এবার দাবি-দাওয়া আদায়ে রাজনৈতিক হিসেব-নিকেশ করে শুরু করে দিল কুড়মি সমাজ। লাগাতার রেল ও পথ অবরোধ হয়েছে, জঙ্গলমহল জুড়ে চলছে ঘাঘর ঘেরা কর্মসূচি। নিজেদের বাড়ির দেওয়ালে রাজনৈতিক কর্মকান্ড না লেখার অঙ্গীকার করেছে কুড়মি সমাজ। এরইমধ্যে রাজনীতি ছেড়ে সামাজিক আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য কুড়মি সমাজের কাছে আবেদন জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা। তাঁদের দাবি, ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ জন বিভিন্ন দল ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির পদ ছেড়ে কুড়মি সমাজের আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
কুড়মি সমাজের পর্যবেক্ষণ রাজ্যের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও বালুরঘাট, এই পাঁচটি লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ নির্বাচনের পিছনে কুড়মি সমাজের অবদান আছে। পাশাপাশি প্রায় ২৬টি বিধানসভা আসনেও প্রার্থী নির্বাচনে তাঁদের ভূমিকা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি সমাজের সভাপতি রাজেশ মাহাত বলেন, 'রাজ্যে কুড়মি জনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। জঙ্গলমহল ছাড়া মালদা, নদিয়া ও উত্তর দিনাজপুরে কুড়মিদের বসবাস আছে।' তবে রাজনৈতিক ভাবে পর্যবেক্ষণ করলেও এখনও অবধি নির্দিষ্ট কোনও সিদ্ধান্ত উপনীত হয়নি কুড়মিরা।
বাঘমুন্ডি, পাড়া, জয়পুর, কাশিপুর, পুরুলিয়া, বলরামপুর, মানবাজার, রাণীবাঁধ, রাইপুর, তালডংরা, রঘনাথপুর, নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর, ঝাড়গ্রাম, গড়বেতা, শালবনি, বিনপুর, বান্দোয়ান, মেদিনীপুর, খড়্গপুর, কেশিয়াড়ি, দাঁতন, বালুরঘাট লোকসভার বালুরঘাট, কুমারগঞ্জ, তপন, সন্দেশখালি বিধানসভা কুড়মি জনগোষ্ঠীর প্রভাব রয়েছে বলে কুড়মি সমাজের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। কুড়মি প্রভাবিত ৫টি লোকসভাতেই রয়েছে বিজেপির সাংসদ। একাধিক বিধায়কও আছে গেরুয়া শিবিরের।
কুড়মি সমাজের সভাপতি রাজেশ মাহাত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'রাজনৈতিক দল ও জনপ্রতিনিধি থেকে পদত্যাগ করে কুড়মি সমাজ গড়ার আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে। আমরা বলছি আপনারা রাজনীতি ছাড়ুন সামাজিক আন্দোলনে যোগ দিন। জঙ্গলমহলের পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার প্রায় ৫০ জন নেতৃত্ব বা জনপ্রতিনিধি তৃণমূল, কংগ্রেস, বিজেপি, সিপিএমসহ নানা দলের সংস্পর্শ ছেড়ে আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন। মন্ডল সভাপতি, অঞ্চল সভাপতি, বুথ সভাপতি আছেন। এরমধ্যে প্রায় ১০ জন গ্রামপঞ্চায়েতের সদস্য রয়েছেন।'
কুড়মিদের মূল দাবি, তপসিলি উপজাতি ভুক্তিকরণ। তাছাড়া কুড়মালি ভাষার স্বীকৃতি সহ একাধিক দাবি রয়েছে। উত্তর ২৪ পরগণা, নদিয়া, উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকায় মতুয়া সম্প্রদায় ভোট নির্ণায়ক বলে দাবি করে। মতুয়াদের সাংসদসহ বেশ কয়েকজন বিধায়ক আছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, দাবি আদায়ে কুড়মিরাও এবার ভোট ব্যাংকের দিকে নজর দিয়েছে। পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে কুড়মি সমাজ কি সিদ্ধান্ত নেয়, সেটাই দেখার।