Malda TMC Leader Babla Sarkar Shot Dead: রীতিমতো হিন্দি সিনেমার কায়দায় মালদার জনপ্রিয় তৃণমূল নেতাকে শুট আউট করল দুষ্কৃতীরা। বাড়ির সামনে দোকানের ধাওয়া করে পরপর মাথায় তিনটে গুলি করে খুন করা হয় মালদার তৃণমূল নেতা তথা ইংরেজবাজার পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দুলাল সরকার ওরফে বাবলাকে (৬২)। বর্তমানে বাবলাবাবু তৃণমূলের জেলার সহ-সভাপতি পদেও ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ এমন ঘটনায় গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।
গুলিবিদ্ধ তৃণমূল নেতা বাবলা সরকারকে তাঁর অনুগামীরা পরে উদ্ধার করে মালদা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানিয়ে দেন। এরপরই শহরের একটা অংশে কার্যত বন্ধের চেহারা নেই। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান জেলা তৃণমূলের নেতা-কর্মী থেকে সমর্থকেরা।
অন্যদিকে, মালদায় তৃণমূল নেতা বাবলা সরকার খুনের ঘটনায় রীতিমতো পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন থেকে এক্স হ্যান্ডেলে টুইট করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'বাবলা সরকার আমার দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা ছিলেন। ওকে দুষ্কৃতীরা খুন করেছে। কী ভাষায় যে কথা বলব কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। বাবলার পরিবারকে আমি সমবেদনা জানাচ্ছি। ওর স্ত্রী চৈতালি সরকার যেন মনকে শক্ত রেখে এগিয়ে চলুক ঈশ্বরের কাছে এই কামনা করছি।'
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিনের মতো এদিন সকালেও নিজের গাড়ি নিয়ে দোকানে আসছিলেন তিনি। ঠিক সেই সময় ইংলিশবাজার পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের ঝলঝলিয়ার মহানন্দাপল্লি এলাকায় দোকানের কাছেই একটি মোটর বাইকে চারজন এসে তাঁকে গুলি করে। প্রথমে তাঁকে এক রাউন্ড গুলি করা হয়। প্রথম রাউন্ডের গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপরই প্রাণ রক্ষার জন্য পাশের একটি দোকানে ঢুকে পড়েন বাবলা সরকার। এরপরই চারজন দুষ্কৃতী দোকানে ঢুকে তাঁকে তিন রাউন্ড গুলি করে। একটি গুলি মাথায় এবং দুটি শরীরে লাগে। সিসিটিভি ফুটেছে স্পষ্ট সেই ছবি দেখতে পেয়েছে পুলিশ। মুখ বাধা দুষ্কৃতীরা দোকানে ঢুকে একের পর এক গুলি করছে। এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় বাবলা সরকারকে উদ্ধার করে মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করে।
'বাবলা সরকার আমাদের দীর্ঘদিনের সাথী ছিল, তৃণমূল কংগ্রেসের জন্ম লগ্ন থেকে বাবলা সরকার এবং তার স্ত্রী চৈতালি কঠোর পরিশ্রম করে মালদার সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।' তাঁর নিরাপত্তারক্ষী কেন সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল সেই প্রশ্নও তুলেছেন বাবলাবাবুর অনুগামীরা।
এদিকে এই ঘটনার পর গোটা এলাকা জুড়ে যেমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে ঠিক সেইরকম শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে বাবলা সরকারের মৃত্যুর খবর পেয়ে মালদায় আসেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সেচ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন এবং শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব। তবে কেন গুলি করে খুন করা হল বাবলা সরকারকে তা এখনও দ্বন্দ্বে রয়েছে সকলেই।
পুলিশকে বাবলা সরকারের গাড়ির চালক সুমন দাস জানিয়েছেন, 'প্রতিদিনের মতোই এদিন সকালে দাদাকে বাড়ি থেকে প্লাইউডের দোকান ও কারখানায় ছাড়তে গিয়েছিলাম। মহানন্দাপল্লিতে দাদার দোকানটি রয়েছে। দোকানের সামনে দাদা যখন গাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলেন তখনই চারজন দুষ্কৃতী একটি মোটরবাইকে এসে দাদাকে গুলি করে। প্রথম গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তারপরেই বাবলাদা দৌড়ে দোকানে ঢুকে পড়ে। তখন দুষ্কৃতীরা পিছু ধাওয়া করে দাদাকে দোকানের মধ্যেই মাথায় গুলি করে খুন করে। আমি বাঁচাতে আসলে ওরা আমাকেও বন্দুক দেখিয়ে গুলি করার ভয় দেখায়, তখন প্রাণ ভরে সরে যাই।'
আরও পড়ুন মালদায় খুন তৃণমূল নেতা দুলাল সরকার, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর, পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ
মৃত বাবলা সরকারের স্ত্রী চৈতালি দেবী বলেন, 'কেন এভাবে আমার স্বামীকে খুন করা হল কিছু বুঝতে পারছি না। ২০০৭ সালে স্বামীকে একবার দুষ্কৃতীরা গুলি করে মারার চেষ্টা চালিয়েছিল। তারপর দুইজন দেহরক্ষীও নেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালে সেই দেহরক্ষী তুলে নেয় জেলা প্রশাসন। আজকে স্বামীর দেহরক্ষী থাকলে হয়তো ওকে হারাতাম না। এর জবাব পুলিশকে দিতে হবে।'
ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান তথা রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেন, 'বাবলা সরকারের রাজনৈতিক কোনও শত্রু ছিল না। এর পেছনে অন্য কিছু রহস্য থাকতে পারে। পরিকল্পিতভাবেই খুন করা হয়েছে তাঁকে। ভাবতেই পারছি না যে বাবলা সরকার নেই।' তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সি বলেন, 'বাবলা সরকার আমাদের মধ্যে নেই ভাবতেই পারছি না। সাত সকালে দুষ্কৃতীদের এই তাণ্ডব দেখে রীতিমতো অবাক হচ্ছি। ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে।'
বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ি বলেন, 'আসলে শাসকদলের যোগ্য নেতাদের কদর নেই। বাবলাবাবু অত্যন্ত ভাল মানুষ ছিলেন। সাধারণ মানুষের জন্য অনেক উপকার করেছেন। অথচ তাঁরই দেহরক্ষী তুলে নেওয়া হল। অযোগ্যদের এখন একগাদা দেহরক্ষী দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে আমরাও অসন্তুষ্ট। মানুষ এর বিচার করবে।'
পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব জানিয়েছেন, 'ঘটনাস্থল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। দুষ্কৃতীদের মুখ ঢাকা ছিল বলে চিহ্নিত করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে গোটা এলাকায় নাকা তল্লাশি শুরু হয়েছে। আপাতত দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আটক করা হয়েছে।'