Abhijit Gangopadhyay on Mamata Banerjee: ১৩ বছরে আগে আরামবাগের তৎকালীন সাংসদ তথা দাপুটে CPM নেতা অনিল বসুর (Anil Basu) সেই সময়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সম্পর্কে একটি মন্তব্যে রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমতো ঝড় উঠেছিল। তখন রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন ছিল মাঝপথে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharjee) স্পষ্ট বলেছিলেন, "অনিল বসুর মন্তব্য একেবারে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।" কার্যত নির্বাচনী প্রচারে এই মন্তব্যে অনেকটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল সিপিএম। এবার তমলুকের BJP প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Abhijit Gangopadhyay) মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে মন্তব্য ফের রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল ফেলে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সন্দেশখালি-কাণ্ডে (Sandeshkhali) ভাইরাল হওয়া কয়েকটি ভিডিও নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই ভিডিওগুলো ভুয়ো বলে দাবি করেই ক্ষান্ত থাকেননি তমলুকের BJP প্রার্থী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে একাধিকবার ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণ করেছেন তিনি। প্রতিবাদে তৃণমূল কংগ্রেস টুইট করে বসে নেই। নির্বাচনী প্রচারেও এই মন্তব্য নিয়ে ঝড় তুলেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)।
তৃণমূলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন কড়া চিঠি দিয়ে শোকজ করেছে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনের আগে হুগলির সিপিএম নেতা অনিল বসু তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে মন্তব্য করে দলকে ঘোর বিপাকে ফেলেছিলেন। এবার নির্বাচন চলাকালীন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে বড় অস্বস্তিতে ফেলে দিল বলে মনে করছে রারজৈনিক মহল।
সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে চাপানউতোর চলছেই। সম্প্রতি সন্দেশখালির একাধিক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে দাবি করে টাকা নিয়ে সন্দেশখালির ঘটনার অভিযোগ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করে তৃণমূল কংগ্রেস। তা নিয়ে রাজ্য-রাজনীতি তোলপাড় হয়। তারপর পুলিশে অভিযোগ, গ্রেফতার, জামিন, নতুন করে সন্দেশখালিতে আন্দোলন-সহ নানা ঘটনা ঘটতে থাকে। এই আবহে হলদিয়ার চৈতণ্যপুরের এক জনসভায় সন্দেশখালি আন্দোলনের অন্যতম মুখ তথা বসিরহাটের বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রকে নিয়ে বক্তব্য রাখেন তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তারপরেই রাজ্য রাজনীতিতে আরেক নয়া বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে।
অন্য বারের মতো এবারেও নির্বাচনে শাসক বা বিরোধীদের রাজনৈতিক মন্তব্যের কুকথা নিয়ে সমালোচনা চলছে সর্বস্তরে। কিন্তু প্রাক্তন বিচারপতির এই মন্তব্য এতে নয়া সংযোজন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এমনকী বঙ্গ বিজেপির একাংশের বক্তব্য, "অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে এমন মন্তব্য করা উচিত হয়নি। বাংলায় ভোট ময়দানে যখন আমরা এগিয়ে তখন ফুলটোস বল দেওয়া দরকার ছিল না।"
আরও পড়ুন- Abhijit Gangopadhyay: অভিজিতে ভীষণ কড়া কমিশন! মমতাকে কটু-কথায় চূড়ান্ত কঠিন পদক্ষেপ
কী বলেছিলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়?
"২০০০ টাকায় রেখা পাত্রকে কেনা হয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? তুমি কত টাকায় বিক্রি হও? তুমি কত টাকায় বিক্রি হও? তোমার হাতে তো ৮ লক্ষ টাকা গুঁজে দিলে একটা চাকরি দাও। তোমার হাতে ১০ লক্ষ টাকা গুঁজে দেয়। রেশনকে হাওয়া করে দেয় অন্য দেশে। ভারতবর্ষেই থাকে না সেই রেশন। তোমার দাম ১০ লক্ষ টাকা কেন? তুমি কেয়া শেঠকে দিয়ে মুখ মেক আপ করো। মেক আপ করে বের হও। রেখা পাত্র গরিব মানুষ। লোকের বাড়িতে কাজ করে খায়। আমাদের প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সুন্দরী নন। একটু বেশি সুন্দরী। সেই জন্য রেখা পাত্রকে ২০০০ টাকায় কেনা যায়। একজন মহিলা আরেকজন মহিলা সম্পর্কে এই উক্তি করতে পারেন? তা আমরা ভাবতেও পারি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলা তো! আমার মনে প্রশ্ন জাগে মাঝে মাঝে। এই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল এখন ভুয়ো ভিডিও ছেড়েছে। হাজার হাজার মহিলা থানায় অভিযান করেছিলেন। তাঁদের সবাই কি টাকা নিয়েছিলেন।"
তাঁর এই বক্তব্যের তুলনা টানলেও বেশ কয়েকবার মমতাকে আক্রমণ নিয়েই বিতর্ক চরমে উঠেছে। (১) তুমি কত টাকায় বিক্রি হও? (২)তোমার দাম ১০ লক্ষ টাকা কেন? (৩) তুমি কেয়া শেঠকে দিয়ে মুখ মেক আপ করো। (৪) আমাদের প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সুন্দরী নন। (৫) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলা তো! আমার মনে প্রশ্ন জাগে মাঝে মাঝে। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যগুলি নিয়ে সোচ্চার তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের মতে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় এই বিষয় নিয়ে বক্তব্যে স্পষ্ট তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে নয়া ইস্যু যেন তুলে দেওয়া হল।
১৩ বছর আগে আরামবাগের (Arambag) সাংসদ অনিল বসু বলেছিলেন, "হাড়োয়াতে গত পরশু দিনের আগের দিন বক্তৃতা করেছে। কি বলেছে জানেন, বলেছেন আমাকে চেন্নাই থেকে, বেঙ্গালুরু থেকে বলেছিল টাকা নাও। আমি টাকা নিইনি। আমি বলেছি ঠিক কথাই বলেছে, সত্যি কথাই বলেছে। মমতাকে আমেরিকা টাকা দিচ্ছে। ও চেন্নাই, বেঙ্গালুরুর টাকা নেবে কেন। বড়বাবু জুটেছে ছোটো বাবুদের জায়গা নেই।" ২০১১ বিধানসভা নির্বাচনের মাঝপথে অনিল বসুর এই মন্তব্যে তোলপাড় হয়েছিল বঙ্গ রাজনীতি। একেই নির্বাচনে প্রবল চাপে ছিল বামফ্রন্ট, তার ওপর এমন অসংসদীয় মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল।
তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তারপরের দিনই বলেছিলেন, "আমি শুনেছি। তিনি কালকে একটি সভাতে যে কথা বলেছেন ভদ্রতা, শালীনতার কোনও ধার ধারেননি। এটা কমিউনিষ্ট পার্টির একজন নেতার মন্তব্য ভাবা যায় না। আমি তাঁকে কি বলব। আমি পার্টির সহকর্মীদের বলেছি তাঁকে এখনই সতর্ক করুন। যেন তাঁর মুখ থেকে এই ধরনের ভাষা আর শুনতে না হয়। একেবারে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ।"