শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই দলীয় পদ ও মন্ত্রিত্ব খুইয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এদিকে অনুব্রত মণ্ডলের মতো জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পাশেই থাকল তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকার। বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় সিজিও কমপ্লেক্সে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলছেন, 'কে অভিষেক? আমাদের লিডার?' সেদিনই নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দল ও সরকার জ্যোতিপ্রিয়র পাশে আছে।
রেশন বন্টন দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হলেও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পাশে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল ও রাজ্য সরকার। মন্ত্রিসভা থেকে সরানোর কোনও প্রশ্নই নেই। সূত্রের খবর, নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জ্যোতিপ্রিয়র গ্রেফতার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। দল ও সরকার তাঁর পাশে আছে। উত্তর ২৪ পরগণার ক্ষেত্রে ওই জেলার বাকি মন্ত্রীরা আপাতত জ্যোতিপ্রিয়র দায়িত্ব সামলে নেবেন। তিনি ছাড়া শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, রথীন ঘোষ, পার্থ ভৌমিক, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ওই জেলা থেকে মমতা মন্ত্রিসভায় আছেন।
দলের প্রাক্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হয়েছেন ২৩ জুলাই, ২০২২। প্রায় দেড় বছর হতে চলেছে। তাঁর বিরুদ্ধে দ্রুত কড়া পদক্ষেপ করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের পদ থেকে বিতারিত শুধু নয়, তাঁকে বহিষ্কার করেছিল তৃণমূল। মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিয়েছিল। তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের দুটি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছিল। পাশাপাশি প্রচুর মূল্যবান গয়না সামগ্রী উদ্ধার করেছিল ইডি। এখনও জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী। পরবর্তীতে দলের ছোট-বড় কোনও নেতাকেই তাঁর সমর্থনে মুখ খুলতে দেখা যায়নি।
১১ অগাস্ট, ২০২২-তে গরুপাচার কাণ্ডে গ্রেফতার হন বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল তথা কেষ্ট। এক বছর ৩ মাস পরেও তিনিই বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি। তিনি জেলে থাকতেই মিটেছে পঞ্চায়েত নির্বাচন। রাজনৈতিক মহলের মতে, মন্ত্রী, জেলা সভাধিপতি, সাংসদ বা বিধায়ক না হয়েও শুধু জেলা সভাপতি হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসে অনুব্রতর মতো ক্ষমতাবান কেউ নেই। অন্যদিকে সারদা কাণ্ডে গ্রেফতার হয়ে বেশ কয়েক মাস রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন মদন মিত্রও। এবার কেষ্টর মতো বালুর পাশেই থাকল দল।
আরও পড়ুন- বিতর্কের মাঝেই মেয়াদ শেষ বিদ্যুতের, নতুন উপাচার্য পেল বিশ্বভারতী
রাজনৈতিক মহলের মতে, সাংগঠনিক পদ অনুযায়ী দলে তিন নম্বর স্থানে ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই নিরিখে অনেকটাই পিছনে অনুব্রত, জ্যোতিপ্রিয়রা। তবে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এঁদের পাশে থাকার কথা ঘোষণা করেছেন। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জ্যোতিপ্রিয় নিয়ে টু শব্দটিও করেননি। তবে বালু প্রশ্ন রেখেছেন, 'কে অভিষেক? আমাদের লিডার?' মমতা বলছেন, দল ও সরকার আছে জ্যেতিপ্রিয়র পাশেই। এদিকে আজ, বৃহস্পতিবার নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি দফতরে হাজির হওয়ার কথা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।