যত কান্ড কৃষ্ণনগরেই। কখনও তৃণমূল সাংসদ তাপস পালের বিতর্কিত মন্তব্যে তোলপাড় হয়েছে। এমনকী রোজভ্যালি কাণ্ডে গ্রেফতারও হয়েছেন তিনি। এবার কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র নগদের বিনিময়ে প্রশ্ন কাণ্ডে সংসদ থেকে বহিষ্কৃত। শুক্রবার লোকসভায় এথিক্স কমিটির সুপারিশ ধ্বনীভোটে পাস হয়ে যায়। আবার কৃষ্ণনগর উত্তরের বিজেপি বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর, তাঁর অবস্থান নিয়েই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
মহুয়ার আগে কৃষ্ণনগরে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ছিলেন টলি অভিনেতা তাপস পাল। তাঁর মন্তব্য, 'লোক পাঠিয়ে ধর্ষণ করে দেব' ভাইরাল হওয়ার পর বঙ্গ রাজনীতিতে রীতিমতো শোরগোল পরে গিয়েছিল। ওই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এফআইআর হয়েছিল। মামলা আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতেত রোজভ্যালি চিটফান্ড কাণ্ডে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কেন্দ্রীয় সংস্থা। সিবিআই তাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে গিয়েছিল পাশের রাজ্য ওড়িশার ভূবনেশ্বরে। পরবর্তীতে শারীরিক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তাপল পাল। মৃত্যুর আগে রাজনীতিগত কারণে বহু ঝক্কি সামলাতে হয়েছিল তাপস পালকে।
আরও পড়ুন- ‘বহিষ্কৃত’ মহুয়ার তৃণমূলে ভবিষ্যৎ কী? সাফ জানিয়ে দিলেন মমতা
গত ২০১৯-এ কৃষ্ণনগর কেন্দ্র থেকে ভোটে জয়ী হন সাংসদ মহুয়া মৈত্র। বলিয়ে-কইয়ে তৃণমূল নেত্রী ভোটপ্রচারে রীতিমতো ঝড় তুলেছিলেন। পরবর্তীতে নদীয়ার গয়েশপুরে এক সভায় সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের প্রতি তাঁর উক্তি ২ পয়সার সাংবাদিক, চরম বিতর্কের সৃষ্টি করে। কোনও কোনও সংবাদ মাধ্যম এই তৃণমূল নেত্রীর খবর বয়কট করে। তখন মহুয়ার মন্তব্যের প্রতিবাদ করেছিলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। মহুয়া মৈত্রের মন্তব্য দলের নয় জানিয়ে দিযেছেন বর্ষীয়াণ তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পরবর্তীতে মহুয়ার মন্তব্য, 'আমার কাছে কালী এমন দেবী, যিনি মাংস খান, মদ্যপান করেন।' দেবী সম্পর্কিত মন্তব্যও মহুয়াকে ফের বিতর্কের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়। এবার টাকা নিয়ে প্রশ্ন করার অভিযোগের তদন্তে এথিক্স কমিটির সুপারিশে সাংসদ পদই খারজি হয়ে গেল কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের। কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্র এই মুহূর্তে সাংসদহীন।
আরও পড়ুন- বিতর্কের আরেক নাম মহুয়া মৈত্র! তাঁর কোন কোন মন্তব্যে তোলপাড় হয়েছে বঙ্গ রাজনীতি?
কৃষ্ণনগরে সাংসদ যেমন নেই পাশাপাশি তেমনই কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক মুকুল রায় দীর্ঘ দিন নিজের কেন্দ্রে যাননি। ২০২১-এ বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার কিছু দিন পরে ইএম বাইপাশের ধারে তৃণমূল ভবনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। বীরভূমে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের পাশে দাঁড়িয়ে মুকুল বলেছিলেন, 'আগামী পুরসভা নির্বাচনে বিজেপি বিপুল ভোটে জয়ী হবে।' তারপরই তিনি বলেন, 'বিজেপি মানেই তৃণমূল, তৃণমূল মানেই বিজেপি।' এবছর আবার দিল্লি ছুটেছিলেন মুকুল রায়। সেখানে গিয়ে ঘোষণা করেন তিনি বিজেপি নেতা। তাঁর ছেলে শুভ্রাংশু বাবার খোঁজ না পেয়ে অপহরণের অভিযোগ আনেন। তবে দিল্লিতে মুকুল রায় জানিয়ে দেন, তিনি স্বেচ্ছায় এসেছেন। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব মুকুলের আবেদনে কোনও সাড়া দেয়নি।
আরও পড়ুন- ‘প্রমাণ ছাড়াই পদক্ষেপ’…! সাংসদ পদ খুইয়ে বিস্ফোরক মহুয়া, হাততালি সনিয়ার
কৃষ্ণনগরের সাংসদ থেকে বিধায়ক, দুজনেই বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দুতে। এই মুহূর্তে সাংসদ বহিষ্কৃত, আর কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক এখন কোন দলে বিজেপি না তৃণমূলে তা বুঝতেই কালঘাম ছুটে যাচ্ছে রাজনৈতিক মহল থেকে সাধারণ মানুষের।