কলকাতা সহ রাজ্যের গণপরিবহণ নিয়ে জটিলতা অব্যাহত। পথে বাস না নামালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে, মুখ্যমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারিতেও টলানো গেল বাসমালিকদের সংগঠনের কর্তাদের। বরং তাঁরা মনে করেন, রাজ্য সরকার রিকিউজিশন দিয়ে বাস পথে নামালে তো ভাল। দুটি বাস সংগঠনের মালিকদের বক্তব্য, "ভাড়া বৃদ্ধিই বিকল্প পথ। তাছাড়া কোনও ভাবেই রাস্তায় বাস নামানো সম্ভব নয়। বরং যাঁরা কথা দিয়েছে তাঁরা বাস নামানোর ব্যবস্থা করুক।" অন্যদিকে অল বেঙ্গল বাস ও মিনিবাস সমন্বয় সমিতি দাবি করেছে কলকাতা ও শহরতলিতে তাঁদের দেড় হাজার বাস চলছে। যদিও সরকারের ৬ হাজার বাসকে সাহায্য করার তত্ব মানতে চান না তাঁরাও।
আনলক ওয়ান শুরু হওয়ার পর থেকেই পথে বাস নামানো নিয়ে জটিলতা চলছে। চলছে নানান চাপান-উতর। সরকার ৬০০০ বাসের জন্য মাসে ১৫০০০টাকা করে বিশেষ সাহায্যের কথা ঘোষণা করে। তাতে বাসমালিকরা জানিয়ে দেয়, ভাড়া বৃদ্ধিই একমাত্র পথ। প্রয়োজনে সরকারি বাসের ভাড়া অনুযায়ী বেসরকারি বাসেরও একই ভাড়ার দাবি জানানো হয়। একদিকে বাসমালিক অন্যদিকে সরকারি সিদ্ধান্তের টানাপোড়েন চলতে থাকে। ক্রমশ রাস্তায় বাসের সংখ্যা কমতে থাকে। যার দরুন ভোগান্তিতে পড়ছেন রাস্তায় কাজে বেরনো সাধারণ মানুষ। শেষমেশ মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী পথে বাস নামানো নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দেন। প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন। সরকার প্রয়োজনে বেসরকারি বাস পথে নামানোর ব্যবস্থা করবে বলেও তিনি জানিয়ে দেন। তবুও বাসমালিকদের সংগঠনের একটা বড় অংশ তাঁদের সিদ্ধান্তে অনড়।
আরও পড়ুন: ‘কথা না শুনলে সরকারই চালাবে বেসরকারি বাস’, চরম হুঁশিয়ারি মমতার
অল বেঙ্গল বাস ও মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, "গাড়ি চালাতে পারছিলাম না। আমরা আবেদন করেছিলাম আমাদের গাড়িগুলি রিকিউজিশন করে নেওয়া হোক। আমরা স্টাফ দিয়ে সহযোগিতা করব। বাস না দাঁড় করিয়ে রাস্তায় চালাতে চাই। লকডাউনে স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়ে যাওয়া, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়ার জন্য রিকিউজিশন দিয়ে সরকার বাস নিচ্ছে। একমাস ধরে বাস চালানোর চেষ্টা চলছে। যাঁরা নামছে না কী জন্য নামছে না তাঁরা জানে। আমাদের সংগঠনের সদস্যরা বাস চালাচ্ছেন। আজ কোনও কোনও রুটে কমেছে, কোথাও বেড়েছে।" অন্যান্য সংগঠন যখন বাস নামাচ্ছে না তখন সমন্বয় সমিতির দাবি তাঁরাই পরিবহণ সচল রেখেছে। রাহুলবাবুর দাবি, "কলকাতা ও শহরতলিতে ১৫০০ হাজার বাস-মিনিবাস নেমেছে। আমরা বলেছিলাম বিভাজন যাতে না হয়। সরকারি সাহায্য ছাড়াই আমরা এক মাস বাস চালিয়েছি। ৬০০০ বাস চিহ্নিত করা সহজ নয়। এটা অসম্ভব। পরিবহণমন্ত্রী বলেছিলেন আলোচনা হবে। আপক্ষে করছি।"
অন্যদিকে জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে ভাড়া বাড়ানো ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। তাঁরা নিজেরা পথে বাস নামাতে পারবেন না। কারণ এর ফলে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। কাউন্সিলের সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনও জায়গা নেই। এতো বন্ধ নয়, কোভিড ১৯-এর শিকার হয়েছি। কেন্দ্র ও রাজ্য বলেছে গণপরিবহন সচল রাখতে হবে। সেই রীতি মেনে চলতে গিয়ে দেখেছি আয়-ব্যয়ের মধ্যে সমতা থাকছে না। সেক্ষেত্রে ভাড়া বৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প রাস্তা নেই। সরকার যে অধিগ্রহণের কথা বলছে তার নোটিফিকেশন কলকাতা সহ সারা রাজ্যেই করতে হবে। সরকারের ওপর বিষয়টা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।" বাসের সমস্যা সমাধানের জন্য গঠিত হয়েছিল রেগুলারিটি কমিটি। সেখানে সংগঠনের কর্তারাও ছিলেন। তপনবাবু বলেন, "রেগুলারিটি কমিটি কোনও কার্যকরী ভূমিকা নেয়নি। একটা মিটিংও হয়েছিল। ভাড়ার জন্যই কমিটি গঠিত হয়েছিল। সরকার ১০০ শতাংশ রিজিড থেকে গেল। পরবিহণ দফতরের আধিকারিক ও কিছু মানুষ সরকারকে ভুল বুঝিয়েছে।"
বাস ও মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ বসু বলেন, "আমরা এখনও বলছি ১৫ হাজার টাকা নিয়ে বাস চালানো সম্ভব নয়। এটাও বলছি দেড় হাজার বাস কলকাতায় চলছে না। তাহলে সরকারকে এত চিন্তা-ভাবনা করতে হত না। আমরা একই জায়গায় অনড় আছি। রিকিউজিশন করে গাড়ি চালালে আমরা সহযোগিতা করব। তবে বাস না নামানোর সিদ্ধান্তে আমরা অবিচল।" প্রদীপ বসুও তপনবাবুর সঙ্গে সহমত। প্রদীপবাবুর বক্তব্য, "পরিবহণ দফতরের যে আধিকারিকরা সংগঠনের কর্তাদের নিয়ে গিয়েছিলেন দায়দায়িত্ব তাঁদের। মুখ্যমন্ত্রী ও পরিবহণমন্ত্রীকে অসম্মান করার জন্য তাঁদের দায় নিতে হবে। যাঁরা বৈঠকে গিয়েছিল তাঁরা কথা দিয়ে কথা রাখেনি। আমাদের দায়-দায়িত্ব না। যদি আমাদের কাছ থেকে রিকিউজিশন করে গাড়ি নেয়। তাহলে আমাদের সংগঠন থেকে যথাযথ সাহায্য করব।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন