এবার রাজ্যের এক মন্ত্রীর বাড়িতে বেপরোয়া ভাঙচুর চালাল ক্ষুব্ধ জনতা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার তুলকালাম পরিস্থিতি তৈরি হয়। মন্ত্রীর বাড়ির কেয়ারটেকরের বিরুদ্ধে স্থানীয় এক যুবককে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনাতেই অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন জনতা। শতাধিক মানুষ জড়ো হয়ে চড়াও হন মন্ত্রীর বাড়িতে। বাড়ির গেট, জানলা, দরজা, ফুলের টবল ভেঙে তছনছ করে দেয় জনতা।
রাজ্যের কোন মন্ত্রীর বাড়িতে ভাঙচুর?
রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের বাড়িতে মঙ্গলবার ভাঙচুর চালায় একদল ক্ষুব্ধ জনতা। মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের পূর্ব বর্ধমানের রায়নার কামারহাটির বাড়িতে চলে ভাঙচুর। এই ঘটনার খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী পৌঁছে যায় ঘটনাস্থলে। তাঁরাই এলাকার উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সামাল দেয়। তবে এই ঘটনার পিছনে বিরোধীদের উস্কানি থাকতে পারে বলেও সন্দেহ পঞ্চায়েত মন্ত্রীর।
কেন এই ভাঙচুর? গন্ডগোলের সূত্রপাত কোথা থেকে?
মন্ত্রীর পুকুর থেকে মাছ ধরা নিয়ে তৈরি হয়েছিল অশান্তি। এলাকারই এক যুবককে মারধরের অভিযোগ মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের বাড়ির কেয়ারটেকারের বিরুদ্ধে। তারই জেরে লাঠিসোঁটা নিয়ে রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রীর বাড়িতে চড়াও হয় এলাকারই একদল বাসিন্দা। মঙ্গলবার বিকেলে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের রায়নার কামারহাটি গ্রামে। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ঘটনার কথা জেনে বিস্মিত পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারও। তাঁর আশঙ্কা, এই ঘটনার পিছনে বিরোধীদের উস্কানি থাকতে পারে!
উল্লেখ্য, রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের পৈতৃক বাড়ি রয়েছে রায়না ২ নম্বর ব্লকের গোতান গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কামারহাটি গ্রামে। শুধু বসতবাড়ি নয়, ওই গ্রামেই রয়েছে মন্ত্রীর পরিবারের একাধিক পুকুর ও জমি। মন্ত্রিত্ব সামলে মাঝে মধ্যে কলকাতার বাড়ি থেকে পৈতৃক বাড়িতে যাওয়া-আসা করেন প্রদীপ মজুমদার। তাঁরই বাড়িতে লাঠিসোঁটা নিয়ে স্থানীয়রা চড়াও হয় এদিন। এলাকাবাসী লাঠি দিয়ে মন্ত্রীর বাড়ির সদর গেট ভাঙে। শুধু তাই নয়, মন্ত্রীর বাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেলও ছোড়া হয়েছে।
মন্ত্রীর বাড়ির গেটে লাথি মারছে এক যুবক।
তির-ধনুক নিয়ে মন্ত্রীর বাড়ির সামনে লোহার গেট থেকে শুরু করে বাড়ির ভিতরে জানলা, দরজার কাচ, চেয়ার, টেবিলে ভাঙচুর করা হয়। তছনছ করে দেওয়া হয়েছে ফুলের গাছ। কার্যত এদিন তাণ্ডব চালানো হয় মন্ত্রীর বাড়িতে। মাছ-চাষিদের তিনজনের বাড়িও ভাঙচুর হয়। এলাকারই বাসিন্দা মহেন্দ্র হেমব্রম নামে এক যুবককে মন্ত্রীর বাড়ির কেয়ারটেকার সাবির হাজারী ও তাঁর দলবল নির্মমভাবে মারধর করে বলে অভিযোগ। সেই ঘটনার বিহিত চাইতে গেলে ক্ষুব্ধ মানুষজন এদিন মন্ত্রীর বাড়ির সামনে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের পৈতৃক বাড়ির পুকুর থকে মাছ ধরা নিয়ে অশান্তি ছড়ায়। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকার যুবক মহেন্দ্রকে মন্ত্রীর বাড়ির মধ্যে তুলে নিয়ে নিয়ে গিয়ে তাঁকে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করা হয়েছিল সোমবার। এতেই ছড়ায় উত্তেজনা। খবর পেয়েই মাধবডিহি থানার পুলিশ গিয়ে তখনকার মতো পরিস্থিতি সামাল দেয়। তবে মারধরের ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ স্তিমিত হয়নি। মঙ্গলবার বিকেলে এলাকার বাসিন্দাদের ক্ষোভ ফের আছড়ে পড়ে পঞ্চায়েত মন্ত্রীর পৈতৃক বাড়িতে।
এ নিয়ে পঞ্চায়েত মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, "আমরা তো ওই বাড়িতে সবসময় থাকি না। মাঝে মধ্যে যাই। সাংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের কাছ থেকে এদিন জানতে পারি পুকুর থেকে মাছ ধরা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল। আমি জানিয়ে রাখি আমাদের পারিবারিক তিনটি পুকুর রয়েছে। গ্রামেরই কিছু ছেলে আমাদের পারিবারিক পুকুর গুলিতে নিজেরা টাকা খরচ করে মাছ চাষ করে । ওরাই পুকুর দেখভালও করে। শুনেছি ওই পুকুর থেকে কেউ মাছ চুরি করছিল। যাঁরা মাছ চাষ করে তাঁরা প্রতিবাদ করেছে। এর সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক আছে?"
আরও পড়ুন- ময়দানে আরও এক কেন্দ্রীয় সংস্থা! রাজ্যেরই প্রভাবশালী মন্ত্রী ও তাঁর ছেলেকে নোটিশ
মন্ত্রীর বাড়ির গেট ধরে টানাটানি।
মাছ ধরা নিয়ে তৈরি হওয়া অশান্তিতে আপনার পৈতৃক বাড়িতে চড়াও হওয়ার কী কারণ থাকতে পারে ? এর উত্তরে প্রদীপ মজুমদার বলেন, "কামারহাটি গ্রামে সবসময় সব নির্বাচনে আমার দল (তৃণমূল কংগ্রেস ) জেতে। আমার পূর্ব পুরুষরাও ওই গ্রামে অনেক উন্নয়নের কাজ ও সামাজিক কাজ করেছেন। আমাদের সরকারও অনেক উন্নয়ন কাজ করেছে। সেই সবের রাগ হয়তো আমার বাড়িতে প্রতিফলিত হয়ে থাকতে পারে। এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এমনটা না হওয়াই কাম্য ছিল। গোটা ঘটনার পিছনে বিরোধীদের উস্কানি থাকতে পারে।" এই ঘটনা নিয়ে জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ বলেন,
“এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। তবে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। আমরা মামলা করব।"
আরও পড়ুন- তৃণমূলের ধরনা মঞ্চের সামনে অনুপম, কেন? তুঙ্গে গুঞ্জন!
তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সিপিএম ও বিজেপির উস্কানিতেই মন্ত্রীর ফাঁকা বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।" রায়না ২ নং ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি সৈয়দ কলিমুদ্দিন (বাপ্পা) বলেন, “রাজনৈতিক লাভের জন্য ছোট একটা ঘটনাকে বড় ঘটনা করে তুলল বিরোধীরা।" যদিও সিপিএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মির্জা আখতার আলি বলেন, “এটা সাধারণ মানুষের অধিকারের প্রশ্ন। তাই গ্রামবাসীরা নির্মমতার বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছেন। আমরা অন্যায়কে তো আর ন্যায় বলতে পারি না।" বিজেপির জেলা সম্পাদক (কাটোয়া) মানিক রায় বলেন, “তৃণমূলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষ ফুঁসছে।"