সদ্য বেঙ্গালুরুতে ২৬ দলের বিজেপি বিরোধী মহাজোট দ্বিতীয় দফার বৈঠক করেছে। সেই মহাজোটের বৈঠকে কংগ্রেস, সিপিএম নেতৃত্বও হাজির ছিল। এই দুই দল এরাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবল প্রতিপক্ষ। ইন্ডিয়া জোট নিয়ে নয়া বার্তা দিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। ২১ জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবসের মঞ্চে কংগ্রেস সম্পর্কে একটি কথাও বলেননি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিপিএমের বিরুদ্ধে দুচার কথা বলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এদিনও 'রাহুল আমাদের ফেভারিট তত্ত্ব' বজায় রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস নিয়ে না ছিল উচ্ছ্বাস, না ছিল আক্রমণ।
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে এরাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিল বাম-কংগ্রেস জোট। তখন এখানে বিজেপির তেমন শক্তি ছিল না। পরবর্তীতে এরাজ্যে বাম-কংগ্রেস, বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেস, ত্রিমুখী লড়াই জারি রয়েছে। সদ্য গ্রামপঞ্চায়েত নির্বাচনেও এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে বাংলা জুড়ে। কিন্তু বেঙ্গালুরুর জোট বৈঠকের পর তৃণমূল নেতৃত্ব কংগ্রেস-সিপিএম নিয়ে নরম মনোভাব নিয়েছে। অন্তত শুক্রবার ধর্মতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের জনসভায় সেই দৃশ্য ফুটে উঠেছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ, পাশাপাশি ইন্ডিয়া জোট নিয়েই তৃণমূল লড়াই করতে আগ্রহী তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ইন্ডিয়া জিতছে বলেই বক্তব্যের শুরুতেই দাবি করেছেন।
২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে আক্রমণের পাশাপাশি বরাবরই কংগ্রেস ও সিপিএমকে নিশানা করেছেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এমনও অভিযোগ করেছেন এখানে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের সঙ্গে বিজেপির গোপন আঁতাত রয়েছে। তাছাড়া পৃথকভাবেও কংগ্রেস ও সিপিএম আক্রমণ করে থাকেন মমতা-অভিষেক সহ তৃণমূল নেতৃত্ব। ২১ জুলাই ১৩ জন শহিদ হয়েছে বামেদের আমলেই। এদিন কংগ্রেস সম্পর্কে ভাল-মন্দ টু শব্দটিও করেননি মমতা-অভিষেক।
আরও পড়ুন- ‘এবার ইন্ডিয়ার ব্যানারেই সব লড়াই’, মোদী হঠানোর ডাক দিয়ে বার্তা মমতার!
২০০৩ পঞ্চায়েত নির্বাচনের হিংসা নিয়ে মুখে খুলেছেন মমতা। এরাজ্যে পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় রাজনীতি নিয়ে এসেছে সিপিএম সেকথাও বলেছেন তৃণমূল নেত্রী। এর বাইরে সেভাবে সিপিএমকে আক্রমণ করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক তো কংগ্রেস-সিপিএম নিয়েও কোনও কথাই বলেনি। বরং ইন্ডিয়া জোটে শরিক হওয়া ২৬ দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অভিষেক। তৃণমূল নেত্রী তো ইন্ডিয়া জোট নিয়ে একাধিক বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন।
রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, ইন্ডিয়া জোটের কথা মাথায় রেখেই কংগ্রেস-সিপিএম নিয়ে সরব হয়নি তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। জোটের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে ঘাসফুল শিবির। ইন্ডিয়া জোট গঠনের পরও সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন এখানে বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবেন তাঁরা। কংগ্রেসেরও একাধিক নেতৃত্ব একই বক্তব্য রেখেছেন। তা সত্ত্বেও কিন্তু ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে তৃণমূলের পক্ষ থেকে পাল্টা কোনও বক্তব্য রাখা হয়নি।
আরও পড়ুন- অভিষেকের ঘোষণায় সায় নেই মমতার! একুশের ভরা সভায় সাফ জানালেন সেকথাই!
পর্যবেক্ষক মহলের মতে, কংগ্রেস-সিপিএমকে এই আক্রমণ না করাও বড় রাজনৈতিক কৌশল তৃণমূল কংগ্রেসের। এরপর জোটের বিজেপি বিরোধী বৈঠক রয়েছে মুম্বইতে। সেখানে ১১ জনের কোর কমিটি গঠন করা হবে। তার আগে হয়তো বাম-কংগ্রেস নিয়ে মুখ বন্ধ রাখার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল।