Malda Student Death: হোস্টেল থেকে বেসরকারি আবাসিক স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর এক ছাত্রের রহস্যজনক অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয়েছিল। পরিবারের অভিযোগ, ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদের বাড়ির ছেলেকে মারধর করে খুন করেছে। অভিযোগ দায়ের হয় পুলিশে। কিন্তু ওই স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় গত চারদিন ধরেই মৃত ছাত্রের দেহ বাড়িতে বরফ দিয়ে ফ্রিজার করে রেখেছে পরিবারের লোকেরা।
মৃতের পরিবারের দাবি, যতদিন পর্যন্ত ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং ক্লাস টিচার গ্রেপ্তার না হচ্ছে, ততদিন ছাত্রের দেহ সৎকার্য করা হবে না। বরফ দিয়ে এভাবেই বাড়িতে সংরক্ষণ করে রাখা হবে। ঘটনাটি ঘটেছে মানিকচক ব্লকের অন্তর্গত ভূতনি থানার দক্ষিণ চন্ডিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের যোগিটোলা এলাকায়। মানিকচক ব্লক অফিস সংলগ্ন একটি বেসরকারি আবাসিক স্কুলের বিরুদ্ধেই মূলত ওই ছাত্রকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ তুলে পুলিশে নালিশ জানিয়েছে পরিবারের লোকেরা। শনিবার ওই ছাত্রের দেহ সৎকার্য না করে বাড়িতে বরফ দিয়ে এভাবে রাখার বিষয়টি জানাজানি হতেই রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
বিষয়টি জানতে পেরে হতবাক হয়ে গিয়েছে মানিকচক এবং ভুতনি থানার পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ছাত্রের নাম শ্রীকান্ত মন্ডল (১৩)। তাঁর বাড়ি ভুতনি থানার যোগিটোলা এলাকায়। মানিকচক ব্লক অফিস সংলগ্ন একটি বেসরকারি আবাসিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরত ছিল শ্রীকান্ত। ওই স্কুলের হোস্টেলে থাকতো সে। বর্তমানে ওই স্কুলের হোস্টেলে ৮০ জন পড়ুয়া রয়েছে। গত বুধবার হোস্টেল ঘরে ওই ছাত্রের গলায় ফাঁস লাগানো দেহ উদ্ধার করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এরপরই বিষয়টি পরিবারকে জানানো হয়। কিন্তু মৃত ছাত্রের পরিবারের পাল্টা অভিযোগ, তাদের ছেলেকে নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। মৃত ছাত্রের বাবা প্রেম কুমার মন্ডল বলেন , ওই হোস্টেলে এতগুলো পড়ুয়া রয়েছে। একেকটি ঘরে ১০ থেকে ১২ জন করে পড়ুয়া থাকে। সকলের মধ্যে কিভাবে আমার ছেলে হোস্টেল ঘরে গলায় ফাঁস দিল, সেই সদুত্তর ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ দেয় নি। তবে কয়েকদিন আগে রাতের প্রার্থনার সময় ছেলে নাকি সিটি বাজিয়ে ছিল। তারপর থেকেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং একজন ক্লাস টিচার ছেলেকে মারধরের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতন করছিল।
এই সম্পর্কে জানার পর ছেলেকে হোস্টেল থেকে নিয়ে আসার উদ্যোগী হয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই গত বুধবার আমার ছেলে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে এমন কথা ফোন করে জানাই ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ। এরপরই ওই স্কুলে গিয়ে দেখি ছেলের দেহ যথারীতি মানিকচক গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে চলে যাওয়া হয়েছে।
মৃত ছাত্রের বাবা প্রেম কুমার মন্ডলের অভিযোগ, আমার ছেলেকে শারীরিক নির্যাতন চালানোর পাশাপাশি পিটিয়ে মারা হয়েছে। পুলিশে অভিযোগ জানানোর পর এখনো পর্যন্ত ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং একজন ক্লাস টিচারকে গ্রেপ্তার করা হয় নি। তাই ছেলের দেহ বাড়িতে কফিনবন্দি করে বরফ দিয়ে সংরক্ষিত করে রাখা আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার না করা হবে, ততক্ষণ দেহ সৎকার্য করব না।
মৃত ছাত্রের এক দাদা রবি মন্ডল বলেন, ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং একজন ক্লাস টিচার দুজনে মিলে মারধর করে ভাইকে খুন করেছে।পুলিশ কেন অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করছে না বুঝতে পারছি না। বাড়িতে মৃতদেহ বরফ দিয়ে ঢেকে রেখেছে কাকু ও কাকিমা। আমরা চাই অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হোক। ঘটনার চার দিন ধরে মৃতদেহ বাড়িতে রয়েছে। এদিন মানিকচক থানায় এসেও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আমরা পাই নি। এব্যাপারে পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হওয়ার কথা জানিয়েছে মৃত ছাত্রীর পরিবার।
এদিকে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাজির হোসেন জানিয়েছেন, যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন।মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে ওই ছাত্র হোস্টেলের একটি ঘরে গলায় ফাঁসি আত্মহত্যা করেছে। মানিকচক থানার পুলিশ জানিয়েছে, ওই ছাত্রের দেহ ময়নাতদন্তের পর তার পরিবারের হাতে গত বৃহস্পতিবার তুলে দেওয়া হয়েছিল। এরপর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তে রিপোর্ট এখনো হাতে আসে নি । ফলে এব্যাপারে পরিষ্কার করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে ওই ছাত্রের দেহ বাড়িতে বরফ দিয়ে রেখে দেওয়ার বিষয়টি তদারকি করে দেখা হচ্ছে।