Advertisment

সামনে সব রাস্তাই এখন খোলা, বলছেন মদন মিত্র

মদন এদিন কটাক্ষ করে বলেন, নন্দীগ্রাম বিক্রি করে তৃণমূলের অনেক নেতাই অনেক কিছু হয়েছেন। কিন্তু তিনি কখনও নন্দীগ্রাম বিক্রি করেননি। রাজনাতিক মহলের একাংশের মত, মদনের এই কটাক্ষের অভিমুখ্য শুভেন্দু।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

রামের পুজো বাতিল করলেন মদন

ফেসবুক লাইভে ফের স্বমহিমায় মদন মিত্র। শনিবার রাতে প্রায় ৫০ মিনিটের ফেসবুকে লাইভে তাঁর তোপের মুখে পড়লেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কখনও ২০১৬ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের জন্য তিনি দায়ি করলেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে, কখনও সাম্প্রতিক কাটমানি বিতর্ক নিয়ে ছুঁড়ে দিলেন কটাক্ষ। কখনও আবার স্পষ্ট অভিযোগ, "নন্দীগ্রামে বেচে আমরা অনেকেই অনেক কিছু হয়েছি।"

Advertisment

ইতিমধ্যে তৃণমূলের অন্দরে জল্পনা শুরু হয়েছে প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রীর এই ফেসবুক লাইভকে কেন্দ্র করে, যেখানে তিনি দাবি করেছেন, তৃণমূলে সঠিক মূল্যায়ণ হয় না।তাঁর কথায়, "আমি এখন চাররাস্তার মোড়ে। সব রাস্তাই খোলা আছে।"

আরও পড়ুন, ‘দিদি, জয় শ্রীরাম’, অনলাইনে বিকোচ্ছে এই টি-শার্ট

লাইভের শুরুতেই মদন এনেছেন কাটমানি এবং সিবিআই-এর হাতে তাঁর গ্রেফতারির প্রসঙ্গ। তাঁর কথায়, "আজ সকালেই দেখলাম কারা যেন কাটমানি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করছে। তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে নানা রকম দুর্নীতির অভিযোগ জানাচ্ছে। দেখে খারাপ লাগল। আমি মদন মিত্র। কাউন্সিলর-টাইন্সিলর নয়। এমএলএ, মন্ত্রী ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ ওঠেনি। সিবিআই আমাকে গ্রেফতার করে ২২ মাস জেলে রেখেছিল। কিন্তু কোনও অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। ওরা এখনও আমার নামে চার্জশিটও দিতে পারেনি। আমার বিরুদ্ধে একটাই অভিযোগ করেছিল, আমি নাকি প্রভাবশালী!"

এরপর মদন সরাসরি তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তাঁর দাবি, রাজ্য সরকারের জন্যই ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে লড়ার সময় তিনি প্যারোল পাননি। তাঁর কথায়, "আমি ৪৩ বার প্যারোলের জন্য আবেদন করেছিলাম। এই রাজ্য সরকার, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যার মুখ্যমন্ত্রী, তাদের কারা দফতর আমায় প্যারোল দেয়নি। আমি প্রথমে জানতাম নির্বাচন কমিশন প্যারোল দেয়। সেই অনুযায়ী আবেদন করেছিলাম। কিন্তু পরে জানতে পারলাম, প্যারোল দেওয়ার অধিকারী রাজ্য সরকার। তখন কারামন্ত্রী ছিলেন হায়দার আজিজ সফি। তিনি এখন বেঁচে নেই। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা তো মিথ্যা হয়ে যায় না। আমার প্যারোলের আবেদন চেপে দেওয়া হয়েছিল। হয়তো মুখ্যমন্ত্রীও জানতেন না আমাকে এভাবে প্যারোল না দিয়ে হারিয়ে দেওয়া হয়েছিল।"

আরও পড়ুন, ৬ মাসের আগেই মমতা সরকার ফেলার ব্যবস্থা করছি: অর্জুন সিং

মদন দাবি করেন, ছত্রধর মাহাতো তাঁকে বলেছিলেন, মাওবাদী হওয়া সত্ত্বেও ২০১১ সালের নির্বাচনের সময় তিনি ১৫ দিনের প্যারোল পেয়েছিলেন। এরপর প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রীর আক্ষেপ, "আমি একবারও প্রচারে যেতে পারিনি। ভোট দিতে পারিনি। ওই এলাকায় কিছু চোরচোট্টা ছিল, নোংরামি হয়েছিল। তা সত্ত্বেও মাত্র ১৮০০ ভোটে হেরেছিলাম। প্যারোল যদি পেতাম ওই আসনে আমিই জিততাম।"

এদিনের ফেসবুকে লাইভে সরাসরি দলের নেতৃত্বের একাংশের নাম করে তোপ দাগেন মদন। তিনি জানান, সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অপরূপা পোদ্দার, ফিরহাদ হাকিম, কাকলী ঘোষ দস্তিদার-সহ অনেকের নামই সারদা কাণ্ডে জড়িয়েছে। কিন্তু সিবিআই-এর বোঝা তাঁদের কাউকেই বইতে হয়নি। বলির পাঁঠা করা হয়েছে মদন মিত্রকেই। তাঁর কথায়, "তৃণমূল ভবনে অনেকেই আমাকে বলছেন, তাঁদের নামে সিবিআই আছে, কিন্তু মানুষ বিশ্বাস করেনি, তাঁরা জিতেছেন। আরে সিবিআই-এর বোঝা আমি ছাড়া আর কে বহন করেছে! আমাকেই বলির পাঁঠা করা হয়েছে।"

আরও পড়ুন, ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় বেদম মার, অভিযোগ এবার ক্যানিং লোকালে!

এরপরই তাঁর ইঙ্গিতবাহী মন্তব্য, "আমি একটা চৌরাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। সব রাস্তাই আমার সামনে খোলা আছে। কিন্তু আমি তো মদন মিত্র। আমি কামারহাটিকে সেলাম জানাব। আরেকবার পরীক্ষা হোক না জনপ্রিয়তার! আমি চ্যালেঞ্জ নিতে রাজি।"

মদন এদিন কটাক্ষ করে বলেন, নন্দীগ্রাম বিক্রি করে তৃণমূলের অনেক নেতাই অনেক কিছু হয়েছেন। কিন্তু তিনি কখনও নন্দীগ্রাম বিক্রি করেননি। রাজনাতিক মহলের একাংশের মত, মদনের এই কটাক্ষের অভিমুখ্য শুভেন্দু। প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী এদিন আরও অভিযোগ করেন, তাঁদের দলের সব নেতারা নিজের বাড়ির কেন্দ্রে বা তার ৫-১০ কিলোমিটারের মধ্যেই দাঁড়ান। কিন্তু তাঁকে সবসময় দূরে দূরে পাঠানো হয়। কখনও বিষ্ণুপুর, কখনও কামারহাটি, কখনও আবার ভাটপাড়া। নিজের জনপ্রিয়তা বোঝাতে মদন বলেন, "দশ বছরের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী ভাটপাড়া বিধানসভায় ৩১ হাজার ভোটে হেরেছেন। কিন্তু মাত্র ১৩-১৪ দিনের প্রচারে আমি আমি ওঁর চেয়ে ১০ হাজার ভোট বেশি পেয়েছি। কিন্তু এসবের কোনও মূল্যায়ণ হয় না।"

লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই মদনের বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "নোংরামি শুরু হয়েছে। খালি চুপিচুপি কথা, খালি চুকলিবাজি। বলা হচ্ছে, মদন মিত্র নাকি চলে যাবে। আরে আমি মদন মিত্র! কোথাও গেলে লুকিয়ে যাব না, মেহবুবা ব্যান্ড বাজিয়ে যাব।"

tmc Madan Mitra
Advertisment