মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০১৯-এর প্রথম দিন, অর্থাৎ ১২ ফেব্রুয়ারি, পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই বাংলা প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর প্রতিদিন ইংরেজি, ভূগোল, অঙ্ক, সব প্রশ্নপত্রই পরীক্ষা শুরুর কিছু সময়ের মধ্যেই প্রকাশ হয়ে পড়ার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিধাননগর পুলিশের সাইবার সেলে অভিযোগ জানায় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সে ঘটনারই তদন্তভার হাতে নেয় সিআইডি। তদন্ত এখনও চলছে। আজও ফাঁস হয়েছে অঙ্কের প্রশ্নপত্র।
এর আগে জানা যায়, রবিবার হোয়াটসঅ্যাপে প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। একইসঙ্গে দু’জন মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকেও আটক করা হয় বলে সিআইডি সূত্রে জানা যায়। এখন জানা যাচ্ছে, তিনজন নয়, দুজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি, পাশাপাশি রয়েছে ওই দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। চারজনেই পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারির মামুন ন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র। রবিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইডি।
মাধ্যমিক পরীক্ষা ২০১৯-এর প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিলেন মেমারির মামুন ন্যাশনাল স্কুলের প্রধানশিক্ষক মহম্মদ সানাউল্লা মণ্ডল। এই স্কুলেরই চার ছাত্রকে এই মামলায় গ্রেফতার করেছে সিআইডি #madhyamikexam #wbbse #madhyamikpaperleak pic.twitter.com/GINtPsOiKS
— IE Bangla (@ieBangla) February 18, 2019
সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ধৃত শাহাবুল আমির (১৮) ও শাহবাজ মন্ডল (১৮) এবং দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখত। এবং ওই গ্রুপেই আপডেট হয়ে যেত প্রশ্ন ও উত্তর। শাহাবুলের বাড়ি মালদার কালিয়াচকে, ও শাহবাজের বাড়ি বর্ধমানে কাটোয়ার কৈথনে। দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর মধ্যে একজনের বাড়ি কালিয়াচকে, ও আরেকজনের বাড়ি হুগলির পান্ডুয়ায়। ধৃতরা সকলেই মামুন স্কুলের আবাসিক বলে জানা গেছে।
'খোকা ৪২০' নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখত। গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৫০। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রয়োজনে অন্যদের জেরা করা হবে বলে সিআইডি সূত্রে জানা গেছে। ধৃত দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মেমারির বাগিলা উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে পরীক্ষা দিচ্ছিল। মেমারির যে লজে থেকে তারা পরীক্ষা দিচ্ছিল, সেখান থেকেই তাদের গ্রেপ্তার করে সিআইডি। তাদের জেরা করে মেলা তথ্যানুসারে মামুন স্কুলের হস্টেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শাহাবুল ও শাহবাজকে।
আরও পড়ুন, মাধ্যমিকের বজ্র আঁটুনি? এতটাই যে চোখে দেখা যায় না?
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ সানাউল্লা মন্ডল জানিয়েছেন, "কয়েক মাস আগেই স্কুলের নিয়ম না মানায় স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হয় ওই দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে। শুধুমাত্র তাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদের মাধ্যমিকে বসার অনুমতি দেওয়া হয়।ধৃত ছাত্রদের মধ্যে কেউ বা কারা প্রশ্নফাঁস চক্রে জড়িত কিনা জানা নেই। যদি হয়, তাহলে আইন মোতাবেক তাদের শাস্তির দাবী করছি। তবে কেউ নিরপরাধ হলে সেটাও যেন তদন্ত করে দেখা হয়।" স্কুলে মোবাইল ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। স্কুলের তরফে নিয়মত অভিযানও চালানো হয়, তা সত্ত্বেও ধৃতদের কাছ থেকে কীভাবে মোবাইল পাওয়া গেল, তা কিছুতেই বুঝতে পারছেন না স্কুল কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, একের পর এক প্রশ্নপত্র ফাঁসের ফলে রাজ্য জুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এমনকি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে হয়। তার পরে সিআইডির এই সাফল্যে জট অনেকটাই কাটবে বলে আাশাবাদী শিক্ষামহল। মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরুর আগে নির্দেশিকা জারি করা হয়, যে পরীক্ষার্থীরা তো বটেই, পরিদর্শকরা পর্যন্ত পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকতে পারবেন না। বলা হয়েছিল, স্কুলে ঢোকামাত্র ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের কাছে মোবাইল জমা রাখতে হবে সকল শিক্ষককে। পরীক্ষা চলাকালীন মোবাইল ফোন সুইচ অফ করে রাখার নির্দেশও দিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। মোবাইল ফোন সহ ধরা পড়লে বেশ কিছুদিনের জন্য সাসপেন্ড করা হবে শিক্ষককে। অন্যদিকে, কোনো পরীক্ষার্থীর কাছে মোবাইল ফোন পাওয়া গেলে বাতিল করে দেওয়া হবে তার পরীক্ষা। তা সত্ত্বেও কীভাবে পরীক্ষার হল থেকে হোয়াটসঅ্যাপে চালান হচ্ছে একের পর এক প্রশ্নপত্র, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে একাধিক মহলে।
প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে এবং এ রাজ্যের পরীক্ষা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার দাবিতে সোমবার কলকাতা জেলা ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে ছাত্র পরিষদ কর্মীরা পার্ক স্ট্রিটে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। ওই কর্মীরা পর্ষদের সভাপতির কাছে একটি স্মারকলিপিও প্রদান করেন। বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশের সঙ্গে ছাত্র পরিষদ কর্মীদের কিছুটা ধ্বস্তাধস্তিও হয়।