দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একান্ত সাক্ষাতের পরই নানা জল্পনা ছড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক মহলে। ওই সাক্ষাৎ নিয়ে নিমেষেই বিরোধীরা মোদী-দিদির গট-আপ নিয়ে শোরগোল ফেলে দেয়। এবার রাজ্য বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারীর সাক্ষাৎ নিয়ে ফের হইচই পড়ে গিয়েছে বঙ্গ রাজনীতিতে। যদিও এই সাক্ষাতে শুভেন্দুর সঙ্গে আরও তিন বিজেপি বিধায়ক হাজির ছিলেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, তবু সেই সাক্ষাৎ যে নেহাতই সৌজন্য ছিল তা বোঝাতে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝাঁঝ বাড়াতে কোনও সময়ই নেননি শুভেন্দু। শনিবার তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ শানিয়েছে তিনি। তবে বিজেপি-তৃণমূলের সম্পর্ক নিয়ে বিরোধীরা আগের অবস্থানেই অটুট।
সারদা চিটফান্ড কাণ্ডে আইপিএস রাজীব কুমারের বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিবিআই। ধর্মতলায় মঞ্চ বেঁধে বিরোধিতা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরবর্তীতে দিল্লিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তখন রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ না করায় গটআপের অভিযোগ এনে সরব হয়েছিল বাম-কংগ্রেস। মোদী-দিদি আঁতাত নিয়ে মাঝে-মধ্যেই অভিযোগ এনে থাকে বিরোধীরা। এবার মমতা-শুভেন্দুর সাক্ষাতের পর একই অবস্থান দেখা যাচ্ছে বিরোধীদের। রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূল ছাড়ার পর গত ২ বছর ধরে যেভাবে মমতা ও অভিষেকের সঙ্গে শুভেন্দুর হুঁশিয়ারি পাল্টা হুঙ্কার চলেছে তাতে এই সাক্ষাৎ ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।
আরও পড়ুন- পঞ্চায়েত ভোটের আগে সামাজিক প্রকল্পের ওপর ভর করেই এগোতে চাইছে কেজরিওয়ালের আপ
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বাম-কংগ্রেস এবার রাজ্যে তৃণমূল-বিজেপির আঁতাতের প্রশ্ন তোলার বড় সুযোগ পেয়েছে। যদিও সাক্ষাৎকে তৃণমূল ও বিজেপি সৌজন্যের রাজনীতি বলেই দাবি করেছে। শুভেন্দুর ডিসেম্বর তত্ত্ব নিয়ে চর্চা চলছে রাজনৈতিক মহলে। সরকার ফেলবে না তবে বড় চোর ধরা পড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা পেতে শুরু করেছে রাজ্য। তারই মধ্যে দুই প্রবল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সাক্ষাৎ।
এরাজ্যে মুকুল রায়-সহ বেশ কয়েকজন বিজেপি বিধায়ক তৃণমূলে ফিরলেও খাতায়-কলমে তাঁরা বিধানসভায় পদ্ম শিবিরেই রয়েছেন। সম্প্রতি একথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছেন। মুকুল রায় তো এর আগে বলেই দিয়েছেন বিজেপি মানেই তৃণমূল, তৃণমূল মানেই বিজেপি। তারওপর সামনেই রাজ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে মমতা-শুভেন্দুর সাক্ষাৎ বিরোধীদের হাতে বড় অস্ত্র তুলে দিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও অভিজ্ঞ মহলের একংশের মতে, মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতা সাক্ষাৎ করবেন এটাই স্বাভাবিক। তার মধ্যে অন্য কিছু খোঁজা অনুচিত। তবে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে রণংদেহী মূর্তি দেখা গিয়েছে একে অপরের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজনীতিতে স্বাভাবিক বলে কিছু অবশিষ্ট নেই বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।
আরও পড়ুন- বাংলার এই প্রান্ত যেন বারুদের স্তূপ! পুলিশি টহলদারির মাঝেও মুহুর্মূহু বিস্ফোরণ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শুভেন্দু অধিকারী তিন বিধায়ক-সহ সাক্ষাৎ করেছিলেন। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, একান্ত সাক্ষাৎ হলে রাজনৈতিক মহলে আরও বড় জল্পনার সৃষ্টি হত। তোলপাড় হত বঙ্গ রাজনীতি। একেই একাধিক আদি তৃণমূল নেতা তথা বিজেপি বিধায়ক পুরনো দলে ফিরে গিয়েছেন। সাংসদ অর্জুন সিং পুরনো দলে ফিরেছেন। এক্ষেত্রে গুঞ্জন আরও বাড়ত বলেই ধারনা পর্যবেক্ষক মহলের।