Mahalaya 2025: মহালয়ার সকাল থেকে গঙ্গার ঘাটে ঘাটে উপচে পড়া ভিড়, পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে চলছে তর্পণ

Mahalaya 2025: ‘মহালয়া’ শব্দের অর্থ মহান আলয় বা আশ্রম। পুরাণ থেকে মহাভারত—বিভিন্ন কাহিনিতে মহালয়াকে ঘিরে নানা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। হিন্দু ধর্মে এই দিনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

Mahalaya 2025: ‘মহালয়া’ শব্দের অর্থ মহান আলয় বা আশ্রম। পুরাণ থেকে মহাভারত—বিভিন্ন কাহিনিতে মহালয়াকে ঘিরে নানা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। হিন্দু ধর্মে এই দিনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
mahalaya-2025-pitru-paksha-end-devi-paksha-begins-surya-grahan-tarpan

পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে চলছে তর্পণ

Mahalaya 2025: আজ মহালয়া। পিতৃপক্ষের বিদায় ও দেবী পক্ষের সূচনা। সকাল থেকেই গঙ্গার ঘাটে ঘাটে তর্পণের ভিড়। 

Advertisment

‘মহালয়া’ শব্দের অর্থ মহান আলয় বা আশ্রম। পুরাণ থেকে মহাভারত—বিভিন্ন কাহিনিতে মহালয়াকে ঘিরে নানা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। হিন্দু ধর্মে এই দিনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। মহালয়ার দিনেই পিতৃপক্ষের অবসান ঘটে, শুরু হয় দেবীপক্ষ। সেই অর্থেই এই দিন থেকেই শারদীয়ার সূচনা ধরা হয়। সকাল থেকেই কলকাতা থেকে শহরতলী ঘাটে ঘাটে  পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে চলছে তর্পণ। কলকাতা, হাওড়া, হুগলি-সহ রাজ্যের বিভিন্ন ঘাটে ভোর থেকেই ভিড় জমিয়েছেন পুণ্যার্থীরা। বাবুঘাট, আহিরীটোলা ঘাট, হাওড়ার শিবপুর রামকৃষ্ণপুর ঘাটে চলছে তর্পণ। ঘাটে ভিড় সামলাতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। কলকাতা পুলিশ এবং রিভার ট্রাফিক পুলিশ ঘাটে ঘাটে চালাচ্ছে জোর নজরদারি।

সনাতন ধর্মে মহালয়া এক বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন। ভাদ্র পূর্ণিমার পরবর্তী প্রতিপদ থেকে শুরু হয়ে অমাবস্যা পর্যন্ত চলে পিতৃপক্ষ। এই সময়কালেই পূর্বপুরুষরা তাঁদের উত্তরপুরুষদের নিকটে উপস্থিত থাকেন বলে বিশ্বাস করা হয়। সেই কারণেই পিতৃপক্ষজুড়ে শ্রাদ্ধ এবং তর্পণের আচার পালিত হয়। এর শেষ দিনটি, অর্থাৎ মহালয়া, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। 

Advertisment

তর্পণ শব্দটি এসেছে ত্রুপ ধাতু থেকে, যার অর্থ সন্তুষ্ট করা। ভগবান, ঋষি, পিতৃপুরুষ ও গুরুর উদ্দেশে জল ও অন্ন নিবেদন করে তাঁদের তুষ্ট করাই হল তর্পণ। মহালয়ার ভোরে গঙ্গার ঘাটে কিংবা নদীর ধারে অসংখ্য মানুষকে তর্পণ করতে দেখা যায়। 

মহাভারতে উল্লেখ আছে কর্ণের গল্প। মৃত্যুর পর স্বর্গে তিনি সোনা ও রত্নকে খাদ্য হিসেবে পেয়েছিলেন। কারণ, জীবদ্দশায় তিনি অসংখ্য সোনা-রত্ন দান করলেও কখনও পিতৃপুরুষের উদ্দেশে খাদ্য বা জল দান করেননি। কর্ণ এ বিষয়ে অনুতাপ প্রকাশ করলে ইন্দ্র (কিংবা যম) তাঁকে ১৬ দিনের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করার সুযোগ দেন। সেই ১৬ দিনকেই বলা হয় পিতৃপক্ষ।

পিতৃপক্ষের প্রতিটি তিথিতে শ্রাদ্ধ ও তর্পণ করা হয়, তবে অমাবস্যা বা মহালয়ার দিন এই তর্পণ বিশেষভাবে ফলপ্রসূ বলে ধরা হয়। কারণ— এই সময় পূর্বপুরুষদের আত্মা মানুষের কাছে অবস্থান করে। তর্পণের মাধ্যমে তাঁদের আশীর্বাদ পাওয়া সহজ হয়। পিতৃপুরুষদের তুষ্ট করলে জীবনে শান্তি, দীর্ঘায়ু, ধন-সম্পদ এবং জ্ঞান লাভ হয়। 

পিতৃ ও মাতৃ তর্পণে জল, তিল, চন্দন, তুলসীপাতা এবং ত্রিপত্রী ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে তিল তর্পণ করা হয় জল এবং কালো তিল দিয়ে। যম তর্পণ করা হয় অন্য তর্পণের তিলের পরিবর্তে যব বা ধান ব্যবহার করে। বিকল্প তর্পণ পদ্ধতিতে তিলের বদলে কুরুক্ষেত্র মন্ত্র পাঠ করে জলে তুলসীপাতা দিয়ে তর্পণ করা হয়।

এবার বিশেষ বিষয় হল— ২০২৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, রবিবার মহালয়ার দিনই সূর্যগ্রহণ। হিন্দু ধর্মে গ্রহণকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়। তাই অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, গ্রহণের দিনে তর্পণ করা যাবে কি না? শাস্ত্র মতে— গ্রহণ দৃশ্যমান হলে গ্রহণ শুরুর আগে তর্পণ শেষ করতে হয়। গ্রহণ চলাকালীন তর্পণ বা কোনও আচার করলে তার ফল পাওয়া যায় না। কিন্তু ২০২৫ সালের সূর্যগ্রহণ ভারতে দৃশ্যমান নয়। তাই এদিন মহালয়ার তর্পণ স্বাভাবিক নিয়মেই করা যাবে। বিশেষ কোনও বাধা বা অতিরিক্ত নিয়ম মানতে হবে না।  

তর্পণের আসল তাৎপর্য কেবল পূর্বপুরুষকে স্মরণ নয়, বরং জীবিত এবং অতীত প্রজন্মের মধ্যে এক সেতুবন্ধন। পিতৃপুরুষের আশীর্বাদে পরিবার, সমাজ ও বংশ শক্তি বৃদ্ধি পায়। তাই মহালয়ার দিনে তর্পণকে শুধু আচার নয়, বরং প্রজন্মের মিলনক্ষেত্র হিসেবে দেখা উচিত। মহালয়ার ভোরে তর্পণ করার রীতি শুধু পুরাণকথা বা শাস্ত্রীয় নির্দেশে সীমাবদ্ধ নয়। এটি মানবজীবনের ঐতিহ্য এবং কৃতজ্ঞতার প্রকাশ। পূর্বপুরুষকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের আশীর্বাদ প্রার্থনা করাই তর্পণের মূল উদ্দেশ্য। একইসঙ্গে একথা মাথায় রাখাও ভালো যে, ২০২৫ সালের মহালয়া সূর্যগ্রহণের দিন পড়লেও, এ নিয়ে দ্বিধার কোনও কারণও নেই। তর্পণ যথারীতি করা যাবে।

এখনও বাঙালি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের জাদু কন্ঠের অপেক্ষায়, মহালয়ায় কৌলিন্যে ফেরে ধুলোঝাড়া রেডিও

Mahalaya