সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। কিন্তু শাসক দলের বিরুদ্ধে গুচ্ছ গুচ্ছ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আবাস কেলেঙ্কারি থেকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত তৃণমূল। এই অবস্থায় সোমবার নজরুল মঞ্চের কর্মী সম্মেলন থেকে দলীয়স্তরে নয়া কর্মসূচির ঘোষণা করা হল। 'দিদির সুরক্ষাকবচ' কর্মসূচির সূচনা করলেন খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই কর্মসূচির মাধ্যমেই জমসংযোগের কাজ করবে জোড়-ফুল শিবির।
এদিন শুরুতেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'আগামী ৬০ দিন ধরে বুথস্তরে কর্মসূচি চলবে। সেই কর্মসূচির আওতায় আগামী দু'মাস তৃণমূলের সাড়ে সাড়ে তিন লাখ কর্মী ১০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছবেন। রাজ্যস্তরের নেতারা সাধারণ মানুষের বাড়ি গিয়ে অভাব-অভিযোগ শুনবেন। তারপর তৃণমূলের দূতরা পৌঁছে যাবেন। জানতে চাইবেন যে সমস্যার সুরাহা হয়েছে কিনা।এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে, দিদির সুরক্ষাকবচ।' দুয়ারে সরকারে যে ১৫টি সরকারি প্রকল্প রয়েছে সেগুলির সুবিধা প্রকৃত উপভোক্তারা পাচ্ছেন কিনা, তা দেখা হবে 'দিদির সুরক্ষাকবচ'-এর মাধ্যমে। আগামী ১১ জানুয়ারি থেকে এই কর্মসূচি শুরু হবে। কোনও মানুষ সরকারি সুবিধা না পেলে 'দিদির দূত'রা অর্থাৎ তৃণমূল কর্মীরা নাম নথিভুক্ত করে দেবে।
অভিষেকের পরই নিজের বক্তব্য পেশ করেন তৃণমূল নেত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'দিদির সুরক্ষাকবচ নামটা আমার দেওয়া নয়। তৃণমূলের আইটি সেল সেই নাম দিয়েছে।' 'দিদির সরক্ষাকবচ' কর্মসূচির সূচনা করে মমতা বলেন, 'আমরা মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। আমরা যত এগোব, তত তৃণমূলের দায়বদ্ধতা বাড়বে। দুয়ার সরকারের মতো মানুষের দরজায় পৌঁছাবে তৃণমূল কংগ্রেস। দুয়ারে সরকারের অপর একটা রূপ হল দিদির সুরক্ষাকবচ।' মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই কর্মসূচি ক্ষোভ উগরে দেওয়ার জন্য, বরং মানুষ যাতে প্রকৃত সরকারি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পায় তাতে নজরদারির জন্য।
এদিন বিরোধীদের ধবংসাত্মক রাজনীতি নিয়েও সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিরোধী দল থাকাকালীন তৃণমূলের আন্দোলনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেছেন, 'আমরা যখন বিরোধী ছিলাম, তখন কোনও ধ্বংসাত্মক কাজ করিনি। সবসময় গঠনমূলক কাজ করিনি। সরকারে থাকলে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। আমরা বিরোধী দলে থাকার সময় যেভাবে সংগ্রাম করতাম, এখনও সেভাবে করে যাচ্ছি। কারণ কয়েকটি বিরোধী দল হাঙ্গামা করছে।'
আরও পড়ুন- বাংলার বকেয়া নিয়ে মোদীর বিরুদ্ধে কড়া কথায় নারাজ! মমতার হল কী?
মমতার দাবি, 'বাংলায় ১০ কোটির বেশি মানুষ। উন্নয়নের কাজের দিকে নজর না দিয়ে একটা-দুটো ঘটনা নিয়ে মিডিয়ায় আসছে। যা নিয়ে হইচই হচ্ছে। একটা-দুটো ঘটনাও কাম্য নয়।'
রাজনীতিতে শব্দের প্রয়োগ নিয়েও বিরোদীদের একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নামে এই রাজ্যে যে কুকথা বলা হয়, এটা সারা ভরতবর্ষে আর কোথাও নেই।'
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এদিনও অর্থ না দেওয়ার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'মার্চে বছর শেষ হয়। আবাস যোজনার টাকা পাঠাচ্ছে ডিসেম্বরে। কীভাবে ওই সময়ের মধ্যে টেন্ডার ঢেকে কাজ হবে? এটা আমাদের ব্যর্থ হিসেবে দেখানোর একটা চেষ্টা। কিন্তু আমি মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। কেন্দ্র ১০০ দিনের প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে না। তারপরও আমাদের থেকে ২,০০০ কোটি টাকার বেশি ৪৮ লাখ কর্মদিবস তৈরি করা হয়েছে।'
তৃণমূল নেত্রীর হুঁশিয়ারি, 'একটা পোকা ধান যদি কোনও জন্মায়, তাহলে আগেই পোকা নির্মূল করতে হবে।'