আবাসের টাকা না পেয়ে বাড়ি ভেঙে বিপাকে মালদহের দুই পৌরসভার প্রায় চার হাজার পরিবার। সরকারি নতুন পাকা বাড়ি পাওয়ার আশায় জেলার দুই পৌরসভার দুঃস্থ মানুষ ভেঙে ফেলেছিল তাদের পুরনো মাথা গোঁজার ঠাঁই৷ নতুন বাড়ির কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু হঠাৎ সরকারি টাকা আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ ফলে এই মুহূর্তে তাঁদের অনেককে খেয়ে না খেয়ে বাড়ির ভাড়া গুনতে হচ্ছে, আর যাঁদের সেই সামর্থ নেই, তাঁদের ঠাঁই হয়েছে খোলা আকাশের ত্রিপলের নীচে। কবে তাঁদের বাড়ি নির্মাণের টাকা আসবে, জানেন না কেউ৷
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় শহরের গরিব মানুষের পাকা বাড়ি তৈরির জন্য রয়েছে সরকারি প্রকল্প, হাউস ফর অল৷ মোট তিন লাখ ৬৮ হাজার টাকার এই প্রকল্পে উপভোক্তাকে দিতে হবে ২৫ হাজার টাকা৷ কেন্দ্র দেবে দেড় লাখ এবং রাজ্য দেবে এক লাখ ৯৩ হাজার টাকা৷ উপভোক্তার অ্যাকাউন্টে চার থেকে পাঁচটি কিস্তিতে অনুদানের টাকা ঢুকবে৷
প্রতিটি পর্যায়ের কাজের পর তার রিপোর্ট দেখে পরবর্তী কিস্তির টাকা দেওয়া হবে৷ ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে মালদায় এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়৷ কিন্তু এখন পুরোপুরি বন্ধ৷ ঘর তৈরির কিস্তির টাকা না পেয়ে চরম সমস্যায় পড়েছেন মালদহের ইংরেজবাজার পৌরসভার ১৩৬৫টি পরিবার এবং পুরাতন মালদহ পৌরসভার প্রায় ২৪০০ পরিবার৷
গত ৯ মাস আগে সরকারি পাকা বাড়ি পাওয়ার আশায় নিজের পুরনো ঘর ভেঙে ফেলেছেন পুরাতন মালদা এবং ইংরেজবাজার পৌরসভার রঞ্জনা প্রসাদ,কাজল মণ্ডল, কানাই মালারা৷ ভেবেছিলেন, কয়েক মাসের মধ্যে নতুন বাড়ি তৈরি হয়ে যাবে৷ তা হয়নি৷ তখন থেকে পরিবার-সহ বাকি সদস্যরা খোলা আকাশের নিচে ত্রিপল টাঙিয়ে রয়েছেন৷
আরও পড়ুন ‘নতুন বছরে CBI-এর নেমত্তন্ন পাবেন দিদি’, দিলীপ উবাচে গভীর আশঙ্কা তৃণমূলের
এই বিষয়ে ইংলিশ বাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরি, বাড়ি ভেঙে সেই সমস্ত অসহায় মানুষদের করুণ কথা কার্যত স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়াই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
পুরাতন মালদা পৌরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ বলেন, “২০২০-২১ এবং ২১-২২ অর্থবর্ষে আমরা এই প্রকল্পে প্রায় ২৪০০ জনের নাম পাঠিয়েছিলাম৷ সরকার সেই তালিকা অনুমোদন করে৷ রাজ্য সরকার নিজের প্রথম কিস্তির টাকাও দিয়ে দেয়৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা দিচ্ছে না৷ এতে যেসব গরিব মানুষজন পাকা বাড়ি পাওয়ার আশায় নিজেদের কাঁচা বাড়ি ভেঙে ফেলেছিলেন, তাঁরা সমস্যায় পড়েছেন৷
আরও পড়ুন পাহাড়ঘেরা বাংলার এই গ্রাম যেন ফ্রেমবন্দি ছবি! হৃদয় জুড়নো পরিবেশে মন্ত্রমুগ্ধকর অনুভূতি!
যদিও এর জন্য রাজ্য সরকারকেই দুষেছেন উত্তর মালদার বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু৷ তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার নিজের শেয়ারের টাকা দিয়ে দিয়েছে৷ রাজ্য নিজের শেয়ারের টাকা দিতে পারছে না৷ দেবেই বা কোথায় থেকে! এক জায়গার টাকা অন্য খাতে দিয়ে রাজ্য সরকার। আর লুট তো আছেই৷ রাজ্য নিজের শেয়ারের টাকা না দিলে কেন্দ্র তো পরবর্তী কিস্তির টাকা দেবে না৷"