ছেলেধরা সন্দেহে এক মহিলাকে পাকড়াও করে মারধর করতে যাচ্ছিল পাড়ার ছেলে-ছোকরারা। রুখে দাঁড়ান এলাকারই কয়েকজন। খোঁজ খবর করে জানা যায়, মহিলা আদৌ ছেলেধরা নন। তিনি আসলে আ্যালজাইমার্সের রোগী। পথ ভুলে চলে এসেছেন বহুদূর।
এই ঘটনাটি ঘটেছে বারুইপুরের ধোপাগাছির বটতলায়। শেষ পর্যন্ত মহিলার পরিবারের খোঁজ মেলে। জানা যায়, তিনি ডায়মন্ড হারবারের রামনগর থানা এলাকার বাসিন্দা। সেই রাতে গ্রামবাসীরাই আগলে রাখেন মহিলাকে। সকালে স্বামী-ছেলের হাতে তাঁকে তুলে দেন তাঁরা।
বুধবার রাত তখন ১০টা। গোটা পাড়া প্রায় নিঝুম। ছেলে-ছোকরারা পাড়ার মোড়ে বসে গল্প গুজব করছিল। হঠাৎই তারা দেখে, বছর পঞ্চাশের ওই মহিলা পাড়ার রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। পাড়ায়-পাড়ায় ছেলেধরার আনাগোনা নিয়ে ক’দিন ধরেই নানা আলোচনা চলছে এদিক-ওদিক। ওই মহিলাকে দেখে সন্দেহ জাগে পাড়ার ছেলেদের। তাঁকে ধরে রেখে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। কিন্তু মহিলা কিছুই বলতে পারছিলেন না। তাতে সন্দেহ আরও বাড়ে তাদের। কথা বার করতে ঘা’কয়েক দেওয়ার নিদানও দেন কেউ কেউ।
ঘটনাচক্রে সেই সময় ওই এলাকায় এসে পড়েন বিপুল পর্বত নামে এক ব্যক্তি। পেশায় কেবল অপারেটর বিপুল কাছেই টংতলা এলাকায় থাকেন। ওই এলাকায় একটা কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। জটলা দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। দ্রুত বিষয়টি বুঝে নিয়ে মহিলার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন তিনি। মহিলার সাজ-পোশাক, খালি পা দেখে বিপুল বুঝে যান, তিনি ছেলেধরা হতে পারেন না। ছেলে-ছোকরাদের সে কথা বোঝান। পাড়ার অন্য মহিলাদের ডেকে এনে ওই মহিলার শুশ্রুষার ব্যবস্থা করেন। খাবারেরও ব্যবস্থা হয়।
ইতিমধ্যে হ্যাম রেডিও-র সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিপুল। মহিলা অসংলগ্ন কথাবর্তার মাঝেই ডায়মন্ড হারবারের কথা বলেছিলেন। তা ধরেই মহিলার ছবি দিয়ে খোঁজ শুরু হয়। রাতেই পরিবারের খোঁজ মেলে। তবে ততক্ষণে গভীর রাত হয়ে গিয়েছিল। গ্রামেরই এক বাড়িতে মহিলার থাকার ব্যবস্থা হয়। পরের দিন ভোরে মহিলার ছেলে, স্বামী ও পরিবারের অন্যরা এসে তাঁকে নিয়ে যান। মহিলার ছেলে জাহির শেখ জানান, তাঁর মায়ের নাম নুরসুনা বিবি। তাঁর ভুলে যাওয়ার রোগ রয়েছে। মাস খানেক আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি।
আরও পড়ুন- Yusuf Pathan: জমি দখলের অভিযোগ, গুজরাত হাইকোর্টের দ্বারস্থ ইউসুফ পাঠান
অনেক খোঁজাখুঁজি করে, থানায় অভিযোগ করেও সন্ধান মেলেনি। মাকে ফিরেয়ে দেওয়ার জন্য ওই এলাকার মানুষকে ধন্যবাদ জানান জাহির। এদিকে বিপুল বলেন, “একটা কাজ সেরে ফিরছিলাম। জটলা দেখে এগিয়ে যাই। মহিলাকে দেখে মনে হয়নি ওর খারাপ কোনও উদ্দেশ্য আছে। কথা বলার চেষ্টা করি। কথা বলেই বুঝতে পারি ওর মানসিক সমস্যা রয়েছে। গ্রামের মানুষকে বুঝিয়ে শুশ্রুষার ব্যবস্থা করি। দ্রুত পরিবারের খোঁজও পাওয়া যায়।”
হ্যাম রেডিয়োর ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, “চারদিকে যা চলছে, তার জেরে অনেক নিরীহ মানুষও খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে পারেন। এই ঘটনাই তার প্রমাণ। সাধারণ মানুষকে বলব, কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার আগে দশবার ভাবুন। হঠকারি সিদ্ধান্ত নেবেন না।”