রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েই প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী ও বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছিলেন, বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের শিকার তিনি। প্রথমবারের বক্তব্যে কাদের ষড়যন্ত্র তা বলেননি। দ্বিতীয়বার বিজেপির দিকে নিশানা করেছিলেন। শুক্রবার সিজিও থেকে বের হওয়ার মুখে একবার দু'বার নয়, একাধিকবার বলেছেন সব জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক। বিজেপি তাঁকে ফাঁসিয়েছে, সব জানেন মমতাদি, দাবি জ্যোতিপ্রিয়র। শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়ে তৎকালীন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। তখন কিন্তু স্পষ্ট করেননি কোন দলের ষড়যন্ত্র। এরপরই তৃণমূল সাংসদ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া আক্রমণ জ্যেতিপ্রিয়কে। কেন জ্যোতিপ্রিয় এমন কথা বললেন? তা নিয়ে সরগরম বাংলার রাজনীতি।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা ও এরাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত মনোজ মালব্য টুইটে বলেছেন, একসময় কুণাল ঘোষ বলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব জানেন। এখন জ্যেতিপ্রিয় মল্লিক এক কথা বলছেন। বিজেপির বক্তব্য, সারদা মামলায় গ্রেফতার তৎকালীন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ প্রকাশ্যে বলেছিলেন এই চিটফান্ড থেকে বেশি সুবিধা নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে মুখোমুখি জেরা করারও দাবি করেছিলেন। তিনিই সব জানেন। এখন সেই কুণাল তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা দলের মুখপাত্র।
আরও পড়ুন- ‘৩ বছরে ১০ লাখ থেকে ১০ কোটি! কোন জাদু?’ শিশিরের সম্পত্তির লংজাম্পে প্রশ্ন কুণালের
এরইমধ্যে জ্যোতিপ্রিয়র মন্তব্যকে ঘিরে তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে চরম বিতর্ক শুরু হয় গিয়েছে। প্রথমদফায় কাকলি ঘোষ দস্তিদাব জ্যেতিপ্রিয়র মন্তব্যকে ব্যক্তিগত বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও রাখঢাক না রেখেই জ্যোতিপ্রিয়কে 'বেইমান' বলে মন্তব্য করেছেন। তাঁর বক্তব্য, দলনেত্রী কাউকে দায়িত্ব দিলে তিনি অন্যায় করলে নেত্রী কি করবেন? এক্ষেত্রে তো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম আসারই কথা নয়। উল্লেখ্য অভিষেক তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর প্রকাশ্যে সব থেকে বেশি বিরোধিতা করেছিলেন কল্যান। এমনকী অভিষেককে নেতা মানেন না বলেও হুঙ্কার ছেড়েছিলেন।
গ্রেফতার হলেই প্রথমে মুখে আসে ষড়যন্ত্রের তত্ব। তবে জ্যেতিপ্রিয় মল্লিক মমতা-অভিষেক সব জানেন বললেও কথায় ফাঁক রেখেছেন। কিন্তু যেভাবে মমতা-অভিষেকের কথা জোর দিয়ে বলছিলেন তাতে রাজনৈতিক মহল জ্যোতিপ্রিয়র মন্তব্য সহজ ভাবে নিচ্ছে না। এদিকে দলীয় সাংসদ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যাশ ওই মন্তব্যের জন্য সরাসরি বালুকে আক্রমণ শানিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, জ্যেতিপ্রিয়র মন্তব্য নিয়ে একটু ধোঁয়াশা তৈরি হলেও কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায় ও কাকলি ঘোষ দস্তিদার দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। কারণ, তাঁদের মন্তব্যের পর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এখনও পর্যন্ত কোনও কিছু বলেনি। পাশাপাশি দল পাশে আছে বলে বনমন্ত্রী ঘোষণা করলেও তাঁর মন্তব্য যে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে যথেষ্ট জলঘোলা করেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন- বালুর হাত ধরেই রাতারাতি ফুলেফেঁপে ঢোল? ইডির নজরে জ্যোতিপ্রিয়র কোন ঘনিষ্ঠরা?
জ্যোতিপ্রিয়র বাড়িতে তল্লাশির সময়ই তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখনও পর্যন্ত সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি। জ্যেতিপ্রিয় বলে যাচ্ছেন তিনি দলেরই সঙ্গেই আছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতারির কয়েকদিনের মধ্যে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হয়েছিল, দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। জ্যেতিপ্রিয় মল্লিক এখনও রাজ্যের বনমন্ত্রী। দল কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। রাজনৈতিক মহলের মতে, জ্যেতিপ্রিয়র মন্তব্যে 'ডাবল মিনিং'-য়ের ছোঁয়া আছে। তাহলে কি তিনি ঘুরিয়ে দলকে চাপে রাখতে চাইলেন? মমতার সঙ্গে অভিষেকের নাম জড়িয়ে মন্তব্য করলেন! কল্যানের চরম বিরোধিতাই কি জ্যোতিপ্রিয়র মন্তব্যকে মান্যতা দিয়ে ফেলেছে? এই আলোচনাই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য-রাজনীতিতে।