জানাই ছিল, উত্তরবঙ্গের মতো জঙ্গলমহলে প্রশাসনিক সফরে গিয়ে কল্পতরু হবেন মুখ্যমন্ত্রী। হলও তাই। মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ককে মাথায় রেখে ঢালাও সুযোগ-সুবিধার কথা ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, মাওবাদী হামলায় মৃতের এবং ১০ বছর ধরে নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবারের সদস্যকে চাকরি অথবা ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ। এদিন এমনই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পাশাপাশি আরও একটি বড় ঘোষণা হল, দাঁতাল হাতির হামলায় মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যকে চাকরি দেওয়া। মুখ্যমন্ত্রী জানান, মৃতের পরিবারের একজনকে রাজ্য পুলিশে হোমগার্ড পদে চাকরি দেওয়া হবে। এদিন এমনই একজনের পরিবারের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন মমতা।
জঙ্গলমহলে, বিশেষ করে ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের সিংহভাগ অঞ্চলে মাওবাদী ও দাঁতালের তাণ্ডব চিরকাল মাথাব্যথার কারণ বাসিন্দাদের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের আমলে গত আট-নয় বছরে জঙ্গলমহলে জমি হারিয়েছে মাওবাদীরা। কিন্তু এখনও কিছু কিছু অঞ্চলে মাওবাদীদের আনাগোনা রয়েছে বলে দাবি আদিবাসীদের। মাওবাদী নেটওয়ার্ক ভাঙতে জঙ্গলমহলে প্যাকেজের মাধ্যমে বহু মাও নেতা-নেত্রীকে মূল স্রোতে ফিরিয়েছে সরকার। মাও ঘনিষ্ঠ জনগণের কমিটির নেতা ছত্রধর মাহাতোকেও বড় পদ দিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু একুশের লক্ষ্যে বিধানসভা ভোটের আগে আদিবাসীদের মন পেতে মরিয়া মমতা। সেই লক্ষ্যেই মাও হামলায় নিহতের পরিবারের সদস্যকে চাকরি অথবা আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন সব জেলার ধর্ষণ-অপহরণের পরিসংখ্যান দিয়ে টুইটে মমতা সরকারকে খোঁচা ধনকড়ের
সেইসঙ্গে দাঁতালের হানায় একাধিক গ্রামবাসীর মৃত্যুর ঘটনায় জঙ্গলমহলে প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে বাসিন্দাদের। বনদফতরকে একাধিকবার বলেও দাঁতালের হানায় মৃত্যুর ঘটনা আটকানো যায়নি। সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতেই এদিন মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, "ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুরে হাতির তাণ্ডবে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সেই কারণে সরকারের তরফে সিদ্ধান্ত হয়েছে, মৃতের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করা হবে। এর সঙ্গেই মৃতের পরিবারের একজন সদস্য হোমগার্ডের চাকরি পাবেন।" একইসঙ্গে এদিন জেলার পুলিশ আধিকারিকদের সাফ নির্দেশ দেন, পুজোর জন্য ক্লাবগুলিকে রাজ্য সরকার যে ৫০ হাজার টাকা দিচ্ছে তা যেন পুলিশ আধিকারিকরা নিজে দায়িত্ব নিয়ে বণ্টন করে দেন। এই কাজে পঞ্চায়েত-পুরসভা, দলের কোনও নেতা মাথা গলাবে না, তা স্পষ্ট করে দেন মমতা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন