ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে তছনছ দক্ষিণ ২৪ পরগণার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সোমবার কাকদ্বীপে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন ত্রাণ এবং পুনর্বাসনের কাজ খতিয়ে দেখে প্রশাসনিক বৈঠকও সারেন মুখ্যমন্ত্রী। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের ভয়াবহতার পর উত্তরবঙ্গ সফর বাতিল করে আজ বুলবুল বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন তিনি। কাকদ্বীপের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসীদের আশ্বস্ত করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "সরকারের তরফে সব রকম সাহায্য করা হবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে।"
প্রথমে হেলিকপ্টারে করে গোটা এলাকা পরিদর্শন করে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর কাকদ্বীপে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে এলাকার জেলাশাসক, নেতা, কর্মীদের নির্দেশও দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "প্রচুর ঘরবাড়ি ও কৃষি জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাজ্য সরকারের আবাস যোজনার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে দাঁড়াতে বলবো জেলা প্রশাসনকে। শাক সবজির প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। পাকা ধান ও পানের বরোজেরও ক্ষতি হয়েছে। ফসলের জন্য ১০০ শতাংশ বিমা করার প্রয়োজন। ১০০ দিনের প্রকল্পকে কাজে লাগিয়ে সকলকে নিয়ে চেষ্টা করুন যাতে খুব তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়। যা ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের চেষ্টা করতে হবে। আমাদের তরফ থেকে যতোটা করা যায় সব সাহায্য করা হবে।"
আরও পড়ুন- বুলবুল তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড বাংলার উপকূল, নিহত ১০
এছাড়াও বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে পানীয় জল সরবরাহ করতেও বৈঠক থেকেই নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "খাবার জলের ক্ষেত্রে বিশেষ গাড়ির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ জেলাগুলিতে জেলাশাসকদের উদ্যোগে টাস্ক ফোর্স গঠন করতে হবে। ৪৮ ঘন্টা পর পর নজরদারি করা হবে।" এদিনের বৈঠক থেকে ধন্যবাদও দেন জেলার কর্মকর্তাদের। মমতা বলেন, "আপনাদের মানবিকতা ও উদ্যোগে প্রচুর মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে এবং প্রাণহানি রক্ষা করা হয়েছে। তবে এখনও অনেক কাজ বাকি। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলিতে বিস্কুট, মুরি, বেবি ফুড, ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বেবিফুড পাঠানোর সময় দেখে নেবেন যে তার যেন মেয়াদ থাকে।"
আরও পড়ুন- বুলবুল মোকাবিলায় ‘তৎপর’ মমতার প্রশংসায় রাজ্যপাল
প্রসঙ্গত, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড দুই চব্বিশ পরগনা। ব্যাপক ভাবে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দুই মেদিনীপুরেও। বুলবুলের দাপটে ইতিমধ্যেই উত্তর চব্বিশ পরগনার বসিরহাট, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে বেশ কয়েক জনের মৃত্যুও হয়েছে। বুলবুলের দাপটে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন পূর্ব মেদিনীপুর এবং উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা। অধিকাংশ জায়গাতেই রাস্তাঘাট ভেঙে গিয়েছে। উপড়ে গিয়েছে অসংখ্য গাছ। ধসে গিয়েছে মাটির বাড়ি। গাছ পড়ে আটকে গিয়েছে অনেক রাস্তা। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে চাষের কাজেও। পূর্ব মেদিনীপুরে ধান ও পান চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বুলবুল বিধ্বস্ত এলাকার সামগ্রিক অবস্থা জানতে চেয়ে রবিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী। খোঁজখবর নেওয়ার পর কেন্দ্রের তরফে রাজ্যের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন মোদী। রাজ্যপাল ধনকড়ও টুইটে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রীর উগদ্যোগী ভূমিকার প্রশংসা করেন।