Lok Sabha Elections 2024: ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচন, তারপর ২০২১-এ বিধানসভা নির্বাচন, টোটোদের উন্নয়নের সামগ্রিক যা পরিস্থিতি ২০২৪-এ তার তেমন কোনও হেরফের হয়নি। বরং পড়াশোনা জানা ছেলেরা বাইরে চলে যাচ্ছে শ্রমিকের কাজ করতে। কর্মসংস্থানের দাবি নিয়ে এখনও সোচ্চার বিশ্বের অন্যতম ক্ষুদ্রতম জনসংখ্যার জনজাতি। টোটো ভাষার নয়া হরফ আবিস্কার করে পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছেন ধনীরাম টোটো। তিনিও সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন।
২০১৯ ও ২০২১ সালে টোটোদের গ্রামে গিয়ে দেখা হয়েছিল ধনীরাম টোটো ও তাঁর ছেলে ধনঞ্জয় টোটোর সঙ্গে। এই গ্রামে প্রথম এমএ পাশ ধনঞ্জয়। অন্যদিকে দীর্ঘ দিন ধরে টোটোদের লেখার হরফ নিয়ে গবেষণা করছিলেন ধনীরাম। গতবছর ২০২৩-এ টোটো হরফ আবিষ্কারের স্বীকৃতি স্বরূপ পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন ধনীরাম টোটো। এবার নির্বাচন কমিশন তাঁকে আলিপুরদুয়ারের নির্বাচনী আইকন হিসাবে বেছে নিয়েছে। তবে পড়াশোনার মানোন্নয়নে যে টোটোরা পিছিয়ে রয়েছেন সেকথা বলছিলেন ধনীরাম টোটো। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ টোটো ছেলেরা শ্রমিকের কাজ করতে বাইরে চলে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন ধনীরাম। ২০১৬-এ লাইব্রেরি সায়েন্সে এমএ পাশ করেছিলেন ধনঞ্জয়। এখনও চাকরি জোটেনি তাঁর। টোটোরা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পেরে উঠছেন না বলে জানিয়েছেন ধনীরাম। এক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম ক্ষুদ্র জনজাতির বিশেষ সংরক্ষণের দাবি করছেন টোটোরা।
টোটোপাড়া যাওয়ার যাত্রাপথ অতি মনোরম। একাধিক পাহাড়ি নদী পেরিয়ে যেতে হয় টোটোপাড়া। দূর থেকে ভূটানের পাহাড় যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। হাউড়ি নদীর পাশে ভূটানের কোলে এই টোটোপাড়ার অবস্থান। এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা সুপারি গাছের কারবার। হাতির আক্রমণের ভয়ে অনেক ক্ষেত্রেই বাড়ি উঁচু করে তৈরি করা। কারও আবার পর্যটকদের জন্য হোম-স্টের ব্যবসাও রয়েছে। এখন টোটোপাড়ায় অন্য জাতির বসবাসও ক্রমশ বাড়ছে। মাত্র ১৬০০ জনসংখ্যার টোটোরা নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে মরিয়া। বিভিন্ন লোকাচার ও সংস্কৃতি এখনও তাঁদের বজায় রয়েছে। যা তাঁদের অন্যদের থেকে পৃথক অবস্থান বজায় রেখেছে।
ধনীরাম টোটো ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "আমি চাইছি চাকরির ক্ষেত্রে টোটোদের বিশেষ সংরক্ষণ। ভাষা পড়তে হয় তাগিদের ভিত্তিতে। আমি চাই সবার ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করার ব্যবস্থা হোক। রাস্তা, পোল, কালভার্ট হয়েছে। উন্নযনের জন্য সরকার যত্নশীল। আগামী ২০ বছরের জন্য টোটোদের বিশেষ সংরক্ষণ করা দরকার। আমাদের প্রতিযোগিতায় না রেখে চাকরিতে সংরক্ষণ করা হোক। এখানে আর্মি, পুলিশে কেউ কেউ যোগ দিয়েছে। প্রতিযোগিতায় যাওয়ার মতো সুবিধাজনক অবস্থায় টোটোরা নেই। ভূটানে কাজ করতে যেত। এখন সিকিমে চলে যাচ্ছে। পড়াশোনা করার পরও। মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে হতাশজনক পরিস্থিতি হচ্ছে। তাঁরা কর্মক্ষেত্রে ঢুকে পড়ছে। মিডিয়াম বাংলা বলে প্রতিযোগিতায় অন্যদের সঙ্গে পারছে না। এখানে স্কুলে পড়াতে এসে কয়েক বছর পর ট্রান্সফার নিয়ে নিচ্ছে। সমস্যায় পড়ছে ছাত্র-ছাত্রীরা।
আরও পড়ুন Premium: এখনও দগদগে বীভৎস স্মৃতি! ব্ল্যাকবোর্ডে গুলির গর্ত মনে করাচ্ছে অসহনীয় ‘যন্ত্রণা’র কালো দিন
টোটোদের মধ্যে ধনঞ্জয় টোটো প্রথম এমএ পাশ করেছিল, লাইব্রেরি সায়েন্সে স্নাতকোত্তর। এবার আরও একজন ইতিহাসে স্নাতকোত্তর হয়েছে। ধনঞ্জয়ের কথায়, "আগে প্রথম বিএ পাশ ও প্রথম মহিলা পাশ করাকে চাকরি দিয়েছে সরকার। বছরে কতজন আর মাধ্যমিক বা কলেজ পাশ করে। দাদারা পড়াশোনা করেছে চাকরি পাচ্ছেন না। এই পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে অনেকে সিকিম চলে যাচ্ছে শ্রমিকের কাজ করছে। পাথর ভাঙছে, বালির বস্তা বইছে। এছাড়া বেঙ্গালুরু, চেন্নাই-সহ দেশের নানা স্থানে এখন কাজের সন্ধানে ছুটছে টোটোরা। এই গ্রামে সরকারি লাইব্রেরির কর্মী গত ডিসেম্বরে অবসর নিয়েছেন। তারপর থেকে সেই পদে কোনও নিয়োগ হয়নি। অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে লাইব্রেরি। সেই পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য সরকারি দফতরে ছোটাছুটি করেছেন ধনঞ্জয়। তাতে কোনও কাজ হয়নি বলে জানিয়েছেন বছর ৩৫-এর ধনঞ্জয়।
আরও পড়ুন Premium: আশ্বাসে আর মন গলে না! হাজারো উপেক্ষা সয়ে এযেন ‘মুক্তিযুদ্ধ’ জারি বাংলার এই প্রান্তে!
বর্ষার সময় টোটোরা অনেকে ক্ষেত্রে গৃহবন্দি হয়ে পড়ে। বাইরের জগৎ থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে টোটোপাড়া। বর্ষায় পাহাড়ী একাধিক খরস্রোতা নদী পেরিয়ে যেতে হয় টোটোপাড়ায়। গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এখনও দুটি সরকারি বাস যাতায়াত করে টোটোপাড়ায়। ২৫ বছরের মনোজিৎ টোটো বলেন, "এমনও হয়েছে বর্ষায় ১৬ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে গ্রামে আসতে হয়েছে। নদীগুলিতে সেতু নির্মাণ করতে হবে। চাকরিতে বিশেষ সংরক্ষণ চাই।" স্নাতক মনোজিৎ চাকরি পরীক্ষা দিয়ে চলেছেন। তাছাড়া টোটোপাড়া ও তাঁদের সমাজের আরও উন্নয়ন প্রয়োজন বলে মনে করেন মনোজিৎ। নিজেদের ভূমি ছেড়ে অন্যত্র শ্রমিকের কাজ করতে চলে যাওয়া এখন টোটোদের সব থেকে বড় আফশোস। পদ্মশ্রী পুরস্কার পেলেও জাতির উন্নয়নে সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে বিশেষ সংরক্ষণের দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে টোটোদের।