Advertisment

সংক্রান্তির শেষ ক'দিনই ওঁদের 'পৌষমাস', জলের কড়িই ভাঁড়ার ভরায় রেজাউল-এনামুলদের

সাগরদ্বীপের অনেকেই বছরভর কম-বেশি এই কাজ করেন।

author-image
Shashi Ghosh
New Update
Many people used magnets to collect money from the Gangasagar

দড়িতে চুম্বক বেঁধে জলে ফেলা পয়সা সংগ্রহে স্থানীয় যুবক। এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ।

সবে মাত্র ভোরের আলো ফুটছে। সাগর পাড়ে জমতে শুরু করেছে পুন্যার্থীদের ভিড়। ভিনরাজ্য থেকে আসা তীর্থযাত্রীরা একের পর এক ডুব দিচ্ছেন সাগরে। পুন্য অর্জনের আশায় জলে ডুব দিয়ে উঠেও গঙ্গা মায়ের উদ্দেশ্যে তাঁরা জলে ছুঁড়ে দিচ্ছেন খুচরো পয়সা। দূরে দাঁড়িয়ে সেটাই দেখছিল ছোট্ট এনামুল। পয়সা জলে পড়তেই এনামুল ছুটে গেল সেদিকে। চুম্বকে লেগে উঠে এল দুটো এক টাকা, একটি পাঁচ টাকার কয়েন। পয়সা পেয়ে বেশ খুশি ছোট্ট ছেলেটা। নয় বছরের ভাগ্নে এনামুলকে নিয়ে গঙ্গাসাগরের পাড়ে পয়সা কুড়োতে এসেছে রেজাউল হক। রেজাউলের বয়স সাতাশের কাছাকাছি। সাগর পাড়েই বাড়ি তাঁর। সকাল থেকে ঘুরে দু'জনের হাতে এসেছে ৭০ টাকার মতো। মকর সংক্রান্তির দিন মানুষের ভিড় ভালোই আছে। তাই পয়সা খুঁজতে বেশি সমস্যা হচ্ছে না। শুধু সঠিক দিকে নজর রাখতে হবে।

Advertisment
publive-image
গঙ্গাসাগরের জল থেকে পয়সা তুলছেন এক যুবক। এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ।

এনামুল বা রেজাউল একা নন। রয়েছেন সুরঞ্জন মাইতি, জুবেদা বিবি এছাড়াও আরও অনেকে। গঙ্গাসাগর মেলার দিন ঘনিয়ে এলেই চুম্বক নিয়ে তাঁরা নেমে পড়েন সাগরের জলে। বেঁধে দেওয়া ব্যারিকেডের মধ্যে এই প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে পয়সার জন্যে ছুটে যায় কিছু মানুষ। হাতে থাকে দড়ি দিয়ে বাঁধা লোহার একটি চৌকো নিরেট জিনিস। পাড়ের কাছাকাছি এলেই সেই লোহার জিনিস ওঁরা ছুঁড়ে ফেলেন সাগরে। কিছু মিললে মুখে হাসি ফোটে আর তা না হলে বেজার মুখে এগিয়ে যায় সামনের দিকে।

publive-image
দড়িতে চুম্বক বেঁধে এভাবেই পয়সা তুলতে দেখা যায় মহিলাদেরও। এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ।

সাগরপাড়ের বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা মাছ ধরা। শেষ ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে অনেকে বাড়ি-ঘর হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন। সারা বছর রোজগার এখানে তেমন কিছু হয় না বললেই চলে। প্রতি বছর গঙ্গাসাগর মেলা বসলে সাগরপাড়ের মানুষের অল্প বিস্তর রোজগার হয়। চুম্বক দিয়ে যারা সারা দিন সাগরের জলে ঘোরেন, মেলার তিন দিন তাঁদের রোজগার হয় ৭০০-৮০০ টাকার মতো। এমনই জানালেন স্থানীয় বাসিন্দা লিলিমা রায়। গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গণ থেকে খানিকটা দূরেই তাঁর বাড়ি ছিল। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে তাঁর বাড়ি ভেঙে গিয়েছিল। তারপর থেকে কোনও বাড়ি-ঘর আর নেই। ছোট ঝুপড়িতেই স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকেন ওই মহিলা।

আরও পড়ুন- এক বাইকে ১০ সওয়ারি, সাড়া জাগানো আবিষ্কার, বাংলার যুবকের দারুণ কীর্তি জোর চর্চায়!

প্রতি বছর পাড় ভেঙে সমুদ্র এগিয়ে আসছে। জলের তলায় চলে যাচ্ছে একের পর এক বাড়ি। ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই সাগরদ্বীপ। এলাকারই বাসিন্দা অফুরান বিবি। তিনি বললেন, "অনেকে এলাকা ছেড়ে বাইরে চলে যাচ্ছেন, আমাদের মতো যাঁরা গরিব শুধু তাঁদেরই যাওয়ার কোনও জায়গা নেই। বছরের তিনটে দিন মকর সংক্রান্তির আগে সমুদ্র থেকে চুম্বক দিয়ে পয়সা তুলি। বাকি সময় দিন মজুরি করি। তাও এখনো একশো দিনের কাজের টাকা পাচ্ছি না।"

publive-image
শুধু বড়রাই নয়। একাজে সামিল হয় এলাকার অল্পবয়সীরাও। এক্সপ্রেস ফটো: শশী ঘোষ।

বছর তিন চারেক আগেও সমুদ্র থেকে চুম্বক দিয়ে পয়সা তোলার এত লোকজন ছিল না। করোনার পর থেকে গত দু'বছর সাগর থেকে এই পয়সা তোলার কাজ শুরু হয়েছে। সারা বছরই কপিল মুনির আশ্রমে ভক্তদের আনাগোনা লেগে থাকে। সাগরপাড়ে ভক্তরা এলেই পয়সা ছুঁড়ে দেন। তবে তাতে বিশেষ কোনও লাভ হয় না। পয়সা তুলতে লাগে বিশেষ এক ধরনের চুম্বক যা ওঁরা কিনে আনেন কলকাতার বড়বাজার থেকে। খরচ হয় প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টাকা। সাগরদ্বীপের বেশিরভাগ গরিব মানুষের বাড়িতেই রয়েছে ১০-১২টি চুম্বক। কারণ ওটাই ওঁদের সম্পদ। মাছ ধরার পাশাপাশি ওরা সমুদ্র থেকে তুলে আনেন পয়সা।

West Bengal South 24 Pgs Gangasagar Mela
Advertisment