Burdwan Raj Family: কৃষ্ণনগর রাজপরিবারের সদস্য অমৃতা রায় (Amrita Roy) লোকসভা নির্বাচনে (Lok Sabha Election 2024) BJP-র প্রার্থী হয়েছেন। নানা কারণে তাঁর প্রার্থী হওয়া নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। এরই মধ্যে বর্ধমান দুর্গাপুরের BJP প্রার্থী দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh) মহারাজা উদয়চাঁদ মহতাবের প্রতিকৃতি ভেবে বনবিহারী কাপুরের গলায় মালা পরিয়ে ধ্বনি দিয়েছেন। এক সময় বর্ধমানের শেষ মহারাজা উদয়চাঁদ মহতাব রাজনৈতিক লড়াইয়ে নেমেছিলেন। ভোটের সেই প্রেস্টিজ ফাইটে তিনি হেরে গিয়েছিলেন CPI প্রার্থী বিনয় চৌধুরীর কাছে। ১৯৫২-র প্রথম বিধানসভা নির্বাচনে বর্ধমান কেন্দ্র থেকে জাতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছিলেন মহারাজা। তার ১০ বছর পরে রাজ পরিবারের হারানো সম্মান ফিরিয়ে এনেছিলেন রাণী রাধারাণী মহতাব।
তখনও বর্ধমান দক্ষিণ ও বর্ধমান উত্তর কেন্দ্র ভাগ হয়নি। শুধু বর্ধমান বিধানসভা কেন্দ্র ছিল। দেশ স্বাধীন হয়েছে মাত্র কয়েকটা বছর আগে। দেশের স্বাধীন রাজাদের রাজ্যপাট সবে ইতিহাস হয়েছে। কিন্তু রাজগরিমা তখনও ছিল বিদ্যমান। তখনও রাজবাড়িতেই বর্ধমানের মহারাজা থাকতেন। ১৯৫২-এ বর্ধমান বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছিলেন মহারাজা উদয়চাঁদ মহতাব (Uday Chand Mahtab)। তাঁর বিপরীতে ছিলেন কমিউনিষ্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার অর্থাৎ সিপিআই প্রার্থী বিনয়কৃষ্ণ চৌধুরী (Binoy Krishna Choudhury)।
সেই লড়াইয়ে পরাজিত হয়েছিলেন বর্ধমানের মহারাজা। মন খারাপ হয়েছিল মহারাজার। অভিমানে পরবর্তী সময়ে আর বর্ধমানে থাকেননি তিনি। তবে ১৯৬২ সালে বিধানসভা নির্বাচনে রাজপরিবারের সম্মান পুনরুদ্ধার করতে লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছিলেন 'রাণী মা' রাধারানী মহতাব। মহারানী শহরবাসীর বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ভোট চেয়েছিলেন। সেই বিনয় চোধুরীকে পরাজিত করেছিলেন তিনিই। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন বর্ধমানের রাজ পরিবারের সদস্যরা।
দীর্ঘ দিন ধরে বর্ধমানের ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করছেন অধ্যাপক সর্বজিৎ যশ। তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "১৯৫২ সালে হেরে যাওয়ার পর ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত বর্ধমানে ছিলেন মহারাজা উদয়চাঁদ মহতাব। তারপর তিনি বেনারস (Benaras) চলে গিয়েছিলেন। মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। রাজা আর বর্ধমানে ফেরেননি। বর্ধমানের ওপর দিয়ে যখন ট্রেনে চড়ে বেনারস যেতেন তখন চোখ বন্ধ করে চুপচাপ বসে থাকতেন। ওনার ছেলে প্রণয়চাঁদ মহতাব একথা বলেছিলেন। যখন মহারাজা হেরেছিলেন তখনও রাজবাড়িতে থাকতেন। জমিদারি প্রথা সবে গিয়েছে। রাজত্ব হারানোর কয়েক মাসের মধ্যে ভোট হয়েছে। জিতলে হয়তো থেকে যেতেন। কিন্তু হেরে গিয়ে কষ্ট পেয়েছিলেন।"
দীর্ঘবছর শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন বর্ধমানের রাজারা। জেলার আনাচে-কানাচে রাজশাসনের ইতিহাসের কাহিনী ছড়িয়ে রয়েছে। রাজার শহরে দোল পূর্ণিমা থেকে ঘুড়ির মেলা, সর্বমঙ্গলা মন্দির থেকে জেলায় দুই জায়গায় ১০৮ শিব মন্দির নানা ইতিহাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ইতিহাসবিদ সর্বজিৎ যশ বলেন, "অভিমানী রাজা ভাবতে থাকেন বর্ধমানের লোকেরা আমাকে ভোট দিল না। আমি হেরে গেলাম। তিনি ১৯৫৩ সালে সিদ্ধান্ত নেন বর্ধমানে আর থাকবেন না। বেনারসে চলে যান। ঘরোয়া জিনিষপত্র কলকাতা, দার্জিলিং ও বেনারসে নিয়ে যান। রাজবাড়ি ও গোলাপবাগের সম্পত্তি সরকারকে দিয়ে দেন। কিছু জিনিস নিলামে বিক্রি করে দেন। বর্ধমান রাজবাড়ির ঝাড়লন্ঠন যা এখন গ্র্যান্ড হোটেলের বারান্দায় শোভা পাচ্ছে।" এখন রাজবাড়িতে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের (Burdwan University) অফিস ও গোলাপবাগে পঠন-পাঠনের ক্যাম্পাস।
আরও পড়ুন- Indian Railways: রোজই চড়েন লোকাল ট্রেনে, জানেন সেটা EMU নাকি MEMU? পার্থক্য কোথায়? জানুন সহজে
১৯৬২ সালে যখন ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন মহারাণী তখন মহন্তস্থলে থাকতেন। মহারাণী বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (Burdwan Medical College Hospital) একটি ভবন নির্মাণ করেছিলেন। যা রাধারাণী ওয়ার্ড নামে পরিচিত। সর্বজিৎ যশের কথায়, "বর্ধমান রাজবাড়ি ও কালনা রাজবাড়ি দুটোই দান করে দিয়েছিলেন রাজ পরিবার। মোট ১১টা রাজবাড়ি ছিল। দুটো বাড়ি নিজেদের হাতে রেখেছিলেন। একটা কলকাতায়, আরেকটা দার্জিলিংয়ে। কলকাতার বাড়িটা উদয়চাঁদ মহতাবের বড় ছেলে নিয়েছেন, দার্জিলিংয়ের বাড়িটা ছোট ছেলে নিয়েছেন।"
শেষের দিকে ছোট রাজপুত্র প্রণয়চাঁদ মহতাব যখন বর্ধমানে আসতেন লক্ষ্মী নারায়ণ জিউ মন্দিরে থাকতেন। শহরে মহতাব ট্রাস্টের অনেক সম্পত্তি থাকলেও বর্ধমানের রাজাদের বংশধরদের থাকার কোনও নির্দিষ্ট বাসভবন কিন্তু বর্ধমান শহরে নেই।