পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সাগরদিঘি উপনির্বাচনে পরজয়ের ধাক্কা সামলে উঠে ফের পুরনো ফর্মুলাতেই ভরসা রাখছে তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি লোকসভা ভোটে রাজ্যে ও বাংলার বাইরে সংগঠন চাঙ্গা করতে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই দলের ভরসা। বিজেপি বিরোধী দলগুলির নেতৃত্বের সঙ্গে আজ থেকেই বৈঠক শুরু করে দিলেন দলের মুখ মমতা।
সম্প্রতি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে বামেদের সমর্থনে কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হয় তৃণমূল কংগ্রেস। উপনির্বাচনে এই হারের পর পর্যালোচনার জন্য বিশেষ কমিটিও গঠন করে তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের মতে, বিশেষত মুসলিম ভোট সরে যাওয়ায় কপালে ভাঁজ পড়ে তৃণমূল নেতৃত্বের। সাগরদিঘির হার নিয়ে দলের নানা স্তরে কাঁটাছেড়া চলতে থাকে। একইসঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিতে দলের মন্ত্রী, বিধায়ক থেকে যুব নেতা জেলবন্দী। গরুপাচার কাণ্ডে দিল্লিতে তিহার জেলে বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মন্ডল। এই পরিস্থতিতে দলে আদিদের গুরুত্ব বৃদ্ধি করল তৃণমূল।
আরও পড়ুন- ঘুরপথে জেলায় জেলায় তৃণমূলের ‘অবজার্ভার’ ববি-অরূপরা, সংখ্যালঘু সেলেও বিরাট অদলবদল
জেলায় জেলায় দলীয় সভা-সমাবেশ করছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক বৈঠক করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে গোয়া, পরে ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে দলীয় সংগঠন দেখভাল করছিলেন অভিষেক। গোয়ায় খালি হাতে ফেরে, ত্রিপুরায় লজ্জাজনক ফল হয়, মেঘালয়ে হাকডাক করে ৫ বিধানসভা আসনে জয় পায় তৃণমূল। রাজ্য ও সর্বভারতীয় স্তরে নয়া বিরোধী ঐক্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের হাতে দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন। এদিন সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, আগামী ২৩ মার্চ বৈঠক করবেন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে। তারপর তিনি দিল্লি যাবেন।
আরও পড়ুন- ‘রাহুলকে মোদির বিরোধী বানাতে চাইছে বিজেপি’, ফাঁস করল তৃণমূল
সুদীপ জানিয়ে দেন, প্রতিমাসে তিন দিন জেলা স্তরে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করতে বৈঠক করবেন মমতা। অর্থাৎ রাজ্যের সংগঠনের হালও ধরতে চলেছেন মমতা। এরই পাশাপাশি এদিন জেলায় জেলায় নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, মলয় ঘটক, সিদ্দিকুল্লা, মোশারর হোসেনদের। অভিজ্ঞ মহলের মতে, সাগরদিঘিতে হারের পর আর ঝুঁকি নিতে চাইছে না তৃণমূল। সংখ্যালঘু ভোট ফসকে না যেতে মুসলিম অধ্যুষিত মালদা-মুর্শিদাবাদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিদ্দিকুল্লা, মোশারর হোসেনকে। তাছাড়া ফের জনসংযোগ কর্মসূচির ওপর জোর দিচ্ছে তৃণমূল।
রাজনৈতিক মহলের মতে, পর্যবেক্ষক শব্দ ব্যবহার না করলেও ঘুরিয়ে পুরনো পথেই হাঁটছে তৃণমূল। জেলায় জেলায় শীর্ষ নেতৃত্বদের দায়িত্ব দিল দল। একসময় জেলা ভিত্তিক পর্যবেক্ষক প্রথা তুলে দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, শুক্রবার কালীঘাটে তৃণমূলের বৈঠক শেষে শীর্ষ নেতৃত্ব হিসাবে যাবতীয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করলেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায়। এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। এক্ষেত্রে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। পুরনোরা অবহেলিত বলে সম্প্রতি দলের অন্দরে আলোচনার ঝড় উঠেছিল। সাংবাদিক বৈঠকেই আঁচ মেলে পুরনোদের গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূল।