রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআইয়ের তৎপরতা নিয়ে এবার বিধানসভায় সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সির অতি সক্রিয়তা নিয়ে বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাব পাশের আগে কেন্দ্রকে ঝাঁঝালো আক্রমণ মমতার। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বদলে নাম না করে নিশানা করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। তিনি মনে করেন, সিবিআই-ইডির অপব্যবহারের পিছনে মোদীর হাত নেই।
এদিন বিধানসভায় মমতা বলেন, "আমি মনে করি না প্রধানমন্ত্রী এসব করছেন। সিবিআই এবং ইডি তাঁর অধীনে নেই। এগুলো সব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে। সব করছে কিছু বিজেপি নেতা।" পরোক্ষে এদিন মোদীর প্রশংসা করে শাহ-শুভেন্দুকে নিশানা করেছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, এই সব এজেন্সির জন্য শিল্পপতিরা ভয়ে বিনিয়োগ করবেন না। বিজেপির বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী মনোভাবের তোপ দেগেছেন মমতা।
মমতা বলেছেন, "ব্যবসায়ীরা দেশ ছে়ড়ে পালাচ্ছেন। তাঁরা পালাচ্ছেন কারণ ইডি-সিবিআইকে যেভাবে অপব্যবহার করা হচ্ছে তার জন্য। আমি মনে করি না মোদী এর পিছনে রয়েছেন।" এর পরই বিধানসভায় বিজেপি নেতাদের আক্রমণ করে তিনি বলেন, "ওঁরা স্বৈরাচারীর থেকেও খারাপ। হিটলার, স্টালিন, মুসোলিনির থেকেও ভয়ঙ্কর। যদি এজেন্সি বিজেপি নেতাদের ঘরে হানা দেয়, তাহলে টাকার পাহাড় পাবে।"
আরও পড়ুন ‘তোদের মতো চোর আমরা নই রে!’, বিধানসভায় মমতার তুই-তোকারি শুভেন্দুকে, ‘ডোন্ট টাচ মি’ খোঁচা
তিনি আরও বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর উচিত কেন্দ্রীয় এজেন্সির এই অতি সক্রিয়তার বিষয়ে নজর দেওয়া। প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্ম এবং তার স্বার্থের সঙ্গে দলকে গুলিয়ে দিলে চলবে না। সেটা তাঁকে নিশ্চিত করতে হবে।" এর পরই শুভেন্দুকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন মমতা। শুধু আক্রমণ? শুভেন্দুকে উদ্দেশ্য করে তুই-তোকারি করেন মমতা। বলেন, “তোদের মতো চোর আমরা নই রে!”
এদিন শুভেন্দুকে ডোন্ট টাচ মাই বডি মন্তব্য নিয়েও খোঁচা দেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভায় কেন্দ্রীয় এজেন্সি নিয়ে বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “চোরেদের গ্রেফতার করো আপত্তি নেই। কিন্তু সব চোরের বিরুদ্ধে যেন নিয়ম এক থাকে। তুমি বিজেপি করো বলে তোমাকে কিছু করবে না, এটা চলবে না।” সেই সময় বিরোধীদের বেঞ্চে বসে থাকা শুভেন্দু অধিকারী খোঁচা দেন, “তৃণমূলে সবাই চোর। খাটের তলা থেকে টাকা বেরোবে।”
তখন শুভেন্দুর কথা শুনেই মেজাজ হারান মমতা। বলেন, “আমি চ্যালেঞ্জ করছি এটা যদি প্রমাণ করতে পারিস। তোদের মতো চোর আমরা নই রে! এর পর না থেমে মমতা আরও আক্রমণের ধার বাড়িয়ে বলেন, স্বচ্ছবাবু, হীরের মতো জ্বলন্ত হীরে, আপনার কত ট্রলার আছে, কত বেনামী, কত নামী, কটা পেট্রল পাম্প? ডোন্ট টাচ মি, ডোন্ট টাচ মাই বডি! সিবিআই আপনাকে টাচ করতে পারবে না! ইডি আপনাকে টাচ করতে পারবে না। সময় দিন না ২৪ ঘণ্টা। ইডি-সিবিআই থাক। আমরা শুধু সঙ্গে থাকব। দেখিয়ে দেব কোথা থেকে কী বেরোচ্ছে!”
আরও পড়ুন ‘অপা’-র ১০৩ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, ৫৮ দিনের মাথায় ১৭২ পাতার চার্জশিট ইডি-র
এদিন বিধানসভায় তুমুল বাগবিতণ্ডার পর পেশ হয় নিন্দা প্রস্তাব। তাতে দেখা যায় পক্ষে ভোট পড়েছে ১৮৯টি এবং বিপক্ষে ৬৪টি ভোট পড়ে। পাশ হয়ে যায় নিন্দা প্রস্তাব। বিজেপির ৭০ জন বিধায়কের মধ্যে ভোট পড়ে ৬৪টি। পড়ে শুভেন্দু সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, “এই প্রস্তাব তদন্তে কোনও প্রভাব ফেলবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এজেন্সির লড়াই চলবে। মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন। এর থেকে লজ্জার আর কিছু নেই।”