Advertisment

Exclusive: মিগজাউমের গ্রাস, একমাত্র সম্বল ছেলের নিখোঁজে হতভম্ব বাঁকুড়ার অসহায় দম্পতির করুণ দশা

'সোনামুখী থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করতে গিয়েছিলাম। থানা নেয়নি বলেছে চেন্নাইয়ের মিশিং ডায়েরি লাগবে। ওটা এখনও পাইনি। কি যে করবো কিছুই বুজতে পারছি না।'

author-image
Joyprakash Das
New Update
migjaum migrant labour bankura missing elderly parent having hard day , মিগজাউমের গ্রাস, একমাত্র ভরসা ছেলের নিখোঁজে হতভম্ব বাংলার বৃদ্ধ দম্পতির করুন অবস্থা

নিখোঁজ দীপক বাগদী (বাঁদিকে), বৃদ্ধ বাগদী দম্পতি (ডানদিকে)।

'পাঁচ দিন আগে এজেন্ট ফোন করে ছেলের নিখোঁজের খবর দিয়েছিল। শুনেই হতভম্ব হয়ে পড়ি। সেই থেকে নাওয়া, খাওয়া বন্ধ। স্ত্রী ও আমার রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে।' কথা বলতে গিয়ে বাঁকুড়ার সোনামুখী থানার শিরোমনিপুর গ্রামের বাসিন্দা শ্রীধর বাগদীর (৫৫) গলা যেন ধরে এসেছে। ৬ দিন হয়ে গেলেও কোনও খবর আসেনি তামিলনাড়ুর চেন্নাই থেকে। তাঁর ২১ বছরের ছেলে দীপক বাগদী সেখানে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করছিল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মিগজায়ুমের পর থেকেই চেন্নাইয়ের ভেলাচারিতে থাকা দীপকের সঙ্গে বাবা-মায়ের কোনও যোগাযোগ নেই।

Advertisment

বাঁকুড়ার সোনামুখি থানার শিরোমনিপুর গ্রামের শ্রীধর বাগদী (৫৫) ও ভারতী বাগদীর (৪৮) ছোট ছেলে দীপক। তাঁদের বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে দীপক এই নিয়ে চারবার চেন্নাইতে গিয়েছে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করতে। পাশের ধোলাই গ্রামের শ্যামল ঘোষ চেন্নাইতে শ্রমিক সরবরাহের কাজ করে। শ্যামল তাঁকে চেন্নাইতে নিয়ে যায়। শ্যামল ঘোষও জানাতে পারছেন না দীপকের আদৌ কি হয়েছে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ই দীপক নিখোঁজ হয়েছে সে কথা চেন্নাই থেকে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে জানালেন শ্যামল ঘোষ।

দীপকের বাবা বছর ৫৫-র শ্রীধর বাগদী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'গত সোমবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ শ্যামল ঘোষ ফোন করেছিল। গিন্নি ফোন ধরেছিল। বলেছিল, তেমাকে বলা যাবে না। কাকুকে ফোনটা দাও। ছেলের নিখোঁজের কথা বলেই ফোনটা কেটে দেয়। আমি হতভম্ব হয়ে যাই। তারপর থেকে ফোন করলেই শ্যামল বলছে দেখছি দেখছি। সোনামুখী থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করতে গিয়েছিলাম। থানা নেয়নি বলেছে চেন্নাইয়ের মিশিং ডায়েরি লাগবে। ওটা এখনও পাইনি। কি যে করবো কিছুই বুজতে পারছি না।' সেই থেকে ঘুম নেই শ্রীধর বাগদীর পরিবারের।

'ছেলের মোবাইলে ফোন করলে বলছে সুইচড অফ।' বলছেন শ্রীধর বাগদী। তিনি বলেন, 'কার্তিক মাসেই ছেলে গিয়েছিল চেন্নাই। ধোলাইয়ের লেবার এজেন্ট শ্যামল ঘোষ নিয়ে গিয়েছিল। চারবার গেল। তবে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে ছেলের নাম নথিভুক্ত করা হয়নি। একমাত্র ছেলেই আমাদের বেঁচে থাকার সম্বল।' দীপকের পরিবারের মতোই শিরোমনি গ্রামের বাসিন্দারাও উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছে। প্রতিবেশী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় শ্রীধর বাগদীর পরিবারের পাশে রয়েছেন। দীপকের নিখোঁজের খবরে তিনিও চিন্তাগ্রস্ত। শ্রীধরবাবুর সঙ্গে থানাতেও গিয়েছেন। খবর দিয়েছেন বিডিও অফিসের এক করনিককেও।

শ্যামল ঘোষের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়েছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার পক্ষ থেকে। শ্যামল ঘোষ বলেন, 'সোমবার সকাল ১০টায় সাইট সুপারভাইজার আমাকে জানায়, দীপককে পাওয়া যাচ্ছে না। যেখান থেকে দীপক নিখোঁজ হয়েছে সেখানে তখন ভূমিধস হয়েছিল। তখনই ওর সহকর্মী রাহুল বাগদীর সঙ্গে রযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দীপকের। তারপর থেকে কোন খোঁজ নেই। সম্ভবত ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাতের দিকে। সাইট থেকে বাড়ি ফিরছিল। আমি ছিলাম ধোলাইতে নিজের বাড়িতে। দীপকের নিখোঁজের খবর শুনেই আমি চেন্নাই ছুটে এসেছি।' তবে নিখোঁজ ডায়েরি নিয়ে স্পষ্ট কিছু জানাতে পারেননি শ্যামল ঘোষ।

সোনামুখীর বিধায়ক দিবাকর ঘরামী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, 'আমি একটু দেরিতে দীপক বাগদীর চেন্নাইতে নিখোঁজ হওয়ার খবর পেয়েছি। আজ আমি শিরোমনিপুর গ্রামে দীপকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে যাব। বিস্তারিত জেনে দীপককে খোঁজার জন্য যা যা করার করব। শুনেছি ওদের পরিবার থানায় গিয়েছিল। সেখানে কি কথা হয়েছে জেনে পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গেও দীপকের বিষয়ে কথা বলব।'

সোনামুখীর বিডিও প্রিয়াঙ্কা হাটি বলেন, 'আমরা বিষয়টা জেনেছি। দীপক বাগদীর এখনও খোঁজ মেলেনি। কোন ঠিকাদার সংস্থায় কাজ করতে গিয়েছিল সেই খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। এখান থেকে যাওয়া একজনকে ফোন করা হয়েছিল তেমন কিছু জানা যায়নি। আর কে কে ওর সঙ্গে ছিল সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি রাজ্য কন্ট্রোল রুমেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।'

Chennai West Bengal Bankura
Advertisment