প্রতি আমাদের এক্সপেক্টেশনটা অনেক বেশি। এটা উনি বুঝুন।
প্রশ্ন- ইন্ডিয়া জোটের ফলে মানুষের কংগ্রেসের প্রতি ধারনা বদল গিয়েছে।
কৌস্তভ- দলের জন্য একটা সুইসাইডাল স্টেপ। এটা আগেও বলেছি যে সৎসঙ্গে স্বর্গে বাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। অসৎ সঙ্গ আমরা না ত্যাগ করতে পারি তাহলে দলের ভবিষ্যৎ ধুলিস্যাৎ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন- তৃণমূলকে হটাতে কংগ্রেস, সিপিএম, বিজেপির কি একসঙ্গে লড়াই করা দরকার?
কৌস্তভ- না না ওরকম বলছি না। আমি বলছি ইস্যুভিত্তিক যে বিষয়গুলি আছে সেটা হচ্ছে তৃণমূলকে হঠানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষ বদ্ধপরিকর। তারা একটা প্লাটফর্ম খুঁজছে। সেক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে মানুষের ছুৎমার্গ নেই। সেই আন্দোলনের সলিড জায়গা দিতে হবে আমরা সেটা করতে পারছিলাম। মানুষের আমাদের প্রতি আস্থা জাগছিল। সেই জায়গাটা আমরা ক্ষতি করে ফেলেছি।
প্রশ্ন- ন্যাড়া হয়েছিলেন। প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসে থেকে তৃণমূল সরকারের পতন ঘটানো কি সম্ভব?
কৌস্তভ- দেখুন আমি আবার বলছি। কঠিন সময়, কঠিন পরিস্থিতি তো আসেই। তখন মনে হয় কোনও কিছু সম্ভব হবে না। আমি প্রচন্ড আশাবাদী। আমি এখনও মনে করি পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানো সম্ভব। এই সরকারকে উৎখাত করা সম্ভব।