বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পর এবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাস বয়কট করলেন আইনজীবীদের একাংশ। এই আইনজীবীরা তৃণমূলপন্থী বলেই নিজের টুইটে দাবি করেছেন বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি। পাশাপাশি যোদপুর পার্ক এলাকাতে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা বিরোধী পোস্টারে ছয়লাপ। যোধপুরপার্ক এলাকাতেই থাকেন বিচারপতি মান্থা।
Advertisment
রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু আধিকারীর বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর করা যাবে না বলে রক্ষাকবচের নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। যার বিরুদ্ধে সরব হয় তৃণমূল। শাসক দলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সাধারাণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ সরাসরি তোপ দেগেছিলেন বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে। দাবি করেছিলেন, 'শুভেন্দু বেপরোয়া। পুলিশের বিরুদ্ধে যা নয় তাই কথা বলছেন। পুলিশকে মানছেন না। আইনশৃঙ্খলা পৈতৃক সম্পত্তি বলে মনে করছেন। তাঁর এই বেপরোয়া মনোভাবের কারণেই বুধবার সন্ধ্যায় আসানসোলে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা (কম্বল বিতরণের অনুষ্ঠানে পদপিষ্ঠ হয়ে তিন জনের মৃত্যু) ঘটেছে। এর জন্য একমাত্র দায়ী বিচারপতি রাজশেখর মান্থা। তবে বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমার সম্মান আছে।' বিচারপতির 'জ্যোতিষী' কিনা তা নিয়েও কুণাল ঘোষ প্রশ্ন তুলেছিলেন।
এবার হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশ বিচারপতি মান্থার এজলাস বয়কটের ডাক দিলেন। এদিন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার কলকাতা হাইকোর্টের ১৩ নম্বর এজলাসে বসার কথা। দেখা যায় সোমবার সকালে একাংশ আইনজীবী ওই ঘরের দরজা আড়াল করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। বিচারপতির এজলাস বয়কের ডাক দিচ্ছেন। যার বিরোধীতায় সরব হয়েছেন কিছু আইনজীবী। যা নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে শুরু হয়ে যায় হাতাহাতি, ধস্তাধস্তি। বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি সেই ভিডিও সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন।
Advertisment
টুইটে তরুণজ্যোতি লিখেছেন, 'টিএমসি লিগ্যাল সেল আবার ১৩ নম্বর এজলাস বয়কট করেছে। তারা আইনজীবীদের আদালতে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। টিএমসি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কোনও আদেশ দিতে বিচারপতি রাজশেখর মন্থাকে বাধা দিতে চায়।' শেষে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেণ রিজিজুকে উদ্দেশ্য করে তরুণজ্যোতি লিখেছেন, 'কিরেণ রিজিজুজি দয়া করে দেখুন। এভাবে বিচার বিভাগ চলতে পারে না।'
আদালতে যখন হুলস্থূল তখন দক্ষিণ কলকাতার যোধপুর পার্ক এলাকায় বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে পোস্টার পড়েছে। ওই এলাকাতেই থাকেন বিচারপতি। পোস্টারে বিচারপতি মান্থার ছবি দেওয়া হয়েছে, লেখা রয়েছে 'লজ্জা, বিচারব্যবস্থার নামে কলঙ্ক'। পোস্টারে বিচারপতি মান্থার ছাড়াও মোদী-অমিত শাহ ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্যালিকার ছবিও দেওয়া রয়েছে। বিচারের নানা দিক নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে পোস্টারে।রাতের অন্ধকারে এইসব পোস্টার সাঁটানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিচারপতির বাড়ির রক্ষীরা। প্রতিবেশীরাও মুখ খুলতে চাননি। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে লেক থানার পুলিশ।
বিচারপতি মান্থার বিরুদ্ধে পোস্টার।
সূত্রের খবর, পুরো ঘটনাকে অনভিপ্রেত বলে মনে করছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। অচলাবস্থা কাটাতে বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে ডেকে আলোচনার আবেদন জানাতে পারেন তিনি।