ভূতে ধরেছে! তাই শিশুদের ঝাড়ফুঁক। আর তার জেরেই ২ শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে মালদায়। কুসংস্কারের থাবা যে এখনও জনসমাজে গ্রাস করে রয়েছে, তা আর একবার সামনে এল। খেলতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে ৪ শিশু। এতেই পরিবারের সন্দেহ হয়, তাদের ভূতে ধরেছে। এরপরই ওঝার কাছে নিয়ে গিয়ে ঝাড়ফুঁক দেওয়া হয় তাদের। শেষমেশ শিশুদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাদের মালদা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় এক শিশুর। আরেক শিশুর মৃত্যু হয় হাসপাতালে। আরও ২ শিশু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ভূতে ধরেছে শিশুদের! যার কারণে এই শিশুদের মৃত্যু হয়েছে, এমন আতঙ্কেই গাজোল থানার কদমতলী গ্রামের বাসিন্দাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। অনেকেই ভূতের ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ করে দিয়েছেন।এদিকে পুরো বিষয়টি জানতে পেরে রীতিমতো হতবাক হয়ে পড়েছেন গাজোলের তৃণমূল বিধায়ক দীপালি বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘ওই গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে এরকম যে কুসংস্কার রয়েছে তা জানা ছিল না। রহস্যজনকভাবে দুই শিশু মারা গিয়েছে। আমি অসুস্থদের মেডিক্যাল কলেজে দেখে গিয়েছি । কদমতলী গ্রামে গিয়েছি। ওখানকার মানুষদের বুঝিয়েছি ভূত বলে কিছু হয় না । সবই কুসংস্কার। সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে হয়তো শিশুরা প্রাণে বেঁচে যেত। জানি না ওদের পরিবার কেন এরকমটা করল। স্থানীয় ব্লক স্বাস্থ্য ও প্রশাসনকে বলেছি শিশু মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানার জন্য সঠিকভাবে তদন্ত করে বিষয়টি উন্মোচন করুক। নইলে গ্রামবাসীদের একাংশের মধ্যে এরকম ভ্রান্ত ধারণা থেকে যাবে’’।
আরও পড়ুন: নেওড়াভ্যালির জঙ্গলে দেখা মিলল রয়াল বেঙ্গল টাইগারের
মালদায় ঝাড়ফুঁকে ২ শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ, কী বললেন তৃণমূল বিধায়ক? pic.twitter.com/g6FL3iwLfr
— Indian Express Bangla (@ieBangla) February 15, 2020
(ভিডিও- কৌশিক দে)
আরও পড়ুন: বসন্ত এসে গেছে…আর শীত নয়, বাড়বে গরম
অসুস্থ এক শিশুর মামা আসিফ শেখ বলেন, ‘‘গ্রামে ভূতের তাণ্ডব শুরু হয়েছে। শিশুদের ওপর ভর করছে ভূত। যার কারণে এই দুই শিশু মারা গিয়েছে। আমার দুই ভাগ্নিরা ভূতের খপ্পরে পড়ে এখন আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন মেডিক্যাল কলেজে। চারজন শিশুকে রাতে ঝাড়ফুঁক করানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু দু’জনকে বাঁচানো যায়নি। এর আগেও বেশ কিছু গ্রামের মানুষকে ভূতে ধরেছিল। কয়েকজন মারাও গিয়েছে। আমরা এখন আতঙ্কিত। কদমতলী গ্রামে ভূত তাড়ানোর কী উপায় আছে সেজন্যই ঘুরে বেড়াচ্ছি’’।
যদিও মেডিকেল কলেজ কর্তব্যরত চিকিৎসক ও পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের পর জানিয়েছে, জঙ্গলে খেলার সময় হয়তো বিষাক্ত জাতীয় কোন ফল শিশুরা খেয়ে ফেলেছিল। যার কারণে শরীরে দ্রুত বিষক্রিয়ার প্রভাব পড়ে থাকতে পারে। আর তা থেকেই এই ঘটনাটি ঘটেছে । কিন্তু গ্রামবাসীদের একাংশ ভূতের কথা বলেই আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা করছে,এটা ঠিক নয়। মৃত ওই দুই শিশুর ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে জানা যাবে বলে জানিয়েছে গাজোল থানার পুলিশ। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া জানিয়েছেন, গাজোলের কদমতলী গ্রামে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আরও দুই শিশু অসুস্থ রয়েছে। প্রকৃত ঘটনা জানতে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ সম্পর্কে বলা যাবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন