২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ব্যাপক আসন কমে গিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের। পর্যবেক্ষক মহল এর জন্য ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরিস্থিতিকে অনেকাংশে দায়ী করেছিল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা-অশান্তি নিয়ে পরবর্তীতে আক্ষেপ করতে শোনা গিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের গলায়। রাজনৈতিক মহলের মতে, আগামী ২০২৪-এ লোকসভার নির্বাচন। তার আগে এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ২০১৮-এর প্রতিধ্বনী। আগামী লোকসভার নির্বাচন আর একবছরও বাকি নেই। তাহলে কী লোকসভা ভোটে ফের বড় চ্যালেঞ্জের মুখে তৃণমূল কংগ্রেস? সেই প্রশ্নই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শান্তির পঞ্চায়েত ভোটের আশ্বাস দিয়েছিলেন। ২০১৮-এর ভোট নিয়ে অস্বস্তির কথা শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখেও। এবারে আদালত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছিল শান্তিতে ভোটের জন্য়। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে আবেদনে নির্বাচন কমিশনের গরিমসি ছিল। আবার আবেদনের পর বাহিনী রাজ্যে পাঠাতে ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কচ্ছপগতি। হাজার হাজার বুথে সিভিক পুলিশ, কনস্টেবল, রাজ্যপুলিশ। রাজ্য নির্বাচন কমিশন তো জানিয়ে দিয়েছে মোটের ওপর নির্বিঘ্নেই ভোট হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন এখনও পর্যন্ত ব্যাপক হিংসা, অশান্তির ঘটনা স্বীকার করেছে বলে শোনা যায়নি। তবু বুধবার সকাল পর্যন্ত ৪৫জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, জখম বহু।
এদিকে ভোট গণনার দিন রাতে শুধু ভাঙড়েই দুজন আইএসএফ ও একজন তৃণমূল কর্মী খুন হয়েছে। রায়দিঘিতে এক তৃণমূল সমর্থকের দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মালদায় কংগ্রেস কর্মী খুন। অর্থাৎ গণনা সম্পূর্ণ না হতেই আরও ৫ জন খুন। ভাঙড়েই উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক আহত হয়েছেন। বহু গণনা কেন্দ্রে বিরোধীদের হুমকি দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তৃণমূল কংগ্রেস ও পুলিশ-প্রশাসনকেও এবিষয়ে দায়ী করেছে বিরোধীরা। গণনা নিয়ে রাজ্যজুড়েই বিস্তর অভিযোগ বিরোধীদের। এদিকে পঞ্চায়েত শেষ হতেই লোকসভা ভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দেবে রাজনৈতিক দলগুলি।
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এরাজ্যে বিজেপি ২ থেকে ১৮টি লোকসভার আসনে জয় পেয়ে চমকে দিয়েছিল। তৃণমূলের ৪২-এ-৪২ স্লোগান থমকে গিয়েছিল ২২-এ। এবারেও পঞ্চায়েত নির্বাচন ঝঞ্জাটমুক্ত হতে পারল না। মানুষের রায় ফলে প্রকাশ পায়নি বলে বিরোধীরা অভিযোগ করছে। যদিও তৃণমূলের বক্তব্য, সাধারণের বিপুল জনসমর্থন বিরোধীরা মানতে পারছে না। তাই মিথ্যা অভিযোগ করছে। কিন্তু এবারেও মনোনয়ন থেকে গণনা পর্যন্ত ঘটনাবলী আগামী লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আরও পড়ুন- নিয়োগ দুর্নীতি মামলা: ইডি-র তদন্তকারী দলে বিরাট রদবদল, পঞ্চায়েত শেষে কোমর বাঁধছে এজেন্সি
অভিজ্ঞমহলের পর্যবেক্ষণ, ২০১৮-এর সুর শোনা গেল ২০২৩-এ, আবার ২০১৯-এর প্রতিধ্বনী হওয়ার সম্ভাবনা হতে পারে ২০২৪-এ। তবে রাজনৈতিক দলগুলি এবার কৌশলে কি বদল আনে তা-ও দেখার। পঞ্চায়েত ভোটের 'অরাজকতার' কথা বিরোধীরা তুলে ধরবে লোকসভার প্রচারে। শীঘ্রই রাস্তায় নামার কথাও বলেছে তাঁরা। এদিকে তৃণমূল কংগ্রেস বিধানসভা ও পঞ্চায়েতের ফলের ধারা লোকসভায় ধরে রাখাতে পারে কিনা সেটাও লক্ষ্য করার বিষয়। ঘাসফুল শিবির নয়া কি রাজনৈতিক কৌশল নেয় সেদিকে নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের।