এখনও বাঙালি বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের জাদু কন্ঠের অপেক্ষায়, মহালয়ায় কৌলিন্যে ফেরে ধুলোঝাড়া রেডিও

মমতার এদিনের পুজো মণ্ডপের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে তীব্র নিশানা করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মমতাকে নিশানা করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "শুধুমাত্র সংকীর্ণ ভোট রাজনীতির স্বার্থেই এই কাজ জেনে বুঝে করছেন মুখ্যমন্ত্রী"।

মমতার এদিনের পুজো মণ্ডপের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে তীব্র নিশানা করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। মমতাকে নিশানা করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, "শুধুমাত্র সংকীর্ণ ভোট রাজনীতির স্বার্থেই এই কাজ জেনে বুঝে করছেন মুখ্যমন্ত্রী"।

author-image
Pradip Kumar Chattopadhyay
New Update
IMG-20250920-WA0009

রাত পোহালেই মহালয়া

পঞ্জিকা মতে পিতৃপক্ষের শেষদিন আর দেবী পক্ষের সূচনা লগ্ন হল ’মহালয়া’। এই মহালয়া তিথির ভোর থেকেই আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হওয়া শুরু হয়ে যায় দেবীর আগমন বার্তা। যে আগমন বার্তা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে রেডিওয় প্রসার ভারতী সম্প্রচারিত মহালয়া শীর্ষক মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। পবিত্র এই দিনেই আপামর বাঙালি তাঁদের পিতৃপুরুষের আত্মার তৃপ্তি কামনায় ’তর্পন’ সারেন। কার্যত এদিন থেকেই শারদোৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে যায়। 

Advertisment

দেবী পক্ষের বিশেষ এই দিনটির ভোরে প্রতিটি বাঙালির ঘরে ঘরে সব থেকে বেশী কদর থাকে রেডিও’র। দৃশ্যশ্রাব্য মাধ্যমের(টেলিভিশন) রমরমার যুগেও শুধুমাত্র এই একটি দিন শ্রবন যন্ত্র রেডিওর টিআরপি থাকে তুঙ্গে। কারণ, দেবী পক্ষে মহিষাসুর মর্দীনির মুর্চ্ছনায় মহালয়া শীর্ষক মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান শুধুমাত্র রেডিওতেই সম্প্রচারিত হয়।যে অনুষ্ঠান আজও আপামর বাঙালির মনের মণি কোঠায় স্থান করে আছে। 

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের অনবদ্য মহিমাকে সম্বল করেই আজও বাঙালির কাছে নস্টালজিক হয়ে আছে রেডিওয় আকাশবাণী সম্প্রচারিত মহালয়ার এই বিশেষ অনুষ্ঠান। যা রেডিওয় প্রথম সম্প্রচারিত হয় ১৯৩১ সালে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর চণ্ডীপাঠ আর পঙ্কজ কুমার মল্লিক, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, সুপ্রীতি ঘোষ সহ অন্যান্য খ্যাতনামা শিল্পীদের কণ্ঠে ধ্বনিত আগমনী সঙ্গীত বাঙালিকে আজও আবেগপ্রবণ করে তোলে। সেই আবেগ আজও ফল্গুধারার মতো প্রবাহিত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির হাত ধরে রেডিওর বিকল্প অনেক কিছু আবিস্কার হয়েছে। তা সত্বেও দেবীপক্ষের এই বিশেষ দিনটিতে আট থেকে আশি, সকল বাঙালি রেডিওয় মহালয়ার মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান শুনে তারপর পির্তৃ পুরুষের উদ্দশ্যে তর্পণ সারতে পবিত্র জলাশয়ের ঘাটের দিকে রওনা হন।

Advertisment

রেডিও আবিস্কারের ইতিহাস বহু পুরানো। ১৮৯৮ সালে আবিস্কৃত হয়েছিল রেডিও। তারপর থেকে একটা যুগ গিয়েছে যখন প্রতিটি গৃহস্থ পরিবারে রেডিওর অসামান্য কদর ছিল। কিন্তু টেলিভিশন আবিস্কার হওয়ার পর থেকে রেডিও তার কদর হারাতে শুরু করে। এখন আবার মুঠো ফোনের যুগ। বর্তমান প্রজন্ম তো রেডিওকে একেবারে ভুলতে বসেছে। 

তবে এতকিছুর পরেও মহালয়ার দিনের ভোরে আপামর বাঙালি আাঁকড়ে ধরে সেই রেডিওকেই।বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সৌজন্যে মহালয়ার দিনে গ্রামবাংলা ও শহরের ঘরে ঘরে জানান দেয় মার্কনীর আবিস্কৃত রেডিওর উপস্থিতি। “জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণ ধারিণী, অভয়া শক্তি বলপ্রয়ো ধারিনী তুমি জাগো”। রেডিওয় ভেসে আাসা সেই হৃদয়স্পর্শি দেবী বন্দনা শুনে আজও নস্টালজিক হয়ে পড়েন বাঙালিকুল। তাই এই সুর ভেসে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালির ঘরে ঘরে শুরু হয়ে যায় শঙ্খ ধ্বনী । 

আকাশবাণী সম্প্রচারিত মহালয়ার অনুষ্ঠান চির অমর করে রাখার নেপথ্য কারিগর হিসাবে গণ্য হয়ে আসছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। কবিতা পাঠ ও সংস্কৃত চর্চার প্রতি বরাবরই আলাদা টান ছিল হৃদয়স্পর্শী কন্ঠশ্বরের অধিকারী এই ব্যক্তির। ১৯২৮ সালে স্কটিশ চার্য কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর তিনি ফেয়ারলি প্লেসে রেল দফতরের অফিসে চাকরিতে যোগ দেন। কিন্তু চাকরিতে তার মন বসছিল না। সেই বছরই চাকরি ছেড়ে দিয়ে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র চলে যান বেতারে। এখানে নানা ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে আসা বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কাছে একদিন এল ’মহালয়ার’ মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান করার সেই সন্ধিক্ষণ। সেদিন সরাসরি সম্প্রচারিত মহালয়ার অনুষ্ঠান শুরুতেই আবেগ ঘন কণ্ঠে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বলা শুরু করলেন , “আশ্বিনের শারদ প্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জির, ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা, প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগৎ মাতার আগমন বার্তা ”।  

শোনা যায়, সেদিন বীরেন্দ্রকৃষ্ণের আবেগ ঘণ কণ্ঠে ধ্বনিত এই শব্দমালা শুনে কার্যত ‘ থ ’ বনে গিয়েছিলেন আকাশবাণীতে উপস্থিত অন্য শিল্পীরা। শুধু ইশারায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণকে অভয় যুগিয়ে গিয়েছিলেন পঙ্কজ কুমার মল্লিক। আকাশবানী সম্প্রচারিত সেদিনের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আপামর বাঙালির হৃদয়ে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন। কালজয়ী এই শিল্পী ইহলোক ত্যাগ করেছেন ঠিকই। তবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে আজও কেউ ভুলতে পারেননি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বহু প্রথিতযশা মন থেকে বিস্মৃত হয়েছেন, তবে মহালয়ার আগমনী সুর আর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র যেন সমার্থক হয়েই আছেন।

মহালয়ার আগেই পুজো মণ্ডপের উদ্বোধন, 'হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত', শুভেন্দুর অভিযোগের পাল্টা কী বললেন মমতা?

Mahalaya Duare Durga Devi Durga