দুই তাপস-সুদীপ-সৌগত-মদন বিদ্রোহ-কটাক্ষে বেলাগাম, তৃণমূলের নয়া কৌশল?

সাম্প্রতিক সময়ে তৃণমূলের একাধিক নেতার নানা মন্তব্যে জল্পনা-বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে তৃণমূলের একাধিক নেতার নানা মন্তব্যে জল্পনা-বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

author-image
Joyprakash Das
New Update
leaders controversial speach, party not taking measures, is this a new strategy of tmc

তৃণমূলের নয়া 'কৌশল'-এর জল্পনা রাজনৈতিক মহলে।

'তৃণমূল একটু ওপেন চলে'। সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বের একটা বড় অংশের বাকযুদ্ধের পর এই মন্তব্য করেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই বিধায়ক তাপস রায় ও তাপস চট্টোপাধ্যায়ের বিদ্রোহে তৃণমূল তোলপাড়। একইসঙ্গে দলের সাংসদ সৌগত রায়, সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্রের নানা মন্তব্যে জল্পনা ছড়িয়েছে। কেনই বা প্রকাশ্যে এই বিদ্রোহ বা বাকযুদ্ধ? না একি শুধু রাজনৈতিক কৌশল? তা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে।

Advertisment

শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এরই মধ্যে দলের শীর্ষ নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলবন্দি। ওই মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলের পলাশিপাড়ার বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। এই সরকারের আমলের শিক্ষা দফতরের একাধিক শীর্ষ কর্তা জেলে। গরুপাচার কাণ্ডে বীরভূমের দোর্দণ্ডপ্রতাপ জেলা সভাপতিও জেলে। যদিও সাংসদ শতাব্দী রায় জানিয়ে দিয়েছেন অনুব্রত মণ্ডলের মতামত নিয়ে সংগঠন পরিচালনা করা হচ্ছে। বিশেষত শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতির তদন্তে আর কাদের নাম জড়াবে, আরও কোনও বিধায়কের নাম উঠে আসে কিনা তা নিয়ে জোর চর্চা চলছে দলের অন্দরমহলে।

রাজনৈতিক মহলের মতে, দুর্নীতি ইস্যুতে আদালতের নির্দেশ ও রায় এবং কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্ত নিয়ে সেভাবে বিরোধিতা করার জোরালো যুক্তি তৃণমূল কংগ্রেস পাচ্ছে না। ইতিমধ্যে বেআইনিভাবে প্রাপ্ত বহু মানুষের চাকরি চলে গিয়েছে। খাড়া ঝুলছে কয়েক হাজার চাকরিজীবীর উপরে। সরকারি ক্ষেত্রেও বিকল্প উদ্যোগ নেওয়ার পথ প্রায় বন্ধ। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এই পরিস্থিতিতে নিজেদের দলের নেতৃত্বের প্রকাশ্য বিবাদে সাধারণের দৃষ্টি সহজেই সেদিকে ঘুরে যাচ্ছে। ফোকাসের কেন্দ্র বদলে যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোনও সাংসদ বা বিধায়ককে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব শোকজ করেছে এমন খবর মেলেনি। অভিজ্ঞ মহলের মতে, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একই দলের নেতৃত্বের বাদানুবাদও পরোক্ষে লাভদায়ক হতে পারে।

আরও পড়ুন- ‘যেতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী’, খামারবাড়ি সাজানোয় ‘সরকারি তৎপরতা’-কে তুলোধনা শুভেন্দুর

Advertisment

দলে এই বিবাদের সঙ্গে বিজেপির নাম জুড়ে আছে। নিউটাউনে রাজ্য সরকারের বিজয়া সম্মিলনীতে স্থানীয় বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়কে পর পর দু'বছর আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এবারও তিনি নাম না করে নিশানা করেছেন বিজেপি ফেরত তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। ওই নেতা ২০২১-এর আগে দলনেত্রী মমতাকে বেগম বলেছেন, সেকথাও উল্লেখ করেছেন তাপস। উল্লেখ্য, দলের প্রাক্তন বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফিরেছেন পুরভোটের আগে। তাপসের প্রকাশ্যে কড়া আক্রমণের পর দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এখনও সেভাবে কোনও মন্তব্য করেনি। রাজনৈতিক মহলের মতে, নীরব থাকার অর্থ কি তাহলে সম্মতি প্রদান?

একই ভাবে বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় লাগাতার আক্রমণ শানিয়ে চলেছেন কলকাতা উত্তরের তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। নিজেদের এমন ভাবে বিদেশি কুকুর ও হাতি বলতে শুরু করেছেন যে বিজেপি কটাক্ষ করতে শুরু করেছে তৃণমূলে কি মানুষ নেই? তৃণমূলের প্রাক্তন ছাত্র-যুব নেতা তমোঘ্ন ঘোষ উত্তর কলকাতায় বিজেপি সভাপতি হওয়ার পরই নানা প্রশ্ন তুলে ধরেন তাপস রায়।

এক্ষেত্রেও তাপস সেই বিজেপি যোগে বিদ্ধ করেন দলীয় সাংসদকে। এই দুটি ঘটনায় আবার ময়দানে নেমে কটাক্ষ করতে শুরু করেন সৌগত রায় ও মদন মিত্র। এতদ সত্বেও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছে, তৃণমূল একটু ওপেন চলে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এসব নিয়ে এখন তেমন একটা মাথা ঘামাচ্ছে না দল। এবার দেখার বিষয় এই বাকবিকন্ডা কোথায় গিয়ে শেষ হয়।

Mamata Banerjee Sougata Roy Madan Mitra tmc