Advertisment

'আর কত দিন?', কলেজের পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন বেঁধে দিয়ে মন্তব্য মমতার

ইউজিসি সার্টিফিকেট যাঁদের আছে এবং নেই, তাঁদের দুটি ক্যাটেগরিতে রাখা হবে। যাদের ইউজিসি সার্টিফিকেট আছে এমন শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা দশ বছর ধরে এই পদে কাজ করছেন, তাঁদের বেতন করা হল ৩০ হাজার টাকা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
mamata banerjee administrative meeting howrah

হাওড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে কী কী ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী? ছবি- ফেসবুক সৌজন্যে

"দিদির কিন্তু সব জানবার অধিকার আছে। দিদি যে কোনও জায়গায় যে কোনো সময় ঢুকে যেতে পারেন", সোমবার হাওড়ার প্রশাসনিক সভায় এ মন্তব্য করে কর্যত প্রথমেই সুর বেঁধে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাধারণ মানুষকে সরকারি পরিষেবার আওতায় আনতে জনসংযোগ বৃদ্ধি করতে এদিন বিশেষভাবে বিধায়ক এবং কাউন্সিলরদের কড়া নির্দেশ দেন মমতা। তবে এদিন হাওড়ার সভার সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল গেস্ট, অস্থায়ী এবং চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত কলেজ শিক্ষিকদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ ঘোষণা।

Advertisment

আরও পড়ুন- পথ সচেতনতা বাড়াতে হাওড়ায় প্রতিযোগিতা, নতুন ভাবনা দিলেই মিলবে পুরস্কার

এদিন গেস্ট, অস্থায়ী এবং চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত শিক্ষিক শিক্ষিকাদের পদ পরিবর্তিত হয়ে সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত পদ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই-ই নয় এই সব শিক্ষক শিক্ষিকারা সরকারের তরফে যাতে সব রকম সুযোগ সুবিধা পান সেই ঘোষণাও করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে রাজনৈতিক মহলের মত, রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পার্শ্বশিক্ষকরা যেভাবে সরকারকে নিশানা করে পথে নামছেন, সেই বিষয়টির কথা মাথায় রেখেই এদিন এই ঘোষণাটি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, "ইউজিসি সার্টিফিকেট যাঁদের আছে এবং নেই, তাঁদের দুটি ক্যাটেগরিতে রাখা হবে। যাদের ইউজিসি সার্টিফিকেট আছে এমন শিক্ষকদের মধ্যে যাঁরা দশ বছর ধরে এই পদে কাজ করছেন, তাঁদের বেতন করা হল ৩০ হাজার টাকা। আর দশ বছরের কম যাঁরা আছেন, তাঁদের জন্য ২৬ হাজার টাকা করা হচ্ছে। এছাড়া যাঁরা ইউজিসি নথিভুক্ত নন কিন্তু দশ বছর ধরে এই পদে আছেন, তাঁরা পাবেন ২০ হাজার টাকা এবং দশ বছরের কম হলে পাবেন ১৫ হাজার টাকা। গ্র্যাচুয়িটি দেওয়া হবে ৩ লক্ষ টাকা।" এমনকি প্রতি বছর ৩ শতাংশ করে বেতন বৃদ্ধি এবং ষাট বছর পর্যন্ত চাকরির স্থায়ীত্বের কথাও এদিন ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

তবে পার্শ্বশিক্ষক নিয়োগের নামে কলেজ কিংবা স্কুলে যে তোষণনীতি চলে, তা নিয়েও এদিন সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এদিন বলেন, সরকারের অনুমতি নেই এমন কিছুই আগ বাড়িয়ে করা যাবে না। তবে পার্শ্বশিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধির দাবি মেনে নিলেও তা নিয়ে ক্ষোভও উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন,"বেতন বৃদ্ধির দাবি নিয়ে রাজনৈতিক কিছু মানুষ রাস্তায় বসে পড়ছে হঠাৎ হঠাৎ। আর এটা দেখতে গিয়ে আমাদের জনগণের কাজ আর করা হচ্ছে না। খালি বেতন বৃদ্ধির দাবি। কোথা থেকে দেব? সরকারি কর্মীদের পেনশন সব জায়গায় বন্ধ হয়েছে। কিন্তু বাংলা কিন্তু এখনও দিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষকরা এখনও মাসের ১ তারিখে মাইনে পাচ্ছেন। সর্বশিক্ষা অভিযানের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দেয়নি কিন্তু আমাকে এখন সেই টাকা দিতে হচ্ছে। আমরা সব দেনা মিটিয়েও মানবিকতার খাতিরে দিতে বাধ্য হচ্ছি। কিন্তু আর কত দিন? প্যারা টিচারদের বলছি, কেন্দ্রীয় সরকারকে বলুন একটা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক করে দিতে। আমি টাকা দিয়ে দেব। আগে ছিল ৪০০০ টাকা, এখন দেওয়া হচ্ছে ১০,০০০ টাকা। লাফিয়ে লাফিয়ে টাকা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়।"

আরও পড়ুন- গঙ্গার ‘দূষিত জলে’ তৈরি হচ্ছে খাবার, বন্ধ হাওড়ার একাধিক হোটেল

অন্যদিকে, এদিন হাওড়ায় প্রশাসনিক বৈঠক করতে এসে প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়েও মূলত জনসংযোগেই বেশি জোর দেন মুখ্যমন্ত্রী। হাওড়ার বিধায়ক, কাউন্সিলরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "জল-রাস্তা-বাথরুম, মানুষ যাতে এই সব সুবিধা পায় তা দেখতে হবে। গ্রামে গ্রামে যান, এলাকায় ঘুরে দেখে আসুন সব। এতে মানুষ খুশি হবে। আর কাজগুলি করে আমাকে সব রিপোর্ট দিন"। এমনকী পুরসভা এবং পঞ্চায়েতে সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনও নিয়োগ প্রক্রিয়া কিংবা কোনও প্রকল্প সম্পন্ন করা হলে, যো বা যাঁরা করবেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি মামলা করারও হুমকি দেন মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন- ২০০ বছরের পুরানো ছাপাখানার খোঁজ মিলল হাওড়ায়

হাওড়ায় পুরসভায় বর্তমানে কোনও কাউন্সিলর না থাকায় অনেক কাজই অসম্পূর্ণ রয়ে যাচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে এদিন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, লক্ষীরতন শুক্লকে মমতা নির্দেশ দেন এলাকা ঘুরে রাস্তাঘাট পরিদর্শন করার জন্য। এমনকী কলকাতা পুরসভার মতো জমি মিউটেশন এবং ট্রেড লাইসেন্স করার বিষয়গুলিকে জনসাধারণের জন্য আরও সহজ করতে সিঙ্গেল উইন্ডো ব্যবস্থা করার কথাও বলেন। এছাড়াও পাম্পিং স্টেশন, রেশন কার্ড বিলি, স্বাস্থ্য সাথী, কৃষক বিমা, জল ধরো জল ভরো প্রকল্পে যাতে সঠিকভাবে কাজ হয়, সে বিষয়েও নির্দেশ দেন মমতা। বৈঠক শেষে হাওড়াবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, "আপনাদের জেলাতেই নবান্ন। তাই এমন কিছু করবেন না যাতে নবান্নের দিকে কেউ আঙুল তোলার প্রয়োজন বোধ করেন"।

Mamata Banerjee Howrah
Advertisment