ক্ষমতায় আসার পরই রাজ্যে মৌলবী ও মোয়াজ্জেমদের মাসিক ভাতা চালু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এবার চালু হতে চলেছে পুরোহিতদের সাম্মানিক ভাতাও। শুক্রবার রানি রাসমনি রোডের এক সভায় পুরোহিতদের মাসিক ভাতা আদায় করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেন রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সভা মঞ্চ থেকে এদিন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমি এখান থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাব। আপনাদের যাতে মাসিক ভাতা প্রদান করা যায় তার ব্যবস্থা করব।" পুরোহিতদের মাসিক ভাতা প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, "এভাবে ঘুষ দিয়ে খুশি করা যায় না। সামগ্রিক উন্নয়ন হলে সবাই খুশি হয়।"
শুক্রবার ৯ দফা দাবি-দাওয়া নিয়ে কলকাতায় সভা করে করে 'পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সনাতন ব্রাহ্মণ ট্রাস্ট'। সেই সভায় সংগঠনের সম্পাদক শ্রীধর মিশ্র বলেন, "যারা আমাদের জন্য ভাববে, আমরা তাদের সঙ্গে থাকব।" বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি থেকে সংস্কৃত চালু, জেলায় জেলায় সংস্কৃত কলেজ নির্মাণ, প্রবীণ পুরোহিতদের মাসিক ভাতা চালু-সহ মোট ৯ দফা দাবি নিয়ে এদিন সোচ্চার হয়েছে এই সংগঠন। উল্লেখ্য, এ রাজ্যে অতীতে মৌলবি ও মোয়াজ্জেমদের ভাতা দেওয়া নিয়ে বহু বিতর্ক হয়েছে। হাইকোর্টে এ বিষয়ে মামলা-মোকদ্দমাও হয়েছে। এরপরও সম্প্রতি কলকাতা পুরসভা শ্মশানের পুরোহিতদের সাম্মানিক ভাতার কথা ঘোষণা করেছে। আর এবার ভাতা দাবি করে রাজ্যের মন্ত্রীর থেকে আশ্বস্ত হলেন পুরোহিতরা।
আরও পড়ুন: বৈশাখীর ‘চাকরি খেলেন’ মমতা! শোভনের পাশে বসে কাঁদতে কাঁদতে ইস্তফা ঘোষণা
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন তাঁর বক্তব্যে বারবার বোঝাতে চেয়েছেন যে তিনি এই সংগঠনেরই একজন। তিনি বলেন, "অন্য সম্প্রদায়ের মানুষ যাঁরা ভাতা পাচ্ছেন, তাতে দুঃখ নেই। আমি মঞ্চে দায়িত্ব নিয়ে বলে যাচ্ছি, আমার দায়িত্ব থাকবে এই ব্রাহ্মণ পুরোহিতদেরও যেন সাম্মানিক দেওয়া যায়। এর জন্য যা যা করা দরকার আমি নিশ্চিতভাবে তাই করব। আমি এখান থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে মাসিক ভাতা প্রদান করা যায় তার ব্যবস্থা করব।"
এই সভায় রাজ্যের মন্ত্রী শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি, বরং এই সংগঠনকে রাজ্যের সর্বত্র বিস্তারের জন্য আবেদনও জানিয়েছেন। তিনি বলেন, "অন্যরা সংগঠিত কিন্তু হিন্দু ব্রাহ্মণরা সংগঠিত নয়। একত্র হতে হবে, এক ছাতার তলায় আসতে হবে। পাশাপাশি, রাজনীতির জন্য যারা ধর্ম ব্য়বহার করে তাঁদের থেকে সাবধান থাকতে হবে।"
আরও পড়ুন: মুকুলকে ফের টেক্কা, বনগাঁ পুরসভাও ‘পুনরুদ্ধার’ করল মমতা বাহিনী
এদিকে, রাজ্য বিজেপি ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের এই ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিকে ঘুষ বলেই অভিহিত করেছে। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এদিন বলেন, "এই ধরনের ঘুষ দিয়ে কাউকে খুশি রাখা যায় না। ক্লাবগুলোকে কোটি কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত উন্নয়ন করলে মানুষ খুশি থাকে। ঘুষ দিয়ে কেনা-কাটা করে খুশি করার চেষ্টা করলে কোনও লাভ হয় না। নরেন্দ্র মোদীর রাস্তাই ঠিক, সব কা সাথ সব কা বিকাশ।"
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন, "আমরা রামের পুজো করি। কিন্তু যাঁরা রাজনীতির স্বার্থে শ্রীরামকে পার্টির এজেন্টে পরিণত করে, এই মঞ্চ থেকে তাদের ধিক্কার জানাই।" এই প্রসঙ্গে দিলীপের পাল্টা মন্তব্য, "ওরা কি রাবনের সঙ্গে যেতে চাইছেন? যুগ যুগ ধরে মানুষ রামের সঙ্গে আছে। যাই বলুক, ওরা কি জয় শ্রীরাম আটকে রাখতে পেরেছেন? রামের সঙ্গেই লোকে যাবেন রাবনের সঙ্গে থাকবেন না।" এখানেই না থেমে দিলীপ আরও বলেন, "অনুব্রত মণ্ডল, পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকারী পরিবার ব্রাহ্মণদের নিয়ে সংগঠন করেছিল, তাঁরা কিন্তু আমাদের সঙ্গে চলে এসেছেন।"
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যে তৃণমূল-বিজেপি হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হয়েছে। এবার ২০২১ -এ রাজ্যে ক্ষমতা দখলের লড়াই। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, ২০২১ সালের বিধানসভার নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের সংগঠিত করতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এভাবে পাল্টা চাপে ফেলতে চাইছে বিজেপিকে। একইসঙ্গে রাজনীতিতে ধর্মীয় মেরুকরণ এ রাজ্যে আরও বাড়বে বলেই ধারনা রাজনৈতিক মহলের।