Advertisment

৭ দিনে ৩৭ শিশুর মৃত্যু, বড়সড় প্রশ্নের মুখে হাসপাতালের পরিকাঠামো

হাসপাতালে একের পর এক শিশুর মৃত্যু। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জরুরি বৈঠকে স্বাস্থ্য আধিকারিকরা।নেওয়া হল একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Last seven days 37 child have died in North Bengal Medical College Hospital

একরত্তি শিশুর মৃ্ত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা। ছবি: সন্দীপ সরকার

করোনার তৃতীয় ধাক্কা নিয়ে আতঙ্ক জারি। এই আবহে এবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একদিনে মৃত্যু ৬ শিশুর। এই নিয়ে গত ৭ দিনে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মোট ৩৭ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ঘোর উদ্বেগে অভিভাবকরা। লাফিয়ে-লাফিয়ে শিশুর মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতরও। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় তড়িঘড়ি বৈঠকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে শুরু করে পদস্থ স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের চিকিৎসা পরিকাঠামোই বড়সড় প্রশ্নের মুখে।

Advertisment

গত ২৪ ঘন্টায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৬ শিশুর। এই হাসপাতালে চলতি সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৬টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সব মিলিয়ে গত ৭ দিনে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৩৭। শিশু মৃত্যুতে লাগাম টানতে কার্যত দিশেহারা দশা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই বেশিরভাগ শিশুর মৃত্যু ঘটছে। যে সব শিশু জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছে তারা প্রায় প্রত্যেকেই আক্রান্ত আর এস ভাইরাসে। এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক বলেন, "উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আর এস ভি তে আক্রান্ত হয়ে শিশুরা চিকিৎসার জন্য আসছে মেডিক্যাল কলেজে। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে রেফারের সংখ্যাও বেড়েছে। অনেক শিশুকেই সংকটজনক অবস্থায় আনা হচ্ছে হাসপাতালে। চিকিৎসা করার জন্য পর্যাপ্ত সময়ও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। তবুও শিশুদের চিকিৎসা করে সুস্থ করে তোলার সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে। শিশু মৃত্যু ঠেকাতে তৎপর রয়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।"

গত ২৪ ঘন্টায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৬ শিশুর। যদিও মৃত শিশুদের কেউই আর এস ভি তে আক্রান্ত ছিল না বলে দাবি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের। হাসপাতাল জানা গিয়েছে, ২৭ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে মৃত্যু হয় ৫টি শিশুর, ২৮ সেপ্টেম্বর ৪ শিশু, ২৯ সেপ্টেম্বর ৮, ৩০ সেপ্টেম্বর ৪, ১ অক্টোবর ৬ , ২ অক্টোবর ৪ এবং গত রবিবার মৃত্যু হয়েছে ৬ টি শিশুর। এইভাবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ চরমে পৌঁছেছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসার ডাঃ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, "আর এস ভি আক্রান্ত হয়ে শিশু মৃত্যুর পাশাপাশি মৃত্যু হচ্ছে সদ্যোজাত শিশুদেরও। জন্মের সময় শিশুদের ওজন কম হচ্ছে। অনেক শিশুরই সময়ের আগেই প্রসব করাতে হচ্ছে। সেই সব কারণেও বেড়েছে শিশু মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে।"

এদিকে, একের পর এক শিশু মৃত্যুতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা পরিকাঠামোকেই দায়ী করছেন অভিভাবকদের একটি বড় অংশ। মৃত এক শিশুর অবিভাবক বলেন, "হাসপাতালে ভর্তি করার সময় বাচ্চার শারীরিক অবস্থা ততটা খারাপ ছিল না। তাহলে কেন শিশুটি মারা গেল?" পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন ওই অভিভাবক। আর এক মৃত শিশু সুদীপ সরকারের বাবা রমানন্দ সরকার জানান, জ্বর ও সামান্য শ্বাসকষ্টের চিকিৎসার জন্য তিনি তাঁর শিশুকে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে রেফার করা হয় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। হাসপাতালের পিকু বিভাগে ভর্তি করার পরেও বেডে শুয়ে খেলা করছিল তাঁর শিশুটি। হঠাৎ করেই শিশুটির মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তাঁর পরিজনেরা। ওই ব্যক্তিও মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ এনেছেন।

এই বিষয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক জানিয়েছেন, বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে শিশুদের সংকটজনক অবস্থায় আনা হচ্ছে হাসপাতালে। চিকিৎসা করার পর্যাপ্ত সময়ও পাওয়া যাচ্ছে না। তবুও চিকিৎসায় কোনও গাফিলতি হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে লাগাতার শিশু মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য দফতরও। কিছুদিন আগেই কলকাতা থেকে এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল এসে পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলে গিয়েছেন। তারপরেও শিশুমৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত থাকায় উদ্বেগের পাশাপাশি আতঙ্ক বেড়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।

আরও পড়ুন- ৪ কেন্দ্রে উপনির্বাচন: প্রার্থী ঘোষণার আগেই নির্বাচন পরিচালন কমিটি গড়ল বিজেপি

শিশুর মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ ইন্দ্রজিৎ সাহা, মেডিকেল কলেজ সুপার ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক, ডিন অফ স্টুডেন্টস এফেয়ার্স ডাঃ সন্দীপ সেনগুপ্ত, সহকারী ডিন ডাঃ জগদীশ বিশ্বাস-সহ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় করোনা আক্রান্ত শিশুদের জন্য পৃথক ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হবে। কোভিড ব্লকেই তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। বাড়ানো হবে শিশু ও পিকু বিভাগের শয্যা। সেই সঙ্গে কিছু চিকিৎসা প্রণালী নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

siliguri north bengal Child death Children hospitalised
Advertisment