Deocha Pachami: আদিবাসী তাণ্ডবে রণক্ষেত্র দেউচা-পাঁচামি, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন

Deocha Pachami: সিলিকোসিস রোগ নিয়ে কথা বলতে দেউচা-পাঁচামি যাওয়ার কথা ছিল সিলিকোসিস কো-অর্ডিনেশন কমিটি সহ বেশ কয়েকটি গণ সংগঠনের। প্রশাসনের অনুমতি নিয়েও বীরভূমে এসে খালি হাতে তাদের ফিরতে হল।

Deocha Pachami: সিলিকোসিস রোগ নিয়ে কথা বলতে দেউচা-পাঁচামি যাওয়ার কথা ছিল সিলিকোসিস কো-অর্ডিনেশন কমিটি সহ বেশ কয়েকটি গণ সংগঠনের। প্রশাসনের অনুমতি নিয়েও বীরভূমে এসে খালি হাতে তাদের ফিরতে হল।

author-image
Ashis Kumar Mondal
New Update
eocha pachami agitate

আদিবাসী তাণ্ডবে রণক্ষেত্র দেউচা-পাঁচামি, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন

Deocha Pachami: সিলিকোসিস রোগ নিয়ে কথা বলতে দেউচা-পাঁচামি যাওয়ার কথা ছিল সিলিকোসিস কো-অর্ডিনেশন কমিটি সহ বেশ কয়েকটি গণ সংগঠনের। প্রশাসনের অনুমতি নিয়েও বীরভূমে এসে খালি হাতে তাদের ফিরতে হল একই ট্রেনে। এমনকি আদিবাসীদের একাংশের বাধায় সিউড়ি স্টেশন থেকেই বের হতে পারলেন না তাঁরা। তবে স্রেফ স্টেশনেই নয়,  সিউড়ি থেকে পাঁচামী  যাওয়ার রাস্তায় আরও অনেক জায়গাতেই একই সময়ে নামানো হয়েছে শাসকের 'ভাড়াটে' বাহিনীকে। স্টেশন চত্বরে ছিল কেন্দ্রের আরপিএফ, ছিল রাজ্যের জিআরপি। উভয় বাহিনীই সক্রিয় ছিল সমাজকর্মীদের ফেরত পাঠাতে। অবৈধ ভাবে জমায়েত করা তৃণমূল বাহিনীকে সরানোর নুন্যতম উদ্যোগ দেখা যায়নি পুলিশের তরফে। তারা মরিয়া ছিল সমাজকর্মীদের ফেরত পাঠাতে। ট্রেন ছাড়ার মিনিট খানেক আগে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের জেলা শাসকের কাছে সাক্ষাতের কথা বলা হয়। পুলিশের এই চিত্রনাট্যে স্বভাবতই ক্ষুব্ধ প্রতিনিধি দল।

Advertisment

মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প দেউচা-পাঁচামি কয়লা প্রকল্প। কিন্তু সেই প্রকল্প নিয়ে আদিবাসীদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। আদিবাসী একাংশের বিক্ষোভের জেরে টানা তিনদিন প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। গাঁথা হয়েছিল ‘চরকা'। এরপরেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এরপরেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কয়লাখনি এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এমনকি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও কার্যত 'পায়ে বেড়ি' পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। কিন্তু তাতেও আদিবাসীদের ক্ষোভ প্রশমিত হয়নি। এর আগে মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধি দলকে আটকে দেওয়া হয়েছে আদিবাসীদের একাংশকে দিয়ে। এবার আটকানো হল সিলিকোসিস সহ বেশ কয়েকটি গণসংগঠনের প্রতিনিধিদের।

গুরুতর অভিযোগে নজিরবিহীন পদক্ষেপ! হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি গেল তৃণমূল নেতার

একাধিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সিলিকোসিস কো-অর্ডিনেশন কমিটির পক্ষ থেকে বুধবার সমাজকর্মীদের দল দেউচা-পাঁচামী প্রস্তাবিত কয়লা খনি এলাকার মানুষের খনি নিয়ে প্রকৃত অবস্থান জানতে এলাকায় যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সেই মত কলকাতা সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সিলিকোসিস কো-অর্ডিনেশন কমিটির ৪০-৫০ সদস্য সিউড়িতে আসেন। তাঁরা হাওড়া – সিউড়ি হুল এক্সপ্রেস ধরে সিউড়িতে পৌঁছন। সিউড়ি স্টেশনের বাইরে তখন তীর ধনুক হাতে আদিবাসীদের একাংশ তাদের পথ আটকায়। চলে অশালীন আচরন, কটুক্তি, হুমকি।  দীর্ঘক্ষন ধরে সমাজকর্মীদের সাথে তৃণমূলীদের চলে বাকবিতন্ডা, তর্কাতর্কি। শুধু আদিবাসীরাই নয়, অভিযোগ পুলিশও তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পথ আটকেছে। 

Advertisment

সিউড়ি স্টেশনে আন্দোলনরত আদিবাসীদের দাবি, তাঁরা দেউচা-পাঁচামি এলাকার আদিবাসী। তাঁরা কয়লাখনির কাজে বাধা সৃষ্টি করতে দেবেন না। দুপুর ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ ফের তাঁরা হুল এক্সপ্রেস ধরে ফিরে যান। সিলিকোসিস কো -অডিনেশন কমিটির সদস্য তপন চক্রবর্তী, তপন সাহারা বলেন, “আমরা জেলাশাসকের অনুমতি নিয়েই বীরভূম এসেছি। আমরা সিলিকোসিস রোগের উপর কাজ করি। রাজ্য সরকারের হয়ে কাজ করি। এই খোলামুখ কয়লা খনি হলে সিলিকোসিস রোগের প্রকোপ বেড়ে যাবে। সে বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে আমরা প্রকল্প এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের বর্তমান অবস্থা জানার চেষ্টা করেছিলাম। এরপর আমরা সিউড়ি ফিরে জেলা শাসকের সঙ্গে কথা বলতাম। কিন্তু আমাদের স্টেশনেই আটকে দিল কিছু ভাড়া করা আদিবাসী এবং পুলিশ। ওই আদিবাসীদের বাড়ি কোথায় আমরা জানি না।”

বারুইপুরে শুভেন্দুদের 'হেনস্থা', ক্ষুব্ধ হাইকোর্টের কী নির্দেশ পুলিশকে?

সিলিকোসিস কো-অর্ডিনেশন কমিটির পক্ষ থেকে সৌরভ চক্রবর্তী জানান, "আমরা পাঁচামির উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলাম এলাকার মানুষের সাথে কথা বলতে৷ স্টেশনেই বাধা দেওয়া হয়৷ ওখানে যে কয়লা, পাথর উঠবে৷ তা থেকে সিলিকোসিস রোগ হয়। এব্যাপারে কথা বলতাম এলাকার মানুষের সঙ্গে৷ পুলিশের সামনেই আমাদের আটকে দেওয়া হয়৷ এমনকি সিউড়িতে জেলাশাসকের দপ্তরে পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ আর তৃণমূলের বাহিনীর আচরনেও ছিল না কোনও ফারাক। পাঁচামীর মানুষ যদি স্বতস্ফূর্তভাবেই খনির পক্ষে থাকে তাহলে প্রশাসন-শাসকের এত ভয় কেন? তাছাড়া আমাদের বীরভূমে আসার কথা জানতেন শুধুমাত্র জেলা শাসক। তাহলে এই আদিবাসীদের জমায়েত করলেন কে? "

এদিন প্রতিনিধি দলে ছিলেন সিআইটিইউ, বিজ্ঞান মঞ্চ এআইটিইউসি, এডব্লিউবিএসআরইউ, আইএফটিইউ, এআইসিসিটিইউ, টিইউসিআই, টিইউসিসি, সিএসটিইউ, এসএএসএসসি, এআইএলইউ, এআইটিইউসি, নদী বাঁচাও জীবন বাঁচাও প্রভৃতির পক্ষ থেকে সুকান্ত কোনার, দীপঙ্কর চক্রবর্তী, আসাদুল্লাহ গায়েন, তপন সাহা, তপন দাস, সঞ্জয় দাস, সুগত রায় প্রমুখরা। আন্দোলনরত আদিবাসী শিবরাম হেমরম, নারায়ণ মূর্মুরা বলেন, “কিছু কিছু সংগঠন বাইরে থেকে এসে স্থানীয় আদিবাসীদের প্রকল্প নিয়ে ভুল বোঝাচ্ছেন। সেই জন্যই আমরা ঠিক করেছি শিল্প এলাকায় বহিরাগতদের প্রবেশ করতে দেব না”। 

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খোলা মুখ কয়লা খনি হতে চলেছে বীরভূমের দেউচা-পাঁচামি৷ কিন্তু, খনির প্রস্তাবের প্রথম দিন থেকেই এই এলাকার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ বিরোধিতা করে চলেছেন৷ প্রথম থেকেই বাসিন্দাদের স্পষ্ট বক্তব্য, এখানে খোলামুখ কয়লা খনি হলে প্রায় ২০ টি গ্রামকে অন্যত্র সরাতে হবে। গ্রামগুলিতে কমপক্ষে ২১ হাজার মানুষের বাস৷ যাদের মধ্যে অধিকাংশ আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম৷ এছাড়াও, ধ্বংস হবে প্রাকৃতিক পরিবেশ৷ ধ্বংস হবে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, জলাভূমি, চারণভূমি। জলস্তর নীচে নেমে যাবে প্রভৃতি। তাই প্রথম থেকেই জমি দিতে নারাজ আদিবাসীদের একটা বড় অংশ৷

Birbhum Dist police Birbhum