Tea Garden: সাতসকালে চাই এককাপ চা, তা নাহলে দিন যেন শুরু হতেই চায় না। চায়ের কাপে তুফান তুলে চলে বাঙালির আড্ডা। চা ও বাঙালি অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত। তবে চা শ্রমিকদের হাল দিনের পর দিন কী অবস্থা হচ্ছে তার খবর কে রাখে? নির্বাচন এলে যথারীতি প্রতিশ্রতির বন্যা, ভোট পার হলেই ভোঁ ভাঁ। আলিপুরদুয়ারের কালচিনি ব্লকের রায়মাটাঙ ও কালচিনি দুই চা-বাগানের শ্রমিকরা কেমন আছেন? তাঁদের খোঁজ নিতে হাজির হয়েছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।
দার্জিলিং (Darjeeling) ও ডুয়ার্সে (Dooars) বহু চা বাগানের কারখানার সামনে আর সেই শ্রমিকদের ভিড়ের জটলা নেই। আশেপাশে চায়ের দোকান নেই। নেই সাইরেনের আওয়াজ, এমনকী নিয়মিত চা তোলার দৃশ্যও উধাও। কোথাও কোথাও সবুজ পাতার চা-বাগান কালো হয়ে গিয়েছে। ভোট মরশুমের ডুয়ার্সের কালচিনির রায়মাটাঙ চা কারখানার শ্রমিকরা শোনালেন জীবন যন্ত্রণার কাহিনী।
১৯৮৫ সালে যাত্রা শুরু করে রায়মাটাঙ চা বাগান (Raimatang Tea Estate)। একসময় এই চা বাগানের রমরমা কারবার ছিল। এরপর যে কতবার বন্ধ হয়েছে এই চা কারখানা তার ইয়াত্তা নেই। ২০০ একরের ওপর চা বাগান। হাইকোর্ট অবধি গড়িয়েছে মামলা। শ্রমিক প্রদীপ রাউত বলেন, "২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত পুরোপুরি বন্ধ ছিল এই চা বাগান। ২০১০ সালে চালু হয়ে আবার বন্ধ হয়। আমরা শুধু চাই চা বাগান পুরোপুরি খুলে যাক। ১২০০ শ্রমিক এই চা বাগানে কাজ করত। এখন যা অবস্থা অন্য কাজ না করলে খাবার জুটবে না। শরীর অসুস্থ হলে তো ওষুধও জোটে না। পিএফ, গ্র্যাচুইটি পাইনি।"
তাঁর কথায়, "সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কাজের তাগিদে এখানকার প্রায় সাড়ে তিন-চারশো শ্রমিক ভিন রাজ্যে চলে গিয়েছেন। কারখানা বন্ধ থাকলেও জিআর পাই না। ভাল মালিক এলে বাগান চালাতে পারে। সরকার ইচ্ছা করলেই পারে।" কোটি কোটি টাকা প্রফিডেন্ট ফান্ডে জমা পড়েনি বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।
রায়মাটাঙ চা বাগানে কাজ করতেন সজনা ছেত্রী। তাঁর বাবাও এই বাগানের শ্রমিক ছিলেন। এখন বাগান ছেড়ে টোটো চালাচ্ছেন তিনি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে সজনা ছেত্রী বলেন, "সংসারে সকলের খাবার জোটাতে হবে তো। তাই এখন টোটো চালাই। এই বাগানে কখনও কাজ হলে দিন প্রতি ২০০ টাকা মেলে। তাতে কোনও সংসার চলতে পারে? কার্যত বন্ধ এই বাগানের পাতার রং পর্যন্ত কালো হয়ে যাচ্ছে। কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। ভাল মালিক এসে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে কাগজপত্র তৈরি করে কাজ হবে বলে আশা করছি। এখানে শ্রমিকদের পিএফের টাকার কোনও খোঁজ নেই। বড় দুর্নীতি হয়েছে।"
অন্যদের মতো সজনার ভাইও বাইরের রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছেন। সজনা ছেত্রী বলেন, "আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। প্রতিবার নির্বাচন এলে মনে হয় কিছু হবে। তারপর আবার ভোট চলে যায়। রায়মাটাঙের হাল খুব খারাপ। আমরা চাই কোম্পানি ভাল করে চলুক। নির্বাচন এলে বাগান খোলার আশ্বাস দেয় রাজনৈতিক দলগুলি। টোটো চালাতে কি ইচ্ছা করে? বাগানে কাজ করতে চাই। ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাগানে ছিলাম। এমএ, বিএ পাশরা চা পাতা তোলার কাজ করছে। সৎ মানুষের টেকা দায়। আমরা খুব অসুবিধায় আছি।"
রায়মাটাঙ থেকে এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্য কালচিনি চা বাগান (Kalchini Tea Garden)। কর্মীদের মতে এই কারখানাও বন্ধই বলা চলে। কারখানার উল্টোদিকেই শ্রমিকদের আবাসন। সেখানে যেতেই দেখা হল উমর সাপ্পোতার সঙ্গে। তিনি বলেন, "বাগানের পরিস্থিতি খুব খারাপ। ২০০ টাকা হাজিরায় কি সংসার চলে? কোনওরকমে সংসার চলছে। পিএফ, গ্রাচুইটি জমা হয়েছে কিনা ভগবান জানে! এখানকার বহু শ্রমিক চেন্নাই, মুম্বাই, পুনে-সহ নানা জায়গায় চলে যাচ্ছে কাজের সন্ধানে। আমার দুই ছেলেও বাইরে চলে গিয়েছে কাজ করতে।" শিবাশিস বলেন, "প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পুরোপুরি পাইনি। অর্ধেক পেয়েছি। গ্র্যাচুইটি পাইনি। কার কাছে যাব? ছোটখাটো শিল্পপতি কারখানা চালাচ্ছে। অসুবিধা তো হবেই শ্রমিকদের। বাগান ছেড়ে শ্রমিকরা কাজ করতে বাইরে চলে যাচ্ছে।"