বংশ পরম্পরার ঐতিহ্য ধরে রাখতে নিজের হাতে দুর্গা প্রতিমা গড়ছেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ-র ছাত্র কৌশিক পাল। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দিন-রাত এক করে দুর্গা ঠাকুর তৈরির কাজ করে চলেছেন এই পড়ুয়া। কাঁচামালের দাম বেড়েছে, সেই তুলনায় আয় বাড়ছে না। ফলে ঠাকুর তৈরির বরাত পর্যাপ্ত পরিমাণে পেলেও হাড়ভাঙা খাটুনির পর লাভের অঙ্ক নিয়ে সন্দিহান এই পড়ুয়া।
পুরাতন মালদহের সাহাপুর পঞ্চায়েতের বাজার পাড়া। এই এলাকাতেই বাড়ি গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ-র পড়ুয়া কৌশিক পালের। বাবা বিমল পালের হাত ধরে ঠাকুর গড়ার কাজ শিখেছেন কৌশিক। বংশ পরম্পরার এই কাজ টিকিয়ে রাখতে কৌশিক নিজেও ভীষণভাবে আগ্রহী। এবার বারোটি দুর্গা প্রতিমা তৈরির বরাত পেয়েছেন তিনি। কয়েকজন কারিগরকে সঙ্গে নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জোরকদমে এগোচ্ছে দেবী মূর্তি তৈরির কাজ।
তবে এবছর ঠাকুর তৈরির জন্য মাটির জোগাড় করতে গিয়ে দারুণ সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাঁকে। কৌশিক জানিয়েছেন, আগের তুলনায় এবছর ঠাকুর তৈরির বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়েছে। ফলে ঠাকুর তৈরির বরাত ভালো মিললেও লাভ কতটা হবে তা নিয়ে সন্দিহান যুবক।
কৌশিকের পরিবারে তাঁর বাবা-মা ছাড়াও রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন সদস্য। লেখাপড়া চালানোর পাশাপাশি এমএ-র পডুয়া কৌশিক দুর্গা প্রতিমা গড়ে সংসারের হাল ধরতে চাইছেন। এবছর ইংরেজবাজারের বেশ কয়েকটি ক্লাব কৌশিককে দুর্গামূর্তি গড়ার বরাত দিয়েছে।
তেমনই পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদ থেকেও ঠাকুর তৈরির বরাত পেয়েছেন যুবক। এবছর সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকার দেবীমূর্তি তৈরি করছেন কৌশিক।
আরও পড়ুন- SSC দুর্নীতিতে ফের গ্রেফতার, প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে জালে পুরল CBI
মৃৎশিল্পী কৌশিক পাল বলেন, ''গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পড়ার পাশাপাশি বাবার হাত ধরেই প্রতিমা তৈরির কাজ শিখেছি। গত দু'বছর করোনার জেরে প্রতিমা তৈরির বরাত তেমনভাবে পাইনি। তবে এবার বারোটি দুর্গা প্রতিমা তৈরির অর্ডার মিলেছে। তাই দিন-রাত এক করে কাজ করছি।'' কয়েকজন কারিগরকে সঙ্গে নিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন কৌশিক। এবছর কাঁচামালের দাম অনেকটাই বেড়েছে। এছাড়াও ঠাকুর তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মাটির জোগাড়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে কৌশিককে।
সেপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, ''মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাটি সংগ্রহ করা। অনেক বেশি দামে ওই মাটি কিনতে হচ্ছে। প্রতিমা তৈরির সাজসজ্জা থেকে শুরু করে রং ও বিভিন্ন উপকরণের দামও একধাপে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। বাধ্য হয়েই ঠাকুরের দাম বাড়িয়েছি। কিন্তু পুজো উদ্যোক্তাদরা সেই দাম দিতে রাজি হচ্ছেন না।''
সাহাপুরের নামী মৃৎশিল্পীদের মধ্যে একজন কৌশিকের বাবা বিমল পাল। এক সময় তাঁর হাতের তৈরি প্রতিমা মালদহ শহরের বিভিন্ন ক্লাবে দেখা যেত। এখন তাঁর ছেলে কৌশিক ঠাকুর গড়ার কাজ করছেন। তিনি বলেন, ''ভবিষ্যতে অধ্যাপক বা শিক্ষক হতে চাই। কিন্তু আজকের দিনে চাকরির যা অবস্থা তা পাওয়া খুবই দুষ্কর। সংসারের হাল ধরতেই এই প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছি। এবার ১২টি দুর্গা ঠাকুর তৈরির বরাত পেয়েছি।
''