Lok Sabha Elections Results 2024: রাজ্যের দুই দলের দুই "রবিনহুড" নেতা এবার ভূপতিত। কেন পরাজিত হলেন এই দুই প্রতাপশালী নেতা? পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে তাঁরা নিজেদের আগের বারের ভোট ধরে রাখতে পারেননি। বহরমপুরের প্রাক্তন সাংসদ অধীর চৌধুরীর তো প্রতি নির্বাচনেই শতাংশ হিসাবে ভোট কমেছে। ভোট কমেছে ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংয়েরও।
২০১৯-এ বহরমপুরের কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরী পেয়েছিলেন ৫,৯১,১৪৭টি ভোট। মোট প্রদত্ত ভোটের ৪৫.৪৭ শতাংশ পেয়েছিলেন অধীর। ওই নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব সরকার পেয়েছিলেন ৫,১০,৪১০টি ভোট অর্থাৎ প্রদত্ত ভোটের ৩৯.২৬ শতাংশ। চলতি নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কমে গিয়েছে অধীর চৌধুরীর। এবার তিনি পেয়েছেন ৪,২৯,৪৯৪টি ভোট। মাত্র ৩১.৭৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। তাঁর ভোট কমেছে ১৩.৭৩ শতাংশ। কার্যত এই ভোট পড়েছে বিজেপি প্রার্থীর ঝুলিতে।
গতবারের তুলনায় মোট ভোট বাড়লেও শতাংশ হিসাবে সামান্য হলেও তৃণমূলের ভোট কমেছে। তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠান পেয়েছেন ৫,২৪,৫১৬টি ভোট। অর্থাৎ ৩৭.৮৮ শতাংশ ভোট। গত লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় তৃণমূলের কমেছে ১.৩৮ শতাংশ ভোট। অন্যদিকে ২০১৯-এ বিজেপি প্রার্থী ১১ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। এবার বিজেপি পেয়েছে ২৬.৮৬ শতাংশ ভোট। শতাংশের হিসাবে বেড়েছে ১৫.৮৬ শতাংশ ভোট। গতবারের থেকে ভোট তো বাড়েনি বরং ২০১৯-এ অধীরের প্রাপ্ত ভোট এবার গিয়ে পড়েছে বিজেপিতে। এবার ৮৫,০২২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন অধীর। ২০১৯-এ জয়ী হয়েছিলেন ৮০,৬৯৬ ভোটের ব্যবধানে।
আরও পড়ুন Modi Cabinet 3.0: কেন শান্তনু-সুকান্তই মন্ত্রী হলেন? বঙ্গ BJP নতুন ‘কাঁধে’! সুকান্তর পর এবার কে?
এমনকী যে বহরমপুর অধীর চৌধুরীকে বড় লিড দেয় সেই বিধানসভায় এবার অধীর পেয়েছেন মাত্র ৮৩,৪০১টি ভোট। গতবার বহরমপুর ঢেলে ভোট দিয়েছে অধীরকে। কংগ্রেস বহরমপুর থেকে ভোট পেয়েছিল ১,৩০,১৯০টি। বিজেপি গতবার পেয়েছিল মাত্র ২৫,১৬৫টি ভোট, এবার বিজেপি পেয়েছে ৭৬,৪৩৪টি ভোট। তৃণমূল এখানে পেয়েছিল ৪১,১২৯টি ভোট, এবার ভোট বেড়ে হয়েছে ৪৬,৯৯৪টি। ২০১৯-এ এই বিধানসভার লিডেই বাজিমাত করেছিলেন অধীর চৌধুরি। সেক্ষেত্রে সংখ্যালঘু ভোট অধীরের কমেছে একথা জোর দিয়ে বলা যায় না। মনে করা হচ্ছে অধীরের বেশির ভাগ ভোট এবার পেয়েছে বিজেপি প্রার্থী। আর বহরমপুরের বিধায়কও বিজেপির।
২০০৯ ও ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে অধীর চৌধুরি ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। ২০০৯-এ অধীর পেয়েছিলেন ৫৬.৯১ শতাংশ ভোট। ২০১৪ সালে তা ছিল ৫০.৫৪ শতাংশ। ৬.৩৭ শতাংশ ভোট কমে গিয়েছিল ২০০৯-এর থেকে।
এদিকে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের দাপুটে বিজেপি নেতা অর্জুন সিং গত ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে ভোট পেয়েছিলেন ৪,৭২,৯৯৪টি। শতাংশ হিসাবে ৪২.৮২। তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী পেয়েছিলেন ৪,৫৮,১৩৭টি ভোট। অর্থাৎ ৪১.৪৮ শতাংশ ভোট। এবার ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে অর্জুন সিং ভোট পেয়েছেন ৪,৫৫,৭৯৩টি। অর্থাৎ ৩৯.৯২ শতাংশ ভোট। অর্জুন সিং গতবারের তুলনায় ২.৯০ শতাংশ ভোট কম পেয়েছেন। অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের পার্থ ভৌমিক ৫,২০,২৩১টি ভোট পেয়েছেন। ৪৫.৫৬ শতাংশ। তৃণমূলের ৪.০৮ শতাংশ বেড়েছে। অর্জুন সিং ২০১৯-এ জিতেছিলেন ১৪,৮৫৭ ভোটের ব্যবধানে। এবার ৬৪,৪৩৮ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন পার্থ ভৌমিক। এখানে সিপিএম প্রার্থীর ভোট কমেছে ১.০৩ শতাংশ।
অধীর চোধুরি বা অর্জুন সিংদের মোট ভোট বৃদ্ধি দূরে থাক আগের ভোটই ধরে রাখতে পারেননি। ৫ বছরে দুই কেন্দ্রেই ভোটারও বেড়েছে। অর্জুন সিংয়ের নির্বাচন এলেই দলবদল ব্য়ারাকপুর শিল্পাঞ্চলের মানুষ ভাল ভাবে নেননি বলেই রাজনৈতির মহলের ধারণা। তাছাড়া দুই নেতারই জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাঁটা পড়েছে বলেও মনে করছে অভিজ্ঞ মহল। তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী কৌশলের কাছে দুজনকেই নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে।