দেউচা-পাঁচামির কয়লাখনি প্রকল্প বাতিলের দাবিতে বীরভূমের মহম্মদবাজার থানার বারমেশিয়ার খোলা ময়দানে আদিবাসী সংগঠনের ধরনা-অবস্থান ৫২ দিনে পড়েছে। মহাসভা আগেই দাবি জানিয়েছিল, তাঁরা সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে চান। বুধবার নবান্নে মহাসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর প্রায় ৪০ মিনিট বৈঠক হয়েছে। জোর করে জমি নেওয়া হবে না বলে মুখ্যমন্ত্রী ওই প্রতিনিধি দলকে আশ্বাস দিয়েছেন বলে তাঁদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি সুরাহা চেয়ে স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেসের অত্যাচার ও পুলিশি কেসের কথাও তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন।
দেউচা-পাঁচামি কয়লা খনি প্রকল্পের জন্য আগেই রাজ্য ১০ হাজার কোটি টাকার পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এমনকী কয়েকজনের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের পক্ষ থেকে। এদিকে মহম্মদবাজারের বারমেশিয়ায় ৫২ দিন ধরে রাজ্যের এই কয়লা পকল্পের বিরোধিতা করে ধরনায় বসেছেন বীরভূম জমি জীবন জীবিকা ও প্রকৃতি বাঁচাও মহাসভা। আন্দোলনকারীরা ভিটে-মাটি ছাড়তে নারাজ, তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। নিজস্ব পরিবেশ ছেড়ে তাঁরা থাকতে পারবেন না, এটাই আদিবাসীদের মূল দাবি। বুধবার মহাসভার ৩১ জনের একটি প্রতিনিধি দল নবান্নে আসেন। তাঁদের মধ্যে ৮ জন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হাজির ছিলেন। সেখানেই তাঁদের নানা সমস্যার কথা বিস্তারিত ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কাছে তুলে ধরেন।
মহাসভার আহ্বায়ক গণেশ কিস্কু ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'আমাদের সংগঠন থেকে একটা প্রতিনিধি দল এদিন নবান্ন গিয়েছিল। আমরা তো সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইছিলাম উনি কী বলতে চাইছেন। আমাদের এখানকার কথা মুখ্যমন্ত্রী শুনেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথা আমাদের প্রতিনিধিরা শুনেছে। আলোচনা হয়েছে।' গণেশের কথায়, 'আলোচনায় বোঝা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন গ্রামের লোকেদের ইচ্ছা না থাকলে কয়লাখনি হবে না। জোর করে জমি নেবে না সরকার।'
বারমেশিয়ায় আন্দোলনে আদিবাসীরা স্পষ্ট করেছেন তাঁরা নিজেদের বসতি এলাকা ছেড়ে যেতে নারাজ। গণেশ কিস্কু বলেন, 'আমরা নিজেদের পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে যাব না। আমরা প্রকৃতির পূজারী। এই এলাকা ছাড়তে চাইছি না। তবে পুনর্বাসন প্যাকেজ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। জমি নিলে আমরা কী কী সমস্যায় পড়তে পারি তা-ও বিস্তারিত জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।'
২১ ফেব্রুয়ারি নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, 'দেউচা-পাঁচামিতে জোর করে জমি নেওয়া হবে না। তবে এই খনি হলে এক লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।' গনেশে দাবি, 'এদিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মহাসভার প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেছেন, গ্রামের মানুষ না চাইলে কয়লাখনি হবে না। জোর করে কাউকে উচ্ছেদ করা হবে না।' একইসঙ্গে সংগঠনের প্রতিনিধিরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, জোর করে জমি না নেওয়া হলে ওখানে তৃণমূলের লোকজন কেন অত্যাচার করছে? মহাসভার দাবি, এসব আজ থেকে আর কিছু হবে না বলে মমতা আশ্বাস দিয়েছেন। প্রতিনিধিরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পুলিশি কেস তুলে নেওয়ারও দাবি জানিয়েছে।
তবে এখনই ধরনা তুলে নেওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি মহাসভা। প্রতিনিধিরা নবান্ন থেকে ফিরে এলে আগামিকাল, বৃহস্পতিবার সাংগঠনিক স্তরে তাঁরা আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।