সিবিআই-এর ডাকে শিলং গিয়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ তথা সাংবাদিক কুণাল ঘোষ। সারদা চিটফান্ডকাণ্ডের তদন্তে কেন্দ্রীয় সংস্থাটির জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতেই শিলং গিয়েছেন কুণাল। কলকাতার বর্তমান নগরপাল তথা সারদা-সহ অন্যান্য চিটফান্ডকাণ্ডের তদন্তে গঠিত তৎকালীন বিশেষ তদন্তকারী দলের প্রধান রাজীব কুমারের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জেরাও করা হচ্ছে তাঁকে। সব মিলিয়ে, পরিস্থিতি রীতিমতো গম্ভীর। কিন্তু পরিস্থিতি যতই গম্ভীর হোক, সারদার একদা গ্রুপ মিডিয়া সিইও কুণাল যে তা বেশ উপভোগ করছেন তা ফোসবুকে চোখ রাখলেই স্পষ্ট।
গতকাল নাগাড়ে জেরা করা হয়েছে কুণালকে। তবু সোমবার সকালে বেশ হালকা মেজাজেই রয়েছেন রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ। এদিন সকালে একটি ফেসবুক লাইভে শিলং-এর আবহাওয়ার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েই গলা ছেড়ে গান ধরেছেন কুণাল ঘোষ। আর সে গানও বেশ 'তাৎপর্যপূর্ণ'। কুণালের কণ্ঠে এদিন শোনা গিয়েছে, "তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই"।
আরও পড়ুন- ফের এক বছরের জেল হতে পারে, নিজেই জানালেন সাংবাদিক কুণাল ঘোষ
তবে শুধুমাত্র সোমবার সকালটাই যে কুণাল ঘোষের গানে গানে কেটেছে, তা নয়। শৈল শহরে স্নিগ্ধ পরিবেশে কুণালের রবিবার যাপনেও থেকেছে চায়ের উষ্ণতা এবং সঙ্গীতের মূর্চ্ছনা। ১০ ফেব্রুয়ারির একটি ফেসবুক পোস্ট সে কথাই বলছে। তবে সেদিন অবশ্য কুণাল নিজে গান ধরেননি। গান বাজিয়েছেন তাঁর সঙ্গী। আর রবিবারের গানও যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। কুণাল জানিয়েছেন সে গানটি ছিল, " দুরন্ত ঘূর্ণির এই লেগেছে পাক, এই দুনিয়া ঘোরে বনবন বনবন, ছন্দে ছন্দে কত রং বদলায়।"
রঙ বদলের ইঙ্গিত?
সোমবার কাক ভোরে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন কুণাল ঘোষ। সেই পোস্টে 'একটি অনুরোধ' করেছেন প্রাক্তন সাংসদ। তাঁর বক্তব্য, এই মুহূর্তে চিটফান্ড কেলেঙ্কারির যে তদন্ত চলছে তার সঙ্গে যেন রাজনীতিকে যুক্ত করা না হয়। কুণালের সাফ কথা, "আমাকে যেভাবে জড়ানো হয়েছে, আমি বিরোধিতা করেছি। কোর্টে লড়ছি। রাজ্য এবং সিবিআইয়ের বিরুদ্ধেই লড়ি। ফলে তদন্তের মুখে যিনি আসবেন, তাঁরও উচিত সরকার বা রাজনৈতিক মদত ছাড়া নিজের লড়াই নিজে লড়া"। তিনি নিজে তদন্তকারী সংস্থাগুলির অন্ধ সমর্থক নন বলে দাবি করেও কুণালের অনুরোধ, "বল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গেই রাজনীতির রং লাগিয়ে সমর্থন বা প্রতিহিংসার রাজনীতি বলে বিরোধিতা না করে একটু নজর রাখাই ভালো"। তবে এ সবের মধ্যে কুণাল যথেষ্ট আশঙ্কিতও। তিনি এদিন লিখেছেন, "...তদন্তটা হতে দিন। এতে কতদূর কী হবে, জানি না। বড়রা কখন যে কার সঙ্গে ভাব করে ফেলে, এ বিষয়ে আমার এই তদন্তেই দেখা অভিজ্ঞতা অপূর্ব !!! "
আরও পড়ুন -দিল্লি-কলকাতা নয়, সারদার আপন দেশ অনেক অভ্যন্তরে
উপভোগ, আশঙ্কা এই দুইয়ের মাঝে থাকলেও সিবিআই-এর ডাকে কুণালের এই শিলং সফর কিন্তু আগাগোড়া রাবীন্দ্রিক। শুধু রবিঠাকুরের গানই নয়, শিলং-এ পৌঁছেই ৯ ফেব্রুয়ারি রাতেই 'কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্পর্শলাগা জিৎভূমি' দেখতে যান কুণাল ঘোষ। বাড়িটির কেয়ারটেকার যে তাঁকে আন্তরিকতার সঙ্গে বাড়িটি ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন সে কথাও সচিত্র বিবরণ দিয়ে জানিয়েছেন সাংবাদিক। কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত প্রাঙ্গণে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে ধন্য বলেও জানিয়েছেন কুণাল।
গত দু'দিন ধরে কুণাল ঘোষের এইসব ফেসবুক পোস্ট রাজনৈতিক মহলে তীব্র জল্পনার জন্ম দিয়েছে। তবে, এগুলি নিতান্ত সোশাল আপডেট না কি বিশেষ অর্থবহ, তা বলবে আগামী।