Malda News: বিয়ের দুই থেকে তিন বছর পর কন্যাশ্রীর (Kanyashree) ভুয়ো আবেদনের হদিশ পেল চাঁচোল মহকুমার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লক প্রশাসন। অভিযোগ, অবিবাহিত দেখিয়ে কন্যাশ্রী প্রকল্পের টাকা পেতে স্কুলে আবেদন করেছিলেন বেশ কিছু মহিলারা। সে বিষয়ে তদারকি করতে গিয়ে কন্যাশ্রী প্রকল্পের ভুয়ো আবেদনের তথ্য হাতে এসেছে সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশাসনের কাছে। বৃহস্পতিবার হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের মশালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের জগন্নাথপুর এলাকায় কন্যাশ্রী প্রকল্পের আবেদনের তদারকি করতে যান সংশ্লিষ্ট ব্লকের জয়েন বিডিও সোনাম ওয়াংদি লামা-সহ প্রশাসনের কর্তারা। জগন্নাথপুর হাই মাদ্রাসার বেশ কিছু আবেদনকারী ছাত্রীদের বাড়ি গিয়ে তথ্য যাচাই করার পরে বিষয়টি জানতে পারেন তাঁরা। এরপর আবেদন পত্র বাতিল করা হয়।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য কোনওরকম আর্থিক সমস্যা না হয় তার জন্য রাজ্য সরকার চালু করেছে কন্যাশ্রী প্রকল্প। ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী অবিবাহিত মেয়েদের পড়াশোনায় খরচ করার জন্য বছরে ১০০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১৮ বছরের পরেও তারা অবিবাহিত থাকলে এককালীন দেওয়া হয় ২৫ হাজার টাকা। আর সেই ২৫ হাজার টাকা পেতে অবিবাহিত দেখিয়ে বিয়ের পর আবেদন করেছিলেন ছাত্রীরা বলে অভিযোগ। যা ছাত্রী ও তাঁর পরিবারের লোকেরা স্বীকার করেছেন। অভিযোগ, দুই মাস আগে পঞ্চায়েত ও ব্লকের কর্মীর পরিচয় দিয়ে দু'জন ব্যক্তি কন্যাশ্রীর আবেদন পত্র নিয়ে এসেছিলেন। প্রকল্পের টাকা পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিবার থেকে দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্লক অফিসের এক কর্মী জড়িত রয়েছে। তিনি ফিল্ড ভেরিফিকেশনে গিয়ে টাকা আদায় করে মিথ্যা রিপোর্ট ব্লকে জমা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবেন বলেন জানিয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের বিডিও তাপস কুমার পাল। জগন্নাথপুর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী তথা আবেদনকারী সুকতারা খাতুনের কাকিমা বেদারা খাতুন বলেন, ‘তিন বছর আগে ভাইঝির বিয়ে হয়েছে। তাঁর দুই বছরের এক সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর কন্যাশ্রী আবেদন করেছিলেন। দুই মাস আগে ব্লক ও পঞ্চায়েতের কর্মীর পরিচয় দিয়ে দু'জন এসেছিলেন। প্রকল্পের টাকা পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ৫ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। ৩ হাজার টাকা দিয়েছি। তবে তাঁদেরকে চিনি না।’
আরও পড়ুন মিড-ডে মিল বন্ধ রেখে স্কুল প্রাঙ্গনেই চলছে বিড়ি বাঁধা, ধুঁয়াধার অভিযোগে তোলপাড় মালদার স্কুলে
জগন্নাথপুর হাই মাদ্রাসার আরেক ছাত্রী সাবনাজ খাতুন বলেন, ‘দুই বছর আগে আমার বিয়ে হয়েছে। ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে। এখন বাবার বাড়িতে আছি। বিয়ের পর একাদশ শ্রেণিতে কন্যাশ্রীর জন্য আবেদন করেছিলাম। একমাস আগে এই প্রকল্পের টাকা পাইয়ে দেওয়ার জন্য ব্লক ও পঞ্চায়েতের কর্মীর পরিচয় দিয়ে দুইজন এসে ৩৫০০ টাকা নিয়ে গিয়েছে।’
জগন্নাথপুর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘পঞ্চায়েত থেকে অবিবাহিত সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। আর সেই অবিবাহিত সার্টিফিকেট দেখিয়ে কন্যাশ্রী জন্য আবেদন করেন ছাত্রীরা। রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী পোর্টালে সমস্ত ডকুমেন্টস আপলোড করতে হয় স্কুলকে। এরপর ব্লকের নির্দেশে তদন্তে যায় ব্লক ও পঞ্চায়েত কর্মীরা। কখনও আইসিডিএস কর্মীরা তদন্ত রিপোর্ট পাঠান ব্লকে। এখানে স্কুল কর্তৃপক্ষের কোনও হাত নেই। তবে বিয়ে হয়ে যাওয়ার কথা জানতে পেরে আমি ৮ থেকে ১০টি কন্যাশ্রী আবেদন পত্র বাতিল করেছি।’
হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের জয়েন্ট বিডিও সোনাম ওয়াংদি লামা বলেন, তালগাছি ও করকরিয়া গ্রামে ১৬টি কন্যাশ্রী আবেদন পত্রের তথ্য যাচাই কর হয়েছে। এরমধ্যে ১৪টি ভুয়ো কন্যাশ্রী আবেদনের হদিস মেলেছে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পেলাম এক ব্লক কর্মীর বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।