Advertisment

সুন্দরবন ছেড়ে ম্যানগ্রোভ বাসা বাঁধছে হাওড়ায়

সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য একটু একটু করে সরে আসছে দীর্ঘ ১৫০কিলোমিটার দূরে হাওড়ার বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
howrah, mangrove forest,

হাওড়ায় গঙ্গার পাড়ের ম্য়ানগ্রোভ অরন্য়। ছবি- এ বসু

ম্যানগ্রোভ অরণ্য শুনলেই সুন্দরবনের দৃশ্য ভেসে ওঠে চোখে। তবে মেনগ্রোভের আশায় এখন আর সুন্দরবন ছুটতে হবে না। ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ক্ষুদ্র সংস্করণ এখন উঠে এসেছে হাওড়ায়। উষ্ণায়নের (গ্লোবাল ওয়ার্মিং) ফলে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য একটু একটু করে সরে আসছে দীর্ঘ ১৫০কিলোমিটার দূরে হাওড়ার বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে। প্রাকৃতিক পরিবর্তনের কারণেই এই স্থানবদল বলে প্রাথমিক অনুমান উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের। বোটানিক্যাল গার্ডেন পেরিয়ে হুগলী নদীর দুই তীরে বেলুড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে সুন্দরবনের লবণাম্বু উদ্ভিদগুলি। প্রকৃতিগত ভারসাম্যের তারতম্যজনিত কারণেই এমন ঘটছে বলে চিন্তিত উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা।

Advertisment

আরও পড়ুন-  বাগডোগরা বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তনের দাবি

ভারতের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ অরণ্য বা বাদাবন পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন। ম্যানগ্রোভ এক বিশেষ ধরনের উদ্ভিদ যা লবণাক্ত জলে জন্মায়। এই উদ্ভিদের শ্বাসমূল মাটির ওপরে বেরিয়ে থাকে এবং এই শ্বাসমূলের মাথায় নিউমাটাপোর নামে শ্বাসছিদ্র থাকে। এই গাছের ফল শাখা থেকে খসে পড়ার আগেই অঙ্কুরিত হয়ে থাকে। তাই মাটিতে পড়তেই সরাসরি মূল বিস্তার করতে পারে।

তবে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূল না হওয়ার কারণে ইদানীং গঙ্গার জলে ভাসতে ভাসতে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে বোটানিক্যাল গার্ডেন সংলগ্ন গঙ্গার অববাহিকায় ঘর বাঁধছে সুন্দরবনের লবণাম্বু উদ্ভিদ। এখানে এখন দেখা মিলেছে বিরল প্রজাতির ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ ‘ওরা’র। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম সনেরাশিয়া গ্রিফিথি (Sonneratia Griffithii)। এ ছাড়াও কৃপাল, বায়েন, হাড়গোজা, সমুদ্র,পানলতার মতো গাছগুলিও প্রাকৃতিক কারণেই সরে এসে বাসা বেঁধেছে বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে। উল্লেখ্য, ২০০৬ সাল থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে ম্যানগ্রোভ সংক্রান্ত গবেষণা শুরু হয়েছে। সেই সময় ভারত ও আফ্রিকার অ্যামাজন অববাহিকার প্রায় ২০টি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের চারা রোপণ করা হয় এই বাগানের অনুকূল পরিবেশে। সঠিক প্রাকৃতিক পরিবেশ পেয়ে এখন ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে সেই গাছগুলি।

আরও পড়ুন- হাওড়ার গুদামে বিস্ফোরণ, গুরুতর আহত ভ্যানচালক

howrah, mangrove forest, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভের ক্ষুদ্র সংস্করণ এখন হাওড়ায়। ছবি- এ বসু

এই উদ্ভিদগুলির এমন সরে আসার (মাইগ্রেশন) বিষয়টিকে বিপদ সংকেত বলে মনে করছেন বোটানিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার যুগ্ম অধিকর্তা ও আচার্য জগদিশ্চন্দ্র বসু বোটানিক্যাল গার্ডেনের অধিকর্তা ডঃ মহম্মদ উমের শরিফ। তাঁর মতে, "এখন থেকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি সুন্দরবনের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে। এমনকি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে ভারতের সবচেয়ে বড় এই ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলটি। যদিও সুন্দরবন রক্ষার জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই নেওয়া হয়েছে।" তিনি আশ্বস্ত করেন, ইতিমধ্যেই সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই এই মুহুর্তে বিপদের কোন সম্ভবনা নেই। সম্ভবত সমুদ্রের জলে লবণের পরিমান বেড়ে যাওয়ার ফলেই এই বিশেষ উদ্ভিদগুলির পক্ষে বংশবিস্তার ও জীবনধারণের অনুকূল পরিবেশ আর মিলছে না সুন্দরবন এলাকায়। আর তাই অনুকূল পরিবেশের সন্ধানে সুন্দরবন থেকে সরে আসছে ম্যানগ্রোভ।

আরও পড়ুন- জয় শ্রীরাম ধ্বনি ঘিরে ‘হাতাহাতি’তে জড়াল স্কুল পড়ুয়ারা

উদ্ভিদবিজ্ঞানী ডঃ বসন্ত সিংহের বক্তব্য, "এই ধরনের বনাঞ্চল থেকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ সাহায্য পাওয়া যায়। বনাঞ্চল সাধারণত সমুদ্র ও ভূমির সংযোগস্থলে গড়ে ওঠে। এই বনভূমি থাকার ফলেই উপকুলবর্তী এলাকায় সামুদ্রিক ঝড়ের প্রভাব অনেকাংশে কম হয়। এছাড়াও বেশকিছু প্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবেও ম্যানগ্রোভ বন চিহ্নিত হয়। ম্যানগ্রোভ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য আয়ের, সুরক্ষার এবং খাদ্যের একটি নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবেও বিবেচিত হয়। এছাড়া এই লবাণাম্বু উদ্ভিদগুলি বাতাসে থাকা মাত্রাতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে বাতাসকে শোধন করে মাটির ভেতরে পাঠিয়ে দিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।" এসব কারণের জন্যই স্থানীয় নার্সারিগুলিকে লবণাম্বু উদ্ভিদ রক্ষায় এগিয়ে আসার আবেদনও জানান ডঃ বসন্ত সিংহ।

উল্লেখ্য, ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল বা লবণাম্বু উদ্ভিদের বনভূমি প্রকৃতির পাশাপাশি মানুষের জন্যেও বিশেষ প্রয়োজনীয়। তাই সুন্দরবনের বনভূমি রক্ষায় সরকারের সঙ্গে স্থানীয় মানুষকেও সাহায্য়ের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে, এমনটাই অভিমত উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের। তাঁদের মতে, স্থানীয় বাসিন্দাদের এর গুণাগুণ বোঝাতে হবে। পাশাপাশি, এই বাদাবন থাকার ফলে কীভাবে তাঁরা উপকৃত হচ্ছেন সে কথা বুঝিয়েই বাদাবন বা ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল রক্ষায় তাঁদের পাশে পেতে চাইছেন বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানীরা।

Howrah West Bengal
Advertisment