দক্ষিণবঙ্গে পুরসভার ৬টি ওয়ার্ডের উপনির্বাচনে সিপিএম ও কংগ্রেস একটি করে আসনে জয় পেয়েছে। বাকি চারটিতে জয়ী তৃণমূল কংগ্রেস। জয় তো দূরের কথা বিজেপিকে নামমাত্র ভোট পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। প্রবল তৃণমূল জমানায় যেখানে উত্তরবঙ্গের নির্বাচনে সবুজ আবিরের ঝড় উঠেছে সেখানে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে ব্যাপক লিড থাকা চন্দননগরের পুর আসনে ১৩০ ভোটে সিপিএম ধরাশায়ী করেছে তৃণমূলকে! এই আসনে বিজেপির ঝুলিতে মাত্র ৩৩।
পুরুলিয়ার ঝালদায় কংগ্রেস নেতা তপন কান্দু খুনের ঘটনায় তোলপাড় হয়েছে রাজ্য-রাজনীতি। ওই খুনের ঘটনার সিবিআই তদন্ত চলছে। ঝালদায় ২ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দেখা যায় ৭৭৮ ভোটে জয়ী হয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী মিঠুন কান্দু। মিঠুন সম্পর্কে তপনের ভাইপো। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন তপন কান্দু। এখানে গত পুরনির্বাচনের তুলনায় ৬ গুণ বেশি ভোটে জয় পেয়ে জয়ী মিঠুন। তৃণমূল প্রার্থী হারের জন্য দলীয় অন্তর্ঘাতকে দায়ী করেছেন।
দুই আসনে বিরোধী কংগ্রেস ও সিপিএমের ব্যাপক জয়, বিজেপির ৬ ওয়ার্ডে লজ্জাজনক ভোটের হারে ব্যাপক তাৎপর্য লক্ষ্য করছে রাজনৈতিক মহল। অভিজ্ঞ মহলের মতে, ঝালদার উপনির্বাচনের দিকে সকলের নজর ছিল। কিন্তু চন্দননগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২ বছর পর ভরা তৃণমূল জমানায় সিপিএমের বিপুল জয় লালবাহিনীকে কিছুটা উৎসাহ যোগাবে। বিশেষ করে ওই ওয়ার্ডে এক বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল বিপুল ভোটে এগিয়ে ছিল। সেখান থেকে ১৩০ ভোটের ব্যবধানে জয় নিশ্চয় বিশেষ গুরুত্ব দাবি করে। বিশেষ করে উপনির্বাচনে। এদিকে তৃণমূলের প্রার্থী নিয়ে কেউ কেউ অজুহাত খাড়া করতে চাইছেন।
রাজ্যে সাম্প্রতিক নির্বাচনে ভোটলুটের অভিযোগ করে আসছে বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেস। উপনির্বাচনে তো জয়ের আসা ছেড়ে দেওয়ায় সেভাবে লড়াইয়ের ময়দানেই দেখা যেত না বিরোধীদের। বিধানসভার উপনির্বাচনগুলিতে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট পাওয়া অভ্য়াস করে ফেলেছে তৃণমূল। আসানসোল লোকসভার উপনির্বাচনেও ৩ লক্ষের জয়ের ব্যবধান ছিল তৃণমূলের। পুরওয়ার্ডের উপনির্বাচন হলেও চন্দননগরের আসনে সিপিএম প্রার্থী অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের বিপুল জয় দাগ কেটেছে রাজনৈতিক মহলে।
ঝালদার ২ নম্বর ওয়ার্ডের দিকে কড়া নজর ছিল রাজনৈতিক মহল সহ রাজ্যেরই। ওই ওয়ার্ডের পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী শুধু অন্তর্ঘাতের কথাই বলেননি, একইসঙ্গে সম্মানজনক ভোট পাননি বলেও তাঁর আপশোষ। এটাও চিন্তায় ফেলেছে রাজনৈতিক মহলকে। উপনির্বাচনেও যে বিরোধীদের বিপুলভোটে জয় আসে তা দেখা গেল ঝালদার সঙ্গে চন্দননগরে। তবে উত্তর ২৪ পরগনার বাকি চার পুর আসনে সব দলই ধরাশায়ী হয়েছে। সিপিএম উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। তৃণমূল কংগ্রেস দমদম, ভাটপাড়া, পানিহাটি, দক্ষিণ দমদমের একটি করে ৪টি ওয়ার্ডে বিপুল জয় পেয়েছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, ছয়টি আসনে উপনির্বাচন হলেও ফলফলের তাৎপর্যতা রয়েছে। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি সব আসনেই কুপোকাৎ। দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসছে বামেরা।