বড় কোনও উৎসব বা অনুষ্ঠান হলে ব্যাপক ভিড় হয়। ভিড় মানে ভিড়ে ভিড়াক্কার তারাপীঠ। কাতারে কাতারে ভক্তের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে পুজো দেওয়া যে কী ঝক্কি, না-গেলে লোকে বুঝবে না। সেই সুযোগটা এনে দিয়েছে অনলাইন পুজো। বেশ কয়েক বছর ধরেই অনলাইন পুজো নিয়ে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। শুধু তারাপীঠই না।
বৈষ্ণোদেবী থেকে কাশী, রাজস্থানের কোনও মন্দির থেকে পঞ্জাবের দেবালয়- টাকা দিয়ে বুকিং করলে পুজোর পর প্রসাদ বাড়িতে হাজির। সঙ্গে ফুল বা টুকটাক পুজোর প্রসাদীও পাচ্ছেন ভক্তরা। অনেকেই শরীরের জন্য, তারপর নানা কারণে পুজো দিতে যেতে পারেন না। সেই সুযোগটাই এনে দিচ্ছে এই সব অনলাইন পুজো দেওয়ার সংস্থাগুলো। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এনিয়ে চলছে ব্যাপক প্রচার।
কিন্তু, সত্যিই কি আপনার পুজো দেবতা বা দেবীর পায়ে পৌঁছচ্ছে? সত্যিই কি আপনার নাম-গোত্র দিয়ে পুজো দেওয়া হচ্ছে দেবস্থানে? কোনও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন না-তো? এনিয়ে যাঁদের মনে ধন্দ আছে, তাঁদের ধন্দ বাড়িয়ে দিলেন, বলা ভালো সতর্ক করে দিলেন তারাপীঠ মন্দিরের সেবায়েত সমিতির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায়।
তিনি বলেন, 'তারাপীঠ মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে অনলাইনে পুজো দেওয়ার কোনও ব্যবস্থাই নেই। যাঁরা অনলাইনে পুজো দেওয়ার নাম করে ভক্তদের থেকে টাকা নিচ্ছেন, তাঁদের সঙ্গে তারাপীঠ মন্দির কমিটির কোনও সম্পর্কই নেই। এই সব ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার যাঁরা চালাচ্ছেন, সেটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতভাবে চলছে।'
তারাময় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তাঁরা জানতে পেরেছেন, এভাবে অনলাইনে পুজো দেওয়ার নাম করে বহু মানুষের থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। ফুল, প্রসাদী বা মিষ্টি সেই সব ভক্তদের কাছে পাঠানো হচ্ছে বলেও তাঁরা জানতে পেরেছেন। অন্যান্য ধর্মস্থান তো আছেই, তারাপীঠের নাম করেও এভাবে অনলাইনে পুজোর নামে চলছে অর্থসংগ্রহ।
খোলাখুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চলছে। আর, এসব প্রতারণা রুখতে তাঁরা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। সাইবার সেলে অভিযোগ জানিয়েছেন। অনেকে আবার টাকা দিয়েও পুজোর প্রসাদ বা প্রসাদীর কোনও সামগ্রীই পাননি। তাঁরাও পুলিশের সাইবার সেলে জানিয়েছেন অভিযোগ।
আরও পড়ুন- ইতিহাস গড়ল দেশ, বিশ্বের বৃহত্তম যাত্রীবাহী বিমান এবার ভারতে
তারাপীঠে দুর্গাপুজোয় দেবী তারাকে দুর্গা রূপে পুজো করা হয়। লক্ষ্মীপুজোয় লক্ষ্মী রূপে পুজো করা হয়। আবার, কালীপুজোয় পুজো করা হয় দেবী কালী রূপে। প্রতারকরা এই সব বিশেষ দিনগুলোকেই আরও বেশি করে হাতিয়ার করে। কারণ, তারা জানে যে এই সব বিশেষ দিনে ভক্তের সংখ্যা উপচে পড়বে। অনেকেই মন্দিরে না-গিয়েই পুজো দিতে চাইবেন।
সম্প্রতি, কৌশিকী অমাবস্যার পুজোতেই তো তারাপীঠে অনলাইনে পুজোর জন্য অনেকের থেকে ২০ হাজার টাকা করে পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। তাই, ভক্তরা এখন থেকেই সাবধান হোন। অন্তত, তারাপীঠে অনলাইন পুজোর কোনও ব্যবস্থা নেই। মানে, গোটাটাই জালিয়াতি। এমনটাই জানাচ্ছেন মন্দির কমিটির সদস্যরা।